বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫৩:০২

বরিশালে দু’দলেই শঙ্কা, বড় ফ্যাক্টর চরমোনাই পীরের সমর্থন

বরিশালে দু’দলেই শঙ্কা, বড় ফ্যাক্টর চরমোনাই পীরের সমর্থন

জিয়া শাহীন, বরিশাল থেকে : দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন বরিশাল-৫। বরিশাল সদর নিয়ে এ আসন। পুরো বিভাগের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে এ আসনটি। বিভাগীয় শহরের এ আসনে তাই বড় দু’দলই থাকে সতর্ক। যদিও ভোটারের সংখ্যাতত্ত্ব্বে এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

২০১৪ সালে বিএনপি জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জন করলে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের কবজায়। তাই এবার বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ এ আসন পুনরুদ্ধার আর আওয়ামী লীগ ধরে রাখার লড়াইয়ে নামছে। দু’দলেই মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়ে গেছে ঠাণ্ডা লড়াই।

তবে এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে থাকা একাধিক মামলা। যার পুরো ফায়দা যেতে পারে আওয়ামী লীগের ঘরে। অপর দিকে বরাবরের মতো হিরণপন্থি-হাসানাতপন্থিদের কোন্দলে আওয়ামী লীগের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে এ আসনটি।

১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে প্রথমে সংসদ সদস্য ও পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বিএনপির আবদুর রহমান বিশ্বাস। পরে তার আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন তার পুত্র এহতেসামুল হক নাসিম বিশ্বাস। ৭ম জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মাহাবুবউদ্দিন বীর বিক্রমকে পরাজিত করেন। তিন তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছিলেন।  

নাসিম বিশ্বাসের অকাল মৃত্যুতে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হলেও এ আসনে জয়লাভ করে বিএনপিই। মজিবর রহমান সরোয়ার তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কর্নেল জাহিদ ফারুক শামিমকে ৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।

তবে এ আসনে ধীরে ধীরে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় চরমোনাই পীর সাহেবের ইসলামী আন্দোলন। সরোয়ার ৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতলেও ইসলামী আন্দোলন পেয়েছিল ২৭ হাজার ভোট। আর এ কারণে এবার বিএনপি আওয়ামী লীগ সবাই চরমোনাই পীরের সমর্থন লাভে ব্যস্ত।

বরিশাল-৫ আসন বিএনপির ঘাঁটি হলেও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের বয়কটে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের হাতে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ এখন সংসদ সদস্য। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাই আওয়ামী লীগ তাদের আসনটি ধরে রাখার জন্য মরিয়া। তবে দলীয় কোন্দল এখানে বড় ফ্যাক্টর। চিন্তায় রয়েছে কেন্দ্র।

জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি হলেও দলে তার অবস্থান নড়বড়ে। মহানগর আওয়ামী লীগে তাকে দেয়া হয়েছে সাধারণ সদস্য পদ। হিরণের মৃত্যুর পর এমনিতেই হিরণপন্থিরা কোণঠাসা। বরিশালের আওয়ামী লীগ বলতেই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে এখন বুঝায়। তার নেতৃত্বেই চলছে বরিশাল আওয়ামী লীগ। রয়েছে তার বিশাল কর্মীবাহিনী। তবে সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহী।

এ কারণে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী এবার মনোনয়ন চাইবেন। মাঠেও নেমেছেন বেশ কয়েকজন। কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীমও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনিও বরিশাল এসে কাজ শুরু করেছেন। শোনা যাচ্ছে মাহাবুবউদ্দিন বীর বিক্রমও মনোনয়ন চাইবেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালকেও দেখা যেতে পারে। দেখা যেতে পারে আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দারকেও।

অপরদিকে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসকে তার আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। কেননা তিনি বরিশালের অধিবাসী। এ আসনে তিনিও মনোনয়ন পেতে পারেন। যদিও জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি আশা করছেন তিনি এবারও মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু তার সাথে এখন হাসনাতপন্থিদের সম্পর্ক সাপে নেউলের মতো। তার উপর জেবুন্নেছা আফরোজ তার নেতা কর্মীদের ধরে রাখতে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখাতে পারেননি।

হিরণের একনিষ্ঠ সমর্থকরা এখন ঘরমুখো। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগেরে সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পরপরই হিরণপন্থিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী এমপি হলেও কর্মীশূন্য অবস্থায় আছেন। সে হিসেবে বরিশাল-৫ বা সদর আসনে এবার জেবুন্নেছা আফরোজের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তার সমর্থকরাও দ্বিধান্বিত।

আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও আগের মতো দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিতে পারে। এর আগে সরোয়ারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির এবায়েদুল হক চান ও আহসান হাবিব কামালকেও একাধিকবার মোকাবিলা করতে হয়েছে। এবার এ দুজন বাদেও কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনও রয়েছেন। তবে এবার বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের নামে থাকা একাধিক মামলা।

বিশেষ করে সরোয়ার, এবায়েদুল হক চানের নামে জ্বালাও পোড়াও মামলা রয়েছে। তারপরও বরিশাল-৫ (সদর) আসনে সাবেক এমপি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার ছাড়া বিকল্প কোনো প্রার্থীর কথা ভাবছে না কর্মীরা। পুরো দক্ষিণাঞ্চলেই অন্যতম বিএনপি নেতা সরোয়ারের নাম উচ্চারিত হয়। এবার যদি বিদ্রোহী না থাকে, মামলার রায় পক্ষে যায় তবে সরোয়ারকে আটকানো কঠিন হবে আওয়ামী লীগের জন্য।  

তারপরও বিদ্রোহী প্রার্থীর গুঞ্জন বাড়ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি এবাদুল হক চান, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ জাহান শিরিন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহম্মদ রহমতুল্লাহর কথা শোনা যাচ্ছে। সরোয়ারকে মনোনয়ন না দিলে এ আসনটি ধরে রাখা রীতিমতো অসম্ভব বলে দাবি মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়ার। তবে সরোয়ারের নামে মামলা থাকায় শেষ পর্যন্ত কপাল খুলতে পারে শিরিনের। একই সাথে আওয়ামী লীগের।

শুধু সরোয়ার নয়, মামলা রয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি সম্পাদক মহানগর বিএনপির সম্পাদকসহ নির্বাচনী মাঠে লড়াই করার মতো বিএনপির প্রায় সব নেতাকর্মীর নামে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীনের মতে নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারলে এবং ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে এ আসনটি বিএনপির কাছ থেকে কেউ নিতে পারবে না।
 
জাতীয় পার্টি এ আসনে তেমন একটা ফ্যাক্টর নয়। এ দলটিও বহুভাগে বিভক্ত। দলীয় কোন্দল চরমে। একদিকে মহানগর জাতীয় পার্টি, অপর দিকে জেলা জাতীয় পার্টি। কেউ কারো মুখ দর্শন করেন না এমন অবস্থা। এ আসন থেকে এখন পর্যন্ত অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুলের নাম শোনা যাচ্ছে।

চরমোনাই পীর সাহেবের ইসলামী আন্দোলনের বহু সমর্থক ভোটার রয়েছে। নির্বাচনে জয়ী হবার মতো ভোটার না থাকলেও তারা যাদের সমর্থন দেবেন জয় সেদিকেই হেলে পড়তে পারে। তারাও এবার একক নির্বাচনে নামবে বলে জানা গেছে। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে