সোমবার, ০৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:৫৬:৪৬

২৫ মিনিটের জন্য বগুড়ার মেয়র!

২৫ মিনিটের জন্য বগুড়ার মেয়র!

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে : ২৫ মিনিটে মেয়রের অফিস ও চেয়ার দখল করে ফাইলপত্র ঘাঁটলেন বগুড়ার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ ওরফে ফ্রেম মান্নান। ঘটনাটি বগুড়ার শহরে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গতকাল দিনব্যাপী এই আলোচনাই শহরের সর্বত্র হয়েছে।

পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটনাটি ঘটলেও পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ। সকাল ৯টা ১০ মিনিট। সবেমাত্র অফিসের পিয়ন এবং কিছু কর্মকর্তা এসেছেন। মেয়র অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় আছেন। মেয়রের পিও আমির হোসেন তার আসনে বসে আছেন। এমন সময় তার রুমে হাজির হন বগুড়া আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আকন্দ ওরফে ‘ফ্রেম মান্নান’।

তিনি মেয়রের পিও-কে জিজ্ঞেস করলেন, মেয়র সাহেব কোথায়? তিনি উত্তর দেন উনি অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় আছেন, আজ আসবেন না। এই কথা শুনে ওই নেতা সোজা চলে যান মেয়রের রুমে। রুমটি তালা লাগানো ছিল। থাই গ্লাসের রুম। সজোরে লাথি মেরে সেই গ্লাস ভেঙে মান্নান মেয়রের চেয়ারে গিয়ে বসেন। চেয়ারে বসে পিয়নকে ডাকেন তিনি। পিয়ন চলে আসে।

ভয়ে তারা অনেকটাই জুবুথুবু হয়ে পড়েন। পিয়নকে বলেন, রেজা কই? রেজা পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার। তাকে ডাকতে বলেন মান্নান। পিয়ন ইঞ্জিনিয়ার রেজাকে ডেকে দেয়। তিনি এসে দেখেন মেয়রের চেয়ারে বসে আছেন মান্নান। তাকে সেখান থেকে উঠে যেতে বলেন ওই ইঞ্জিনিয়ার। তিনি কথা শোনেন না, বসেই থাকেন। উল্টো তাকে বলেন রাস্তার সংস্কারের ফাইলগুলো তার সামনে নিয়ে আসতে।

ফাইলগুলো পরে ঠিক কী করেছেন সেই বিষয়ে আর কেউ মুখ খোলেননি। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও অজ্ঞাত কারণে তাকে আটক করা হয়নি। পুলিশের উপস্থিতিতেই মান্নান ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মান্নান মোটরসাইকেলযোগে সকাল সোয়া ৯টার দিকে বগুড়া পৌরসভায় প্রবেশ করেন।

সেই সময় তার মোটরসাইকেল চালকসহ মিলু নামের একজন ঠিকাদার ছিল। মোটরসাইকেল চালক নিচে অবস্থান করেন। মান্নান ঠিকাদার মিলুসহ ওপরে উঠে যান। সেখানে গিয়ে লাথি মেরে থাইগ্লাস ভেঙে মেয়রের কক্ষে ঢুকে পড়েন। তারপর মেয়রের চেয়ারে বসে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র ঘেঁটে দেখা শুরু করেন।

এদিকে বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ঠিক কী কারণে মান্নান তার অফিস ভেঙে চেয়ারে বসে পড়েন- তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে এর আগে তিনি গেল বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে বগুড়ার কিছু হাটবাজার ইজারা নিয়ে তিনি আমার বাসায় গিয়ে আমার ওপর হামলা করেছিলেন।

এবার তিনি বগুড়া শহরের চারমাথা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার পাশে দোকানপাট ভেঙে একটি মার্কেট করার পরিকল্পানা করেছেন। পৌরসভা থেকে একটি নোটিশ পাঠিয়ে সেটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সবকিছু থেকেই হয়তো তিনি তার অফিসে আসেন তার ওপর হামলা করতেই। তিনি ঢাকা থেকে বগুড়ার পথে রওনা দিয়েছেন। বগুড়ায় পৌঁছে থানায় মামলা করা হবে, বলেন মেয়র।

বগুড়ার পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমানের পিও আমির হোসেন বলেন, তিনি সকাল ৯ টা ১০ মিনিটের দিকে অফিসে আসেন। তার কিছুক্ষণ পরেই মান্নান মেয়রের অফিসে এসে থাইগ্লাসের দরজা ভেঙে মেয়রের চেয়ারে গিয়ে বসেন। তারপর পৌরসভার ইঞ্জিয়ার রেজাকে ডেকে ফাইলপত্র দেখেন। মেয়রের চেয়ারে বসা নিয়ে ভয়ে আমরা কেউ কোনো কথা বলিনি। বললে হয়তো পিটনি খেতে হতো। অফিসে যে কয়জন ছিল তারা ওই নেতার দাপটের কাছে অনেকটাই অসহায়।

এদিকে মেয়রের অফিসকক্ষ ভেঙে ২৫ মিনিট দখল করে থাকার খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও অজ্ঞাত কারণে তাকে গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশের উপস্থিতিতেই পরে তিনি পৌরসভা ছেড়ে চলে যান।

তাকে গ্রেপ্তার না করার কারণ জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন বলেন, পুলিশের সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। যদি কিছু হয়ে থাকে পুলিশ আসার আগে হয়েছে। কোনো অভিযোগ না দিলে কেন তাকে গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।

উল্লেখ্য, আব্দুল মান্নান আকন্দ ওরফে ফ্রেম মান্নান জেলা ট্রাক মালিক সমিতির বর্তমান সভাপতি। বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি পেশায় একজন ঠিকাদার। শহরের প্রায় কাজ তার দখলেই হয়ে থাকে। দাপুটে ওই নেতার বিরুদ্ধে সরকারদলীয় স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের ভালো সম্পর্ক।

ফলে প্রশাসনও তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলে না। এর আগে তিনি ২০১৭ সালে মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে হাটবাজার ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মেয়রের বাসায় গিয়ে তার ওপর হামলা করেন। পরে বিষয়টি মাফ চাওয়ার মধ্য দিয়ে মিটে যায়। ওই সময় মেয়র তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। সূত্র : মানবজমিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে