বুধবার, ০৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৩৩:২৮

আর ঘানি টানতে হবে না মিনতীকে, ঘটনাটি জানলে অবাক হবেন আপনিও

আর ঘানি টানতে হবে না মিনতীকে, ঘটনাটি জানলে অবাক হবেন আপনিও

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জীবনের ঘানি টেনে’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল—চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের হাজারবিঘী গ্রামে একটি পরিবার রয়েছে, যারা ৩০ বছর ধরে সরিষার তেল তৈরির জন্য বংশ পরম্পরায় নিজেরাই ঘানি টানে। বর্তমানে পরিবারের তিন ভাই তাঁদের স্ত্রীদের নিয়ে ঘানি টানছেন। ঘানি টানার জন্য তাঁদের কোনো গরু ছিল না। দরিদ্রতার কারণে তাঁরা কোনো গরু কিনতে পারেননি।

তবে প্রতিবেদনটি পড়ে একজন ওই পরিবারের এক ভাইকে একটি গরু উপহার দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার শিবগঞ্জ পৌরসভার তর্তিপুর হাট থেকে কিনে মিনতী রানী ও তাঁর স্বামী হরিপদ সাহার কাছে গরুটি তুলে দেওয়া হয়েছে। যিনি গরুটি উপহার দিয়েছেন তিনি তাঁর নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছেন।

তবে যিনি গরুটি ওই পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁর নাম হাসিবুর রহমান চৌধুরী। হাসিবুর গরুদাতার ভাই। তিনি দিনাজপুর পার্বতীপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শরীরচর্চা প্রশিক্ষক ও সদর উপজেলার মহারাজপুর মিঞাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

হাসিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দাতা আমার ভাই, তাঁর নাম ও অবস্থান জানাতে নিষেধ করেছেন। তিনি বিদেশে থাকেন। কালের কণ্ঠ’র একটি প্রতিবেদন দেখে আমরা স্বশরীরে ওই গ্রামে গিয়ে জীবন-সংগ্রামের কষ্টকর বিষয়টি দেখেছি। এরপর মিনতী রানী ও তাঁর স্বামীকে একটি গরু কিনে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি। এরপর তর্তিপুর হাটে গিয়ে ৫৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে মিনতী রানী ও তাঁর স্বামী হরিপদ সাহাকে উপহার দিই। গরুটি উপহার দিয়েছেন আমার ভাই।’

গরু পাওয়ার পর হরিপদ সাহা বলেন, আমাদের তিন ভাইকে নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। এরপর থেকে অনেকেই আমাদের খোঁজখবর নিতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় এক দাতা আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে আমাকে গরু কিনে দিলেন। এখন আর আগের মতো কষ্ট করতে হবে না। নিজেদের ঘাড়ে আর ঘানির জোয়াল নিয়ে টানতে হবে না। গরু পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি।

মিনতী রানী সাহা বলেন, ‘গরু যখন পাই তখন আমার চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরতে থাকে। এখন থেকে আমাদের আর ঘানির জোয়াল টানতে হবে না।’

হরিপদ সাহা বলেন, গরুটি হাতে পাওয়ার পর আনন্দে আমার চোখের পানি সংবরণ করতে পারছিলাম না। আমি খুব খুশি হয়েছি। তবে আমার অন্য দুই ভাই যারা আমার মতো ঘানি টানত তাদের জন্যও যদি এমনিভাবে কেউ এগিয়ে আসত তবে মহাখুশি হতাম।’

হরিপদ সাহার ভাই তারাপদ সাহা বলেন, ‘শম্ভুপদ সাহার কষ্ট রয়েই গেল। কেউ যদি বাকি দুই পরিবারের প্রতি এমন সদয় হতেন তবে আমাদের দুই পরিবারের কষ্ট দূর হতো। তবে আমরা গরু না পেলেও হরিপদ সাহা একটি গরু পাওয়ায় আনন্দিত।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের হাজারবিঘী গ্রামের হরিপদ সাহা, শম্ভুপদ সাহা ও তারাপদ সাহা তিন ভাই দীর্ঘ ৩০ বছর ঘানির সরিষার তেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বংশ পরম্পরায় জড়িত হন ঘানি থেকে সরিষা মাড়িয়ে তেল উৎপাদনের কাজে।

৬৫ বছরের হরিপদ সাহার স্ত্রী মিনতী রানী সাহাও প্রৌঢ়ত্বের কাছাকাছি। হরিপদ সাহা, স্ত্রী মিনতী রানী সাহাসহ হরিপদ সাহার অন্য দুই ভাই শম্ভুপদ সাহা ও তারাপদ সাহা পৃথকভাবে নিজেরাই ঘানি টেনে ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল বিক্রি করে কোনোমতে বেঁচে আছেন।

শম্ভুপদ সাহার ৪৫ বছর বয়সী স্ত্রী গাজলী রানী সাহা জানান, এই বয়সে একজন নারী হয়ে পশুর কামটি করছি দুই বেলা দুই থালা ভাত ও বছরে একটি কাপড়ের জন্য। সরকার বা ইউনিয়ন থেকে তাঁদের কোনো সহায়তা বা কার্ড দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

এলাকাবাসী খাদেমুল ইসলাম জানান, এই তিন ভাইয়ের মধ্যে আরো বেশি শোচনীয় অবস্থা শম্ভুপদ সাহার। তাঁর প্রতি বেশি সদয় হওয়া উচিত। -কালের কন্ঠ।
০৫ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে