বৃহস্পতিবার, ০১ মার্চ, ২০১৮, ০১:১৪:৩৩

চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ২৮ পাহাড়ে ৬৮৪ পরিবার

চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ২৮ পাহাড়ে ৬৮৪ পরিবার

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম থেকে : চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের ২৮ পাহাড়কে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড়ে বাস করছে ৬৮৪টি পরিবার। অবৈধভাবে বসবাস করলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এসব পরিবারে আছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগসহ নাগরিক নানা সুবিধা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ‘চট্টগ্রাম জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস, পাহাড় কর্তন ও করণীয় সম্পর্কে রূপরেখা সংবলিত’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিশনার বরাবর প্রেরণ করা হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত পাহাড় রক্ষায় ১০ সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি গত রবিবার পাঠানো হয়।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ৫০০ পাহাড় আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের এলাকায় সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ ২৮টি পাহাড় রয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ের   ব্যক্তি মালিকানাধীন আছে, সিআরবির পাদদেশ, টাইগার পাস-লালখান বাজার রোড সংলগ্ন পাহাড়, টাইগার পাস মোড়ের দক্ষিণ পশ্চিম কোণের পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুল সংলগ্ন পাহাড় ও আকবর শাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়।

সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, গণপূর্ত ও ওয়াসার মালিকানাধীন আছে মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আছে পরিবেশ অধিদফতর সংলগ্ন পাহাড় ও লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড়। বন বিভাগের বন গবেষণাগার ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়। ইস্পাহানি গ্রুপের ইস্পাহানী পাহাড়।

জেলা প্রশাসনের ডিসি হিলের চেরাগী পাহাড় মোড় সংলগ্ন পাহাড়, এ কে খান কোম্পানির এ কে খান কোম্পানি পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কৈবল্যধামস্থ বিশ্ব কলোনির পাহাড়, ভিপি লিজভুক্ত লালখান বাজার, চান্দমারি রোড সংলগ্ন জামেয়াতুল উলুম ইসলামী মাদ্রাসা সংলগ্ন পাহাড়, সরকারি (এপি সম্পত্তি) নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়।

ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়সমূহের মধ্যে আছে- মোজফফরনগর পাহাড়, প্রবর্তক পাহাড়, গোল পাহাড়, জয়  পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, ফয়েজ লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, গরীবুল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি পাহাড়, মিয়ার পাহাড়, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশে মীর মোহাম্মদ হাসানের পাহাড়, ইস্পাহানী পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের হারুন খানের পাহাড়ের পশ্চিমাংশ।

জানা যায়, ওই প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রক্ষায় ১০টি সুপারিশও করেছে। এর মধ্যে আছে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বাসকারীদের স্থানান্তর ও পুনর্বাসন, পাহাড় কাটা ধ্বংসে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পুলিশ বিভাগ নিজ থেকেই মামলা দায়েরে উদ্যোগী হওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসতি নিষিদ্ধ করে সেখানে অংশীদারিত্বমূলক বনায়ন করা, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে পর্যটন স্পট তৈরি করা, চবি ও এপিবিএন-২ এলাকার পাহাড়ে বাসকারীদের পাহাড় মালিকদের উদ্যোগে পুনর্বাসন করা, পাহাড় এলাকার মানুষদের সচেতন করে তোলা, পাহাড় কাটা মামলা রুজু, তদন্ত এবং বিচার সুষ্ঠু ও দ্রুত করতে পরিবেশ অধিদফতরকে শক্তিশালী করা, সিডিএ ও চসিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বাধ্যতামূলক ১০ শতাংশ পাহাড় ব্যবস্থাপনার জন্য সংরক্ষণ করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ে নিরাপত্তা দেয়াল, পানি নিষ্কাশনে ড্রেন, শক্ত সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘২০১৭ সালের ১২ ও ১৪ জুন পাহাড়ধসে শতাধিক প্রাণহানি আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। তা ছাড়া পাহাড় ব্যবস্থাপনায় আমাদের দুর্বলতা ও ব্যবহারে অসতর্কতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। পাহাড়ধসে ভৌগোলিক কারণ কিছুটা দায়ী হলেও এর চেয়ে বড় দায়ী নির্বিচারে পাহাড় কর্তন, পাহাড় ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা না থাকা, পাহাড় নিয়ন্ত্রণে সংস্থা-প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির অনুপস্থিতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রভাবশালী ব্যাক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বৃত্তায়ন। তবে এসব ঠেকাতে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’ -বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে