রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৮:১৭:৩৯

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির জন্য হাহাকার

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির জন্য হাহাকার

ফরহাদ আমিন, টেকনাফ (কক্সবাজার) : টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ের রইক্ষ্যং, হ্নীলার নোয়াপাড়া ও লেদার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির জন্য হাহাকার চলছে।

বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি ব্যবহারের পানিরও রয়েছে তীব্র সংকট। গরমের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে পানির সংকট। সেই সাথে বাড়ছে পানি বাহিত রোগ ব্যাধী।

শনিবার রোহিঙ্গা শিবিরগুলো সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। রইক্ষ্যং রোহিঙ্গা শিবিরে ৭০ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গারা নিজস্ব উদ্যোগে পাহাড়ে ও ফসলী জমিতে পলিথিনের ছাউনি ও ঘেরা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে বসবাস করছে।

ছোট ছোট এক একটি ঝুপড়ি ঘরে তিন চারটি পরিবারের ১০ থেকে ২০ জন এক সাথে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। প্রতিটি পরিবারে রয়েছে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী শিশু। তীব্র গরমে পানির জন্য হাহাকার চললেও পাওয়া যাচ্ছেনা পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি। সেই সাথে ব্যবহারের পানিও মিলছেনা।

দেখা যায়, শিবিরে বসবাসকারী নারী শিশুরা কুয়া, খাল ও খালের পাশে গর্ত করে খাবার ও ব্যবহারের পানি সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর ওই পানির জন্যও দীর্ঘ লাইন করে তীব্র রোদে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে তাদের। মংডুর লম্বাঘোনা এলাকার মোঃ আলম স্ত্রী নুর বেগম (২২) বলেন, খালের পাশে ও বিলে গর্ত করে অনেক কষ্টে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

ওই গর্তে দিনে এক দুই কলসীর বেশী পানি মিলছেনা। ফলে খাবার ও ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। গোসল তো দুরের কথা ওযু ও রান্নার জন্য পানির তীব্র সংকটে আছি।

নাইনসং এলাকার বাসিন্দা আবু কালাম বলেন, একটি সংস্থা ট্যাংক বসিয়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করলেও ধাক্কাধাক্কি করে দুয়েক বোতল নিতে পারলেও তাতে পরিবারের সবার তৃঞ্চা মিঠছেনা। আবার এই পানি অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে খাল-বিল ও কুয়ার পানি পান করতে হচ্ছে।

রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে এখনো স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট আকারে রয়েছে। শিবিরের বসবাসকারী ঝুপড়ি ঘরের পাশে গর্ত করে রাতের আঁধারে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিচ্ছে। একটি ঝুপড়ি ঘরে বাস করছে আলী আহমদের পরিবারসহ তিনটি পরিবার।

সেখানে রয়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত। তিন পরিবারের সদস্য রয়েছে ১৮ জন। মংডুর বলিবাজার গ্রাম থেকে প্রায় ২২ দিন আগে পালিয়ে এসে অবস্থান করে রইক্ষ্যং শিবিরে।

জাফর আহমদের পরিবারে রয়েছে ৮ জন। সে বলেন, এখনো তাদের বসতির আশপাশে কোন লেট্রিন স্থাপন করেনি কেউ। তাই রাত হলে গর্তে মলমুত্র ত্যাগ করা হয়। দিনের বেলায় দুই হাতে পলিথিন পেছিয়ে প্রয়োজন সাড়ান। শিশুরা যখন তখন যত্রতত্র খোলা জায়গায় মলমুত্র ত্যাগ করছে। এতে দিন দিন শিবিরের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে, দূর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ। তবে শিবিরে দুয়েকটা লেট্রিন দেখা গেছে এবং নতুন করে আরো লেট্রিন বসানোর কাজ চলছে। কিন্তু তা ৭০ হাজার মানুষের জন্য খুবই অপ্রতুল।

শিবির গুলোতে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। শিবিরের অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে অসুস্থ রোগীর দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। যাদের অধিকাংশ শিশু। মংডুর আন্ডাং গ্রামের রহিমা খাতুন জানান, তার ৩ বছরের শিশুর ডায়রিয়া হয়েছে। গরমে শরীরে ফুসকা উঠেছে।

হারু রশিদের স্ত্রী নজুমা খাতুন জানান (৬০) জানান, ৫ দিন ধরে গায়ে জ্বর। ঔষধও খেয়েছে কিন্তু জ্বর ছাড়ছেনা।

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে চিকিৎসা সংকট চলছে। শিবিরে অনেক রোগীর দেখা মিললেও তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোথাও কোন চিকিৎসা পায়নি তারা। রশিদা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, তার দুই শিশু সন্তান অসুস্থ এক সপ্তাহ যাবৎ। কিন্তু কোথাও চিকিৎসা পাননি বলে জানান তিনি।

তার দুই ছেলে আনোয়ার কামাল (৬) ও আনোয়ার হোসেন (১)। সে নিজেও একটি ঝুপড়ি ঘরের পাশে অসুস্থ অবস্থায় এক ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে রয়েছে। তার স্বামী শামশুল আলম ত্রানের আশায় দুই কিলোমিটার দুরে উনছিপ্রাং এলাকায় গেছে সকাল থেকে। গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে অবস্থান করলেও কোন ত্রান সামগ্রী পায়নি বলে জানায় সে।

নোয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা পরিবার ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে বসবাস করলেও ত্রাণ সামগ্রী পায়নি। ফলে অনেক পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে রয়েছে। শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছে তারা।

হোয়াইক্যংয়ের রইক্ষ্যং রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেওয়া জহির আহমদের (৫৫) পরিবারে সদস্য ১৮ জন। ১৮ জনের পুরো পরিবার বসবাস করছে ৮-১০ ফুটের এই ছোট্ট ঘরে। এখানে রয়েছে তার স্ত্রী, দুই ছেলে, পুত্রবধু, নাতি নাতনি। রাখাইনের চালিপ্রাং গ্রাম থেকে গত ১৬ দিন আগে উনছিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে এদেশে এসে রইক্ষ্যং রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেন। মিয়ানমার সেনাদের হামলায় জহির আহমদ বর্তমানে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ত্রাণের অভাব না থাকলেও পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যার কথা জানান তিনি।

শুধু এই পরিবারটি নয়, এভাবে একেকটি ঝুপড়িতে ২/৩টি পরিবার ১৫ থেকে ২০ জন করে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। একটু গরম পড়লেই জীবনটা দূর্বিষহ হয়ে উঠছে।-আমাদের সময়
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে