বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:৪৪:৪৯

দালালের খপ্পরে পড়ে লাশ হলেন কাওসার

দালালের খপ্পরে পড়ে লাশ হলেন কাওসার

নুরুল ইসলাম মনি: মানবপাচারকারীদের কবলে পড়ে বাহুবলের এক তরুণের দক্ষিণ আফ্রিকায় রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার সহযাত্রী অপর তরুণ সংকটে রয়েছে। স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সিলেটের তাজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর নামক এক ট্রাভেলস ওই দুই তরুণসহ ১২ জনের একটি দলকে গত ৫ই অক্টোবর পাচার করেছিল।

নিহত তরুণের নাম কাওসার এলাহী। সে উপজেলা সদরের হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা মরহুম মাওলানা আশিক এলাহীর পুত্র ও একই এলাকার ইউনিভার্সেল কেমিস্ট-এর মালিক হাবিবুর রহমান (মকছুদ) এবং বাহুবল বাজারের তামিম ট্রাভেলস এর মালিক আবুল কাশেম-এর ভাতিজা।

গত ৯ই অক্টোবর রাতে কাওসার এলাহীর মৃত্যুর খবর আসে। কাওসার এলাহীর পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত কাওসার সম্প্রতি লন্ডন যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর সে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। সম্প্রতি সে জালাল মিয়া নামে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

নিহত কাওসার ও উপজেলার ছোঁয়াপুর গ্রামের আবদুর রউফ মেম্বারের পুত্র আশিকুর রহমান কাওসার সিলেটের হাজী শরীফ উদ্দিনের মালিকানাধীন তাজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর নামক একটি ট্রাভেলস-এর মাধ্যমে জনপ্রতি ৬ লাখ টাকা কন্ট্রাক্টে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার বন্দোবস্ত করে।

গত ৫ই অক্টোবর ঢাকা থেকে বিমানযোগে বোম্বে ও বোম্বে থেকে ইথিওপিয়া এবং ইথিওপিয়া থেকে মুজাম্বিকে যাত্রা করে তারা। পাচার হওয়া দলটিতে বাহুবলের কাওসার এলাহী ও আশিকুর রহমান কাওসারসহ মোট ১২ জন ছিল। দালালরা ১২ সদস্যের দলটিকে মুজাম্বিক থেকে বাইরোডে পাচার করে দক্ষিণ আফ্রিকায়।

গত ৮ই অক্টোবর তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে। ৯ই অক্টোবর দালালদের মাধ্যমে খবর আসে কাওসার এলাহী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। ওইদিনই রাতের বেলা দালালরা স্বীকার করে কাওসার এলাহী দক্ষিণ আফ্রিকায় মারা গেছে। গতকাল সকালে নিহত কাওসারের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, শোকের মাতম চলছে।

কাওসারের মা একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ওরা মিথ্যা বলছে, আমার ছেলে বেঁচে আছে। নিহতের চাচা হাবিবুর রহমান (মকছুদ) জানান, দালাল মারফত আমরা তার (কাওসার এলাহী) মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। দালালরা তার মৃত্যুর যে কারণ বলছে তা আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর খবর জানানোর ৩৬ ঘণ্টা পরও দালালরা আমাদের হাসপাতালের (যে হাসপাতালে কাওসার মারা গেছে) ঠিকানা দিতে পারেনি। এতে তার মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে। এক প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, দলালরা লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করছে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।

তিনি বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আশিকুর রহমান কাওসার (নিহত কাওসারের সহযাত্রী) তার পিতার মোবাইলে কল দিয়ে ৩০ সেকেন্ড কথা বলেছে। এ সময় সে জানিয়েছে, কাওসার এলাহী মারা গেছে, আমিও বাঁচব না, আমার জন্য দোয়া করো।

তিনি আরো জানান, বিষয়টি বাহুবল মডেল থানা পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন নিহতের মা মাহমুদা আখঞ্জী। এ ব্যাপারে জানতে সিলেটের তাজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর-এর মালিক হাজী শরীফ উদ্দিন ও তার ম্যানেজারের মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি।-এমজমিন

১২ অক্টোবর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে