রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫০:৪৭

বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক এমপি খান টিপু সুলতান আর নেই

বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক এমপি খান টিপু সুলতান আর নেই

যশোর থেকে : যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান আর নেই। শনিবার রাত সাড়ে নয়টায় চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। টিপুর ছেলে সাদাব হুমায়ুন সুলতান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তাকে কখন, কিভাবে যশোরে আনা হবে, এখনও সে সিদ্ধান্ত হয়নি।’

শনিবার দিনভর টিপু সুলতানকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন হার্ট ও নিউরো বিশেষজ্ঞ ঢাকার বারডেম হাসপাতালের ডাক্তার আব্দুর রশিদ, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ডা. আব্দুল ওহাব, ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. আশিক মোয়াজ্জেম এবং ডা. এবিএম আব্দুল্লাহসহ খ্যাতিমান বেশ কয়েকজন চিকিৎসক।

টিপু সুলতানের আত্মীয়রা জানান, সহকর্মীকে দেখতে শনিবার সেন্ট্রাল হাসপাতালে যান যশোর সদরের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা বাসেত মজুমদার, ফজলে নূর তাপস, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, নড়াইল সদরের সংসদ সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বাকের, মণিরামপুরের কামরুল হাসান বারীসহ অনেকেই। এসময় সহকর্মীরা টিপু সুলতানের চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

গত বুধবার বিকাল থেকে টিপু সুলতানকে ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন চিকিৎসকরা। গত ১৫ আগস্ট তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছেলে সাদাব জানান, আগামীকাল রবিবার বেলা ১১টায় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতানের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ প্লাজায়।

এরপর মরদেহ নেওয়া হবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে বাদ জোহর জানাজা শেষে তাকে যশোরে আনা হবে। বাদ আছর যশোর শহরে জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হবে সংসদীয় এলাকা মণিরামপুরে। সেখানে বাদ মাগরিব জানাজা শেষে জন্মস্থান খুলনার ডুমুরিয়ায় নেওয়া হবে। বাদ এশা ডুমুরিয়ায় শেষ দফা জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সালে মাত্র দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন যশোর শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান টিপু সুলতান। এক বছর পর ১৯৬৭ সালে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্রলীগের। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বৃহত্তর যশোর জেলায়।

একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ছাত্রনেতার অন্যতম নেতৃত্ব যশোরকে দেশের প্রথম স্বাধীন জেলার স্বীকৃতি এনে দেয়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে ৮০ সালে যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য হয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে যশোরের রাজনীতিতে থাকার পরামর্শ দিয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করেছিলেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে খুন হওয়ার পর ঢাকায় গ্রেফতার হয়ে ৪৮ মাস ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন টিপু সুলতান। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯৫ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন।

যশোর-৫ মণিরামপুর আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে পঞ্চম, সপ্তম ও নবম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।

দশম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ৫ জানুয়ারি ৬২টি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দিয়েছিল জামায়াত বিএনপি, পরবর্তীতে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটে বিএনপি জামায়াত সারাদেশে ভোট বর্জন করলেও মণিরামপুরে ভোট দিলে সতন্ত্রপ্রার্থী স্বপন ভট্টচার্যের কাছে পরাজিত হন টিপু সুলতান।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে