শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ০৪:৫৪:৪৬

ঘর বাঁধার আশায় মুসলিম হয়েছিলেন পার্বতী, ফিরলেন লাশ হয়ে

ঘর বাঁধার আশায় মুসলিম হয়েছিলেন পার্বতী, ফিরলেন লাশ হয়ে

যশোর থেকে : যশোর সদর উপজেলায় পার্বতী রায় (২৪) নামে এক গৃহবধূর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে যশোরে পাওয়া মৃতদেহটি পার্বতী ওরফে নুসরাত জাহানের।

হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া পার্বতী সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছে, পাবর্তীর স্বামী মহিতোষ ভারতে থাকার সুযোগে তিনি যশোর সদরের মাজদিয়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে নিরব ওরফে রাব্বী নামের একটি ছেলেটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

পার্বতীর সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তার স্বামী মহিতোষ ভারতে থাকায় বাবা ও মায়ের সঙ্গে থাকতেন। স্বামী ভারতে থাকার সুবাদে তিনি এক মুসলিম তরুণকে বিয়ে করেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

পার্বতীকে ফোনে ডেকে নিয়ে গলা কেটে খুন করা হয়েছে বলে তার মায়ের দাবি। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন পার্বতী ওরফে নুসরাতের মা যমুনা।

নিহত পাবর্তী ওরফে নুসরাত জাহান মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের অধীর দাসের মেয়ে। তার সঙ্গে মাগুরার শালিখা উপজেলার বুইখালি গ্রামের মহিতোষ রায়ের (বর্তমানে ভারতে বসবাসকারী) বিয়ে হয়েছিল।

নিহতের মা যমুনা দাস যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালের কর্মচারী। তিনি বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তিনজনের সঙ্গে অজ্ঞাত ২-৩ জন পার্বতী খুনে জড়িত।

লিখিত অভিযোগে যমুনা তার মেয়ে হত্যায় সদর উপজেলার মাহিদিয়া প্রাইমারি স্কুলের পাশের সিরাজুল ইসলামের ছেলে নীরব ওরফে রাব্বি (২৬), মাহিদিয়া পশ্চিমপাড়ার লিয়াকত হোসেনের ছেলে বিপুল হোসেন (২৫) এবং শংকরপুর জিহড়াপাড়ার মিলন হিজড়াকে (২৭) অভিযুক্ত করেছেন।

জানা যায়, সাত বছর আগে মাগুরার শালিখা উপজেলার বৈখালী গ্রামের দ্বীন রায়ের ছেলে মহিতোষ রায়ের সঙ্গে পার্বতী রায়ের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে অভি (৬) নামে একটি সন্তান আছে। অভি তার ঠাকুরমার কাছে থাকে।

পার্বতীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বনিবনা না হওয়ায় তিনি মায়ের কাছে থাকতেন। অভির জন্মের ১৬ মাস পর পার্বতীর স্বামী মহিতোষ ভারতে চলে যান। তিনি এখনো ভারতেই বসবাস করেন। স্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।  

‘স্বামী ভারতে থিতু হওয়ায়  পার্বতী একটি গার্মেন্টে এ কাজ নেয়। সেখানে শিমুল নামে এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। শিমুলের মাধ্যমে নীরব ওরফে রাব্বির সঙ্গে পরিচয় হয় বছর দুয়েক আগে। তারা মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলতো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

মাস তিনেক আগে পার্বতী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। নুসরাত জাহার নাম ধারণ করে সে রাব্বিকে বিয়ে করে। বিয়ের পর তারা ঝুমঝুমপুর এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতো। রাব্বি খুব নির্যাতন করতো নুসরাত জাহানকে (পার্বতী),’ বলেন যমুনা।

থানায় দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিতে পার্বতী ও তার মা যমুনা যশোরের সুধীর বাবুর কাঠগোলার কাছের পুজামণ্ডপে যান কালীপূজা দেখতে। সেখানে রাব্বিও যান। এর কিছুক্ষণ পর একটি কালো রঙের মোটরসাইকেলে করে ওই মন্ডপে আসেন বিপুল ও মিলন। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেন।

এরপর মোটরসাইকেলে করে পার্বতীকে নিয়ে যান তারা। রাতে তিনি পার্বতীর মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পান। মেয়ে ফিরছেন না দেখে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার ঝুমঝুমপুরের ভাড়াবাসায় যান যমুনা। কিন্তু ঘর বন্ধ পান। আশেপাশের লোকজনও কিছু বলতে পারেননি।

যমুনা লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘শুক্রবার সকালে পার্বতীর বাবা রাব্বির বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে তাদের দেখা পাননি। রাব্বির চাচা বলেন, ‘দুই-তিনদিন পর তাদের ভালোমন্দ সব জানতে পারবেন। থানা পুলিশ কারার দরকার নেই।’

ওই কথা শুনে পার্বতীর বাবা সেখান থেকে পুলেরহাট বাজারে আসেন। ওই বাজারের কাছের একটি চায়ের দোকানে দাঁড়ান। সেখানে লোকমুখে জানতে পারেন মালঞ্চির মুছার বান্দাল এলাকায় এক তরুণীর লাশ পাওয়া গেছে। তিনি বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের লাশ দেখতে পাই। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারলো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন এবং গলা কাটা ছিল।’

যমুনার দাবি, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে মালঞ্চি এলাকায় নিয়ে গিয়ে তার মেয়েকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নিরব ওরফে রাব্বি পলাতক রয়েছেন।

যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই মোকলেসুজ্জামান জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পতেঙ্গালি-মালঞ্চি রাস্তার মধ্যবর্তীস্থানে মুসার বান্দাল নামকস্থানে ইটের সলিংয়ের ওপর থেকে এক নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে অধীর রায় ও যমুনা রায় হাসপাতালে এসে অজ্ঞাত লাশটি তাদের মেয়ে পার্বতী বলে নিশ্চিত করেন।

এসআই মোকলেসুজ্জামান আরও জানান, নিরবকে খুঁজছে পুলিশ। তাকে পেলে হত্যার মূল রহস্য জানা যাবে। তবে তরুণীকে সম্ভ্রম নষ্ট করার পর হত্যা করা হয়েছে কিনা সেটা ডাক্তারের রিপোর্টের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

কোতয়ালি থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, ওই গৃহবধূ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কেউ আটক হয়নি। তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব জানানো সম্ভব না।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে