সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ০১:৩৪:১২

আ’লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিএনপির ভরসা জোট!

আ’লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিএনপির ভরসা জোট!

কেশবপুর (যশোর) থেকে : যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে টানা চারবার বিজয়ী আওয়ামী লীগে বর্তমানে বড় সমস্যা দলীয় কোন্দল। এ আসনে তৃণমূলের ব্যাপক বিভেদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলেও মাশুল দিতে হতে পারে দলটিকে।

মনোনয়ন-যুদ্ধে বর্তমান সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আরও অন্তত চারজন। এর মধ্যে সাদেক পরিবারের অপর সদস্য চিত্রনায়িকা শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ায় নতুন সমীকরণ চলছে।

সম্প্রতি ওয়াহিদ সাদিক ও শাবানা এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক এইচএম আমির হোসেন দীর্ঘদিন ধরে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারাও এবার মনোনয়নের জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত জোর তৎপরতা শুরু করেছেন।

অপরদিকে এ আসনে বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া বিএনপি। দীর্ঘদিনের পরাজয়ের গ্লানি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চায় দলটি। আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে আঘাত হানতে হলে শক্ত প্রার্থী ছাড়া বিজয় অসম্ভব বিএনপির। জোটের শরিক ও সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে টানার নানা কৌশল মাথায় রেখেই এগোচ্ছে বিএনপি। জোট এ ক্ষেত্রে বিএনপির বড় ভরসা।

তা না হলে টানা চারবার বিজয়ী আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করা বিএনপির জন্য কঠিন হবে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মজিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বক্কর আবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান রয়েছেন।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেশবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ এলাকায় গণসংযোগ করছেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি যশোরের কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৬ আসন গঠিত।

গত দশটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাঁচবার, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ১ বার, জামায়াত ২ বার, বিএনপি ১ বার ও জাতীয় পার্টি ১ বার বিজয়ী হয়েছে। সর্বশেষ টানা চারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ আসনের এমপি।

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের পিযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, ১৯৭৯ সালে বিএনপির গাজী এরশাদ আলী, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) আবদুল হালিম, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আবদুল কাদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জামায়াতের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের এএসএইচকে সাদেক, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আবদুল ওহাব সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের সহধর্মিণী আওয়ামী লীগের ইসমাত আরা সাদেক এমপি নির্বাচিত হন।

তবে গত পৌনে চার বছরে তৃণমূলের দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক হামলা, মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। গ্রুপিংয়ের শিকার হয়ে নিরীহ নেতাকর্মীদের অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের সম্পর্ক খুব ভালো নয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা নিজস্ব বলয় নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। ফলে মাঝে মাঝে নানা ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ পাচ্ছে।

তৃণমূলের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক আছে, রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ এমন প্রার্থী না দিলে আওয়ামী লীগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে তৃণমূল। বর্তমান সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক আবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে এবার তার মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হলে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।

গত সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এবার থাকছে না। ফলে নির্বাচনী যুদ্ধের আগে দলের অভ্যন্তরীণ মনোয়ন-যুদ্ধে আগে জিততে হবে। ইসমাত আরা সাদেকের নৌকার টিকিট ছিনিয়ে নিতে তৎপর রয়েছেন সাদেক পরিবারের আরেক সদস্য ওয়াহিদ সাদেক। তিনি এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পোস্টারিং করেছেন। ওয়াহিদ সাদেকের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন হিসাব-নিকাশ চলছে।

এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আমির হোসেন দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে মরিয়া। তৃণমূলের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান থাকার পরও বারবার মনোনয়নবঞ্চিত এ নেতা এবার ছাড় দিতে নারাজ। পিছিয়ে নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ রফিক। তারাও এবার মনোনয়ন পেতে চান।

বর্তমান এমপি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, ‘জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি। আরও কাজ চলমান। এলাকার বিদ্যুৎ, রাস্তা, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন বলেন, তৃণমূলের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আছি। সংকটের সময়ও দলকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করেছি। দল যে প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাই করুক, আমি মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।

কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে আছি। আগেও মনোনয়ন চেয়েছি, পাইনি। এবারও মনোনয়ন চাইব।

৪ দলীয় জোটের জামায়াত নেতা মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় এ আসন বিএনপির জন্য উন্মুক্ত। সর্বশেষ নবম সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির আবুল হোসেন আজাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগের শেখ আবদুল ওহাবের কাছে তিনি পরাজিত হন।

শুধু ১৯৭৯ সালে একবার বিএনপির প্রার্থী গাজী এরশাদ আলী বিজয়ী হন। এরপর আর বিএনপি জয়ী হতে পারেনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। জোটের শরিক জামায়াত ও সংখ্যালঘু ভোটার কাছে টেনে আওয়ামী লীগের দুর্গে হানা দিতে চায় বিএনপি। সে ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীকে অবশ্যই ব্যক্তি ইমেজে সংখ্যালঘু ভোটার ও জোটের শরিক জামায়াতের ভোটারদের কাছে টানতে হবে।

তেমন প্রার্থী ছাড়া এ আসনে জয়ী হওয়া কঠিন হবে। ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী গাজী এরশাদ আলী এবং ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনও ব্যক্তি ইমেজ দিয়ে আওয়ামী লীগের দুর্গে জয়লাভ করেছিলেন বলে দাবি করছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ফলে এবার প্রার্থী বাছাইয়ে কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হবে বিএনপিকে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু বলেন, দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে আছি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে বিজয় উপহার দিতে পারব। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি। হিন্দু অধ্যুষিত এ আসনে ৫০-৬০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে। তাদের বড় অংশ আমার ব্যক্তি ইমেজে কাছে টানতে পারব।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আছি। কেশবপুরের মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে আছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হোসেন আজাদ বলেন, কেশবপুরের মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। দলের মনোনয়নের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। - যুগান্তর
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে