বুধবার, ০৩ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৩৪:৪৪

খুলে দেওয়া হলো দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতু

খুলে দেওয়া হলো দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতু

যশোর: অবশেষে খুলে দেওয়া হলো যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের বহু প্রতিক্ষিত ঝাঁপা বাওড়ে নির্মিত দেশের বৃহতম ভাসমান সেতু। যার ফলে ঝাঁপা গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ সহজ হয়েছে।

যশোরের জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দীন ফিতাকেটে ব্রিজটি উদ্ধোধন করেন৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওবায়দুর রহমান, ঝাঁপা ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু, চালুয়াহাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার, রাজগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ, রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি আবুল বাসারসহ স্থানীয় সুধীজন৷

নির্মানের জন্য মেহেদী হাসান টুটুলকে সভাপতি মনোনিত করে গঠিত কয়েছে সেতু বাস্তবায়ন কমিটি। কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক লিটন, সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক শাহাদাৎ হোসেন, কোষাদক্ষ মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুজ্জামান, সদস্য মাওলানা নুরুল হক, আবু মুছা, আক্তারুজ্জামান, শ্রী অসিম কুমার, আসাদুজ্জামান প্রমুখ৷

২০ হাজারেরও বেশি মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা ভেবেই সেচ্ছা শ্রমে এই ৫৬জন যুবকের ১০০০ ফুট ভাসমান সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেন৷ সেতুটি ভাসমান রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তেলের প্লাষ্টিক ড্রাম।

১০০০ফুট সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে ৮৩৯টি ড্রাম৷ যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ড্রামের মুখে থ্রেট টেফ দিয়ে আটকানো হয়েছে৷ ফ্রেম তৈরি করা হয়েছে লোহার এঙ্গেল দিয়ে। ফ্রেমের দুই পাশে দু’সারি ড্রাম দিয়ে পানিতে ভাসান হয়েছে সেতু৷ সেতুতে এঙ্গেল ও পাত ব্যবহার হয়েছে ২০টন৷ পাটাতনের সিট ব্যবহার হয়েছে ১৩টন৷

এ পর্যন্ত ব্যায়ের হিসাব জানতে চাইলে উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান  বলেন, সব মিলে খরচ প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা হয়েছে৷ পারাপারের বিষয়ে কোন টোল আদায় হবে কিনা জানতে তিনি বলেন, আগের নিয়মই থাকবে নৌকায় যেমন পারাপার হতো সেই ভাবেই পারাপার হবে৷

ঝাঁপা গ্রামের আসলাম শেখের কাছে সেতু নির্মাণের উপকারিতা সম্বন্ধ্যে জানতে চাইলে তিনি বললেন, নৌকায় পারাপারে অনেক সময় ডুবে গিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিতে পারেনি, অনেক কৃষি পণ্য পার করতে গিয়ে ডুবে নষ্ট হয়েছে, কেউ অসুস্থ হলে পার করতে সময়ের কারণে মৃত্যু হয়েছে, এ সমস্ত পরিস্থিতির থেকে পরিত্রাণ হবে বলে মনে করেন তিনি৷

কোমলপুরের ইউপি সদস্য আব্দুর গফুর বলেন, সব চেয়ে বড় কথা হল আসা যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক অবদান রাখবে এই ভাসমান সেতুটি৷ অনেক সময় দূর দুরান্ত থেকে ফিরতে রাত হলে পার হওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয়, ঘাটে নৌকা থাকে না, সেতুটি নির্মানের ফলে সব সমস্যার সমাধান হলো। তাছাড়া এলাকার উন্নয়নে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে এই সেতুটি।

এলাকার সচেতন মহলরা বলছেন, আজ পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধিরা ঝাঁপা গ্রামের মানুষের কথা ভাবেনি, নেয়নি কোন উদ্যোগ৷ ঝাঁপাবাসী স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত৷ তাই তারা নিজ উদ্যোগেই নির্মাণ করছে দেশের দীর্ঘতম স্বপ্নের ভাসমান সেতু৷

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও বৃহত্তম ঝাঁপা গ্রামের ২০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাদের কষ্টের কথা ভাবেনি কোন জনপ্রতিনিধি৷ কিন্তু ঝাঁপা গ্রামের স্কুল শিক্ষক আসাদুজ্জামান নিজ উদ্যোগে কয়েক বছর ধরে জল্পনা কল্পনা করে ২০১৭ সালের ১৯শে জানুয়ারী এলাকার কিছু যুবককে নিয়ে একটি মিটিং করে ভাসমান সেতু নির্মানের পরিকল্পনা করেন৷ ৫৬ জন যুবক একত্রিত হয়ে গ্রামবাসীর অর্থায়নে শুরু করে সেতু নির্মান কাজ৷
৩ জানুয়ারি ২০১৮/এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে