শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৩৮:১২

আওয়ামী লীগে কোন্দল, বিএনপিতে ঠাণ্ডা লড়াই

আওয়ামী লীগে কোন্দল, বিএনপিতে ঠাণ্ডা লড়াই

রাশিদুল ইসলাম, খুলনা থেকে : আগামী নির্বাচনের জন্য প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন খুলনা-৪  আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রূপসা দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বড় দু’টি দলেরই মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতাসহ প্রভাবশালী একাধিক প্রার্থী।

এই আসনে অভ্যন্তরীণ বিরোধে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। বিএনপিতেও রয়েছে ঠাণ্ডা লড়াই। এ আসনে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার কমপক্ষে ৬ জন প্রার্থী এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।

বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের দুই প্রার্থী থাকায় তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলের ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসন। বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোল্লা জালাল উদ্দিন মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শাহ কামাল তাজ। মোল্লা জালাল নির্বাচিত হওয়ার পর তার প্রতিপক্ষ এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার অনুসারিদের উপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক হুইপ এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা। বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। প্রতিপক্ষের অভিযোগ, তিনি নির্বাচিত হয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ ও মোল্লা জালালের অনুসারীদের উপর হামলা-মামলা নির্যাতন চলে।

এমনকি তার অনুসারীদের হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সেনহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী আবদুল হালিমসহ একাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বর্তমান এমপি’র লোকজনের হামলা-মামলায় এলাকা ছাড়া।

আগামী নির্বাচনে এ আসনে আবারও মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা। জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট ফরিদ আহম্মেদ বলেন, বর্তমান এমপি মোস্তফা রশিদী সুজাকে দল মনোনয়ন দিলে তিনি আবার প্রার্থী হবেন। এ ছাড়া জেলা যু্‌বলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ নেতা মো. কামরুজ্জামান জামালও দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন।

ইতিমধ্যেই তিনটি উপজেলায় পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। অনুসারীদের নিয়ে গ্রামে-গ্রামে শো-ডাউন দিচ্ছেন। জামাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদের আশীর্বাদ নিয়ে জোরেশোরেই মাঠে নেমেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, দল ক্ষমতায় থাকার পরেও দলীয় নেতাকর্মীরা বার বার হামলা-মামলায় শিকার হয়েছেন। তখন নেতাকর্মীদের পাশে এসে দলকে সংগঠিত করেছেন কামরুজ্জামান জামাল। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবি জামালই এবার দলের প্রার্থী হবেন। প্রার্থিতার দৌড়ে রয়েছেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী।

এদিকে সংখ্যালঘু কমিউনিটির নেতা খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মল্লিক সুধাংশু গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও সনাতন সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনটি কেন্দ্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু  নেতা হিসাবে তিনি পাবেন বলে তার অনুসারীরা দাবি করেন।

মল্লিক সুধাংশু বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সারা দেশে ৬৪টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। খুলনা তার মধ্যে অন্যতম। আমার বিশ্বাস আমাদের অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিবেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের নামও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। মোস্তফা রশিদী সুজার অসুস্থার কারণে মনোনয়ন না পেলে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে তার অনুসারীরা দাবি করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিন ও দলীয় মনোনয়ন চাবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

কামরুজ্জামান জামাল বলেন, রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচন করার আশায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও সরকারের সফলতা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দলের পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দিবেন। তার ঘোষণার আলোকেই আমার বিশ্বাস আমি মনোনয়ন পাবো।

বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল ও কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন হেলাল। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র  সবুজ সংকেত পেয়ে ঘর গোছাচ্ছেন তিনি। খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাসচিব ফকরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে তিন উপজেলার নেতাকর্মীরা খুলনা-৪ আসনে আজিজুল বারী হেলালকে প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান। হেলাল ইতিমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় ঈদ পুনর্মিলনী ও তিন থানার কর্মী সম্মেলন করেছেন। এরপর থেকেই স্থানীয় ছাত্রদল যুবদল তার পক্ষে পোস্টার ও ব্যানার টাঙিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে।

তবে শাহ্‌ কামাল তাজও বসে নেই। তিনিও কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডে মনোনয়ন পেতে লভিং চালাচ্ছেন। খুলনা জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আবু হোসেন বাবু বলেন, বর্তমানে রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা এলাকার নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের  হামলা-মামলায় ঘর ছাড়া। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যাকেই মনোনয়ন দেবে নেতাকর্মীরা তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া ও সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে। আগামীতে সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যেই দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নির্বাচন খুলনা থেকে করার জন্য  প্রস্তুতি নিতে বলেছে। তাদের নির্দেশেই আমার জন্মভূমি রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদায় নির্বাচনের জন্য প্রস্ততি নিয়েছি।

এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মোক্তার হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাদিউজ্জামান ও জেলা যুবসংহতির সভাপতি ডা. সৈয়দ আবুল কাশেম। ডা. আবুল কাশেম দাবি করে বলেন, আগামী নির্বাচনে তাকেই জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে। ইতিমধ্যেই তিনি নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। চরমোনাই পীর সমর্থিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে আলহাজ মাওলানা ইউনুচ আহমাদও প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।

উলেখ্য, এ আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা। ২০০১ সালের নির্বাচনে এমপি হন মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা জালাল উদ্দিন এমপি হন।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে