শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭, ১০:২৯:১৬

জাল ফেললেই শুধু ইলিশ আর ইলিশ, ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে

জাল ফেললেই শুধু ইলিশ আর ইলিশ, ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে

পটুয়াখালী: কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও জেলেরা স্বাচ্ছন্দ্যে ইলিশ আহরণ করতে পারছেন না। ভয়াবহ বিদ্যুৎবিভ্রাটে মাছ সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। ইলিশের মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একবার মাছ শিকার করে তীরে আসলে বরফের জন্য তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। উপরন্তু তিন গুণ দামে বরফের ক্যান (সম্পূর্ণ ভরাট নয়) কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বরফ উৎপাদনে ধস নেমেছে। চাহিদার এক দশমাংশ বরফও উৎপাদন হচ্ছে না।

ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ইলিশের মোকাম আলীপুর-মহিপুরে ভরা মওসুমে ইলিশ ব্যবসায়ে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বরফের অপেক্ষায় শিববাড়ীয়া নদীর দু’পাড় আলীপুর ও মহিপুরে শতশত ট্রলার ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। সাগর তেমন উত্তাল নয়। মাছ শিকারের পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে। নেই জলদস্যুদের তাণ্ডব। তারপরও শুধুমাত্র বিদ্যুৎবিভ্রাটে বরফ উৎপাদনে ধস নামায় এমন সঙ্কটে পড়েছেন জেলে ও এ পেশাসংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ব্যবসায়ী।

স্থানীয় জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জাল নিয়ে সাগরে গেলেই ট্রলার বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফেরা যায়। শুধু বরফের অভাবে শতশত ট্রলার ঘাটে নোঙর করে আছে। একই দশা ইলিশের পাইকারী ব্যবসায়ী গোপালগঞ্জের সুধারাম বাবুর। প্রতি বছর তিনি মহিপুর ও আলীপুর থেকে ইলিশ কেনেন। বরফ সঙ্কটে ভরা মওসুমে এবার নাজেহাল অবস্থা। বিদ্যুতের লোডশেডিং না কমলে এ বছরের মতো ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি। তার মতো শতাধিক পাইকার এমন সমস্যায় পড়েছেন।

মহিপুর আড়তমালিক আবদুল জলিল হাওলাদার জানান, অন্য জেলা থেকে দিনে কমপক্ষে ৫০ ট্রাক বরফ এনে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। এক ক্যান বরফ যেখানে এক থেকে দেড় শ’ টাকায় কেনার কথা, সেখানে এখন ট্রাক ভাড়াসহ খরচ পড়ছে প্রতি ক্যানে প্রায় পাঁচ শ’ টাকা। মজনু গাজী জানান, অন্তত দুই হাজার ট্রলার বরফের অভাবে সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারেনি। সোমবার কথা হয় ব্যবসায়ী ও আড়তমালিকদের সাথে। সকলের অভিযোগ, বিদ্যুৎ এসে আবার কয়েক মিনিটের মধ্যে চলে যায়। বরফকল মালিকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

জেলেরা জানান, বর্তমানে ৫০০-৭০০ গ্রাম সাইজের অসংখ্য ইলিশ সাগরে ধরা পড়ছে। বরফ সঙ্কটে সংরক্ষণের অভাবে তারা ৩৫ হাজার টাকা মণের ইলিশ ২১-২২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

মহিপুর আড়তমালিক সমিতির সভাপতি ফজলু গাজী জানান, গত এক মাসে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে ঠিকমতো বরফ উৎপাদন না হওয়ায় প্রত্যেকটি মাছ ধরার ট্রলারে অন্তত ১০ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। আড়তদারদের অন্তত ২০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এসব টাকা দাদনে নেয়া। তাই এখন সবাই বিপাকে পড়েছেন।

আমেনা আইস প্লান্টের মালিক আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ২৪ ঘণ্টার দুই ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বলতে গেলে বিদ্যুতের অভাবে বরফ উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

কলাপাড়া কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট সূত্র জানায়, সাগরে তাদের টহল অব্যাহত রয়েছে। তবে অন্য বছরের চেয়ে জলদস্যুদের আক্রমণ অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডা: হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের মধ্যে চর জাগায় বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আগের চেয়ে এখন ইলিশ মাছ একটু কমে গেছে। কিন্তু প্রজনন মওসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় এখন ভরা মওসুমে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে