সোমবার, ০৭ মে, ২০১৮, ১১:২৮:১১

মায়ের সম্মান রাখলেন পিরোজপুরের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া মিম

মায়ের সম্মান রাখলেন পিরোজপুরের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া মিম

পিরোজপুর থেকে: এ যেন এক স্বপ্ন জয়ের নিরন্তর বাসনা। অর্ধাহার-অনাহার ছিল নিয়মিত ঘটনা। খেয়ে না খেয়ে পড়তে হয়েছে তাকে। মায়ের টিউশনির টাকায় পড়াশোনা করে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে জান্নাতুল মাওয়া মিম।

আগামীর সোনালি স্বপ্ন আজ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দিতে পারবে বলে মনে হয় না মিমের। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মিমের আগামীর পড়াশোনা নিয়ে অন্ধকার দেখছেন বাবা-মা। মেয়ের আগামীর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন কি-না তা ভেবে কাঁদছেন মিমের মা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিমের বাবা স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। মা সেলাইয়ের কাজ করেন। পাশাপাশি অন্যের বাড়িতে টিউশনি করে মেয়ের পড়ালেখার খরচ জোগান দিতেন। মা-বাবার আয়ে সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করা অনেক কঠিন। প্রায়ই ওদের ঘরে খাবার থাকে না। অনেক সময় না খেয়ে রাতে পড়তে বসতে হতো মিমকে।

এমন সব বাধা পেরিয়ে পিরোজপুরের কাউখালি উপজেলার কাউখালি এসবি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে জান্নাতুল মাওয়া মিম। এর আগে মিম পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল।

উপজেলার আমরাজুরি গ্রামের মারুফা-গফুর দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে মিম দ্বিতীয়। তার বাবা মো. গফুর স্থানীয় একটি পানজেগানা মসজিদের ইমাম। মা মারুফা ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করেন। পাশাপাশি অন্যের বাড়িতে টিউশনি করান। এ আয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় কঠিন বলে কেঁদে ফেলেন মিমের মা মারুফা।

তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে মেয়েকে পড়িয়েছি। টিউশনির টাকা জমা করে মেয়ের পরীক্ষার ফি জমা দিয়েছি। সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে। আমার সম্মান রেখেছে মিম। কিন্তু আগামীতে মেয়েকে পড়াতে পারবো কি-না জানি না। কারণ সংসার চালাতেই কষ্ট হয়।

মেয়ের ফলাফলে বাবা মো. গফুর অনেক খুশি। সেইসঙ্গে মিমের আগামীর পড়ালেখা নিয়ে চিন্তিত তিনি। তাই মিমের লেখাপড়ার সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাবা গফুর।

কাউখালি উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আ. লতিফ খসরু বলেন, সহায়তা পেলে মিম বহুদূর যাবে। সফলতার খবরে আমি মিমের বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুলের শুভেচ্ছা ও মিষ্টিমুখ করাই। আমরা তার পাশে আছি এবং থাকবো।

এসএসসির ফলাফল ও আগামীর পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলে মিম জানায়, আমি চিকিৎসক হতে চাই। আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখার খরচ জোগান দিয়েছেন। সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছি। কিন্তু সামনে পড়তে পারবো কি-না জানি না। বাবা-মা পড়ালেখার খরচ চালাতে পারবেন বলে মনে হয় না। যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে আমি সামনে পড়াশোনা করতে পারবো। তা না হলে কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে