বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ০১:১২:৪৯

আত্মসমর্পণ করা ৩ জঙ্গির অন্ধকার জীবনের গল্প

আত্মসমর্পণ করা ৩ জঙ্গির অন্ধকার জীবনের গল্প

জাভেদ ইকবাল : নিষিদ্ধ জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের ৩ সদস্য মাসুদ রানা, হাফিজুর রহমান এবং আখতারুজ্জামান রংপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে।

গতকাল রংপুর শীতল কমিউনিটি সেন্টারে জঙ্গিবাদ বিরোধী এক সুধি সমাবেশে দিনাজপুরের ঘোড়ারঘাট এলাকার জঙ্গি মাসুদ রানা তার বিপদগামী জীবনের কাহিনী তুলে ধরে বলেন, সে রামেশ্বর দারুল হুদা ফাযিল মাদরাসায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার সহযোগী হাফিজুর রহমান কলাবাড়ি দাখিল মাদরসার ১০ম শ্রেণির ছাত্র ও আখতারুজ্জামান নারায়ণপুর মেজবাহুল উলুম কওমী ও হাফিজিয়া মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র।

শোলাকিয়া হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গি শফিউলের মাধ্যমে জঙ্গি পথে পা বাড়ায়। তারা মাদরাসার পিয়ন  আরিফুল দ্বারা রিক্রুট হয়। আরিফুল প্রাথমিক পর্যায়ে তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করে। এরপর শরীর চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষক শাহাবুদ্দিন এবং শফিউলের সঙ্গে চর এলাকায় প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। আরিফুল তাদেরকে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতো। অতিরিক্ত মাত্রায় দেখাশোনা এবং মুখরোচক গল্প বলে আকৃষ্ট করতো। ফলে তারা আরিফুলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।

আরিফুলের তত্ত্বাবধানে মূল প্রশিক্ষণ শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, জলসায় যাওয়া, উগ্রবাদী বিভিন্ন বই-পুস্তক অধ্যায়ন, বিভিন্ন অডিও ভিডিও লেকচারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শেষে ঘোড়াঘাটের গুড়াহাটির একটি মেসে থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ, অনুশীলন, বিভিন্ন আধ্যাত্মিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে শফিউল ও শাহাবুদ্দিনের মাধ্যমে নুন্দারঘাটে নদীর চরে শারীরিক প্রশিক্ষণ দেয়।

ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, বিধর্মীদের হত্যা করলে বেহেস্ত পাওয়া যাবে। এরপর তাদেরকে দেয়া হয় নাশকতার টার্গেট। এভাবেই জড়িয়ে পড়ে জঙ্গি সংগঠনে। কিন্তু সম্প্রতিকালে হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় দেশ ও বিদেশে সমালোচনার ঝড় দেখে তারা বুঝতে পারে তারা অপরাধী দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর পরিণাম ভয়াবহ।

মনের মধ্যে অনুতাপ ও অনুশোচনা আসে। ফলে আত্মগোপনে চলে যায়। বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণায় ও সম্প্রতি সময়ে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ তাদের ভুল পথ থেকে ফিরে আসার পথ তৈরি করে দেয়। তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলাপ করে আত্মসমর্পণে উদ্যোগ নেয় এবং র‌্যাবের কাছে আসে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার সাধারণ মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। জঙ্গিদের নির্মূল করা হচ্ছে। এদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হতে পারে না। জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও অর্থ যোগানদাতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যাদের এখনো বোঝার বয়স হয়নি তাদের ব্রেইনওয়াশ করে জঙ্গি বানানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে দেশের সকল মানুষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, যারা এখন এসব ধ্বংসাত্মক নাশকতার কাজে জড়িত রয়েছে সেসব জেএমবিদের দ্রুত  আত্মসমর্পণের আহ্বান করছি। আত্মসমর্পণ না করলে তাদের রক্ষা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নজরদারি করছে। মন্ত্রী বলেন,  এখনো যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়।  এরা যদি আত্মসমর্পণ না করে তাহলে অচিরেই এদের ধ্বংস করে দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, দেশকে অকার্যকর করে জঙ্গিরা এদেশকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার মতো  সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাতে চায়। কিন্তু এদেশে এটা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। কারণ এদেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের ডাক দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের আলেম ওলামা,  শিক্ষক ছাত্র থেকে শুরু করে সব শ্রেণি পেশার মানুষ এক হয়েছে। তাই জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই নিষিদ্ধ সংগঠন তিন জেএমবি জঙ্গি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্থনকারীরা হলো দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার লোহারবান এলাকার মন্দেল হোসেনের ছেলে হাফেজ মাসুদ রানা (১৮), একই উপজেলার বিন্যাগাড়ী এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমান(১৬) এবং ঘোড়াঘাট উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের সারওয়ার হোসেনের ছেলে আখতারুজ্জামান (১৮)।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আত্মসমর্পণকারী তিন জঙ্গিকে পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন। পরে তাদের র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়। এমজমিন
২৪ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে