রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:৫০:০৬

রংপুরে পুরোদমে বইছে নির্বাচনী হাওয়া, লড়াই হবে ত্রিমুখী

রংপুরে পুরোদমে বইছে নির্বাচনী হাওয়া, লড়াই হবে ত্রিমুখী

রংপুর থেকে : রংপুর নগরীতে এখন পুরোদমে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু গত পাঁচ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে যে উন্নয়ন করেছেন তা পুঁজি করেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায় এতদিন ভোটের হিসাব-নিকাশ ছিল ভিন্ন। কিন্তু দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু গতকাল দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় ভিন্ন আমেজ বিরাজ করছে ভোটের মাঠে।

ফলে ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী হিসেবে কাওসার জামান বাবলা নির্বাচনী মাঠ নিজের অনুকূলে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জোটের ভোটই বাবলার শক্ত ভিত। অপরদিকে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ইমেজ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী সফলভাবে পার হতে চান দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এবার দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। তাই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি কারও একার পক্ষে সহজেই ফল ঘরে তোলা সম্ভব হবে না। ফলে লড়াই হবে ত্রিমুখী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘এবার মেয়র পদে ত্রিমুখী লড়াই হলেও সরকারের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য মানুষ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারে।’
 
বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রংপুর জেলা শাখার সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মিয়া মনে করেন, ‘মেয়র পদে মূলত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’ আর নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ের পান দোকানি আশরাফুল আলম চিনু বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গলের মধ্যে তুমুল ফাইট হবে। ’

উন্নয়নের পুঁজি ঝন্টুর : সাধারণ ভোটারদের মতে, সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনী লড়াইয়ে বেশ অভিজ্ঞ। তিনি রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য ও সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। তার রাজনৈতিক জীবনে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন ও কাজের অভিজ্ঞতা প্রচুর।

আর ৬০ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট ‘নৌকা প্রতীকের’ জয়ের চালিকাশক্তি বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া তার ব্যক্তিগত ভোটব্যাংক রয়েছে। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে নগরীর ১৬ কিলোমিটার প্রধান সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯০ কিলোমিটার নতুন নর্দমা নির্মাণ এবং ৮ কিলোমিটার পুরনো নর্দমা সংস্কার করা হয়েছে। নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চারটি বহুতল নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ১১টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। আটতলা নগর ভবনের তিনতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধ করার ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। পাঁচ বছরে সিটির উন্নয়নে ৪৫০ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। যেসব কাজ চলমান সেগুলো সম্পন্ন হলে সিটি করপোরেশনের কোনো রাস্তা ভাঙাচোরা থাকবে না।  

এ ব্যাপারে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, প্রথম মেয়র হয়ে পাঁচ বছর সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ অনুযায়ী সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।

জোটের ভোটই শক্ত ভিত বাবলার : কাওসার জামান বাবলারও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত নির্বাচনে পরাজিত হলেও সম্মানজনক ভোট পেয়েছিলেন। এবার দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে ভোট করছেন। বিএনপির সঙ্গে আছে আরও ১৯টি রাজনৈতিক দল। তাদের পৃথক কোনো প্রার্থী নেই। ফলে বাবলাই এখন ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী।

জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় নেতা-কর্মীরা আরও বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, বাবলা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী হওয়ায় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

এ ছাড়া রংপুরে অবাঙালি ভোটার রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। এই ভোটারদের সিংহভাগ ভোট বিএনপি প্রার্থী পাবেন বলে তারা আশাবাদী। ৬০ হাজার হিন্দু ভোটারের মধ্যেও ভাগ বসানোর কৌশল করছেন তারা। কাওসার জামান বাবলা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষের জয় হবে। সে আশা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। কমিশন যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে তাহলে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত।

মোস্তফার ভরসা এরশাদের ইমেজ : জাতীয় পার্টির দুর্গে হানা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর জন্য জয় নিশ্চিত করাটা অনেকটাই দুরূহ হবে বলে মনে করছেন জাপা নেতা-কর্মীরা। নগরীর বর্ধিত এলাকার ভোটারদের মাঝে ‘এরশাদ-লাঙ্গল’ ইমেজ জাতীয় পার্টির ভোটের মূল শক্তি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একক প্রার্থী নিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও জাতীয় পার্টিতে বিদ্রোহের ঘণ্টা অব্যাহত রয়েছে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারই ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ও জাপার সাবেক নেতা আবদুর রউফ মানিক মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রচারণা অব্যাহত রাখায় ঘরের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। জাপার দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এর আগে রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোস্তফা ও মানিক মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট পেয়ে মোস্তফা ছিলেন দ্বিতীয় অবস্থানে। আর ৩৭ হাজার ২০৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন মানিক। দুজনের ভোট এক করেলে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩। সেখানে ঝন্টু ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। মোস্তফা এককভাবে ভোট করলে ভোটের সংখ্যা আরও বাড়ত বলে মনে করেন দলটির নেতারা। এবারও মোস্তফার বিপক্ষে মেয়র পদে লড়ছেন মানিক ও আসিফ। তাই বিদ্রোহী দুই প্রার্থী মোস্তফার বিজয়ের পথে প্রধান বাধা হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, গত নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা কোনো ফ্যাক্টর হবে না। লাঙ্গলের পক্ষে ভোট বিপ্লব হবে। শাহরিয়ার আসিফ দাবি করেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে কাজ করছে। দল বহিষ্কার করলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের জন্যই নির্বাচনী মাঠ ছাড়ব না। আর আবদুর রউফ মানিক বলেন, নির্বাচন করার জন্যই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। -বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে