শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:৫৮:০১

মিসবাহ সিরাজের ঘোষণায় নির্বাক অর্থমন্ত্রী মুহিত

মিসবাহ সিরাজের ঘোষণায় নির্বাক অর্থমন্ত্রী মুহিত

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : এতদিন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ কথা বলছিলেন আড়ালে-আবডালে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মুখোমুখি হয়ে কখনো তার ইচ্ছার কথা জানাননি। কিন্তু আড়মোড়া ভেঙে ফেললেন মিসবাহ সিরাজ নিজেই । এবার অর্থমন্ত্রীর সামনেই নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করলেন।

মিসবাহ বললেন- সিলেট-১ আসনে আগামী নির্বাচনে লড়তে চান তিনি। আর মঞ্চে বসা অর্থমন্ত্রী মিসবাহর বক্তব্য মনোযোগসহ শুনলেন। তবে- কিছু বললেন না। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। সেই থেকে সিলেটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

গেল বছর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে তৃতীয়বারের মতো মিসবাহ সিরাজকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। এবার আর তিনি সিলেটে রইলেন না। তাকে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক নেতা করা হয়েছে। এরপরও সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতি মিসবাহ সিরাজ ‘ফ্যাক্টর’। সিলেট আওয়ামী লীগের সব আয়োজনে মিসবাহ সিরাজের উপস্থিতি রয়েছে সরব। সিলেট বিভাগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সঙ্গে রয়েছে চমৎকার সম্পর্ক।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এমনটি তিনি আগে কখনো প্রকাশ্য ঘোষণা দেননি। এবার তৃতীয়বারের মতো সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি এ ব্যাপারে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। গেল কয়েক মাস ধরে যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। কখনো তিনি বলছেন মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসন থেকে প্রার্থী হবেন, আবার বলছেন সিলেট-৩ আসন থেকে প্রার্থী হবেন। এ নিয়ে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে নিয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন কর্মী সমর্থকরা।

বুধবার সব প্রশ্নের উত্তর খোলাসা করলেন মিসবাহ। আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগীয় তৃণমূল সম্মেলনে তিনি যখন বক্তৃতা দিতে উঠেন তখন মঞ্চে বসা ছিলেন সিলেট-১ আসনের টানা দুই বারের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখনো আসেননি। এমন সময় অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের অর্থমন্ত্রী, সিলেট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত বয়সের কারণে প্রার্থী হবেন না। তাই আমি এ আসনে প্রার্থী হবো। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’

মিসবাহ সিরাজের বক্তব্যের সময় মঞ্চে নির্বিকার ভাবে বসে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মিসবাহ সিরাজের বক্তব্যের সময় মাঠে থাকা তার অনুসারীরা হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। পরে বক্তৃতা দিতে এসেও অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি। বেশি সময় বক্তব্যও রাখেননি। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে সাবেক স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ সালে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। পরাজিত হলেও এরপর থেকে সিলেটের নির্বাচনী মাঠে তিনি সক্রিয় ছিলেন।

ফল স্বরূপ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এম সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে সিলেট-১ আসনে জয়লাভ করেন। এরপর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় দফা তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার ঘোষণার খবর জানেন সিলেটের ভোটার থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীও। এই অবস্থায় সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নাম শোনা যাচ্ছিল। কামরানও নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সিটি নির্বাচন। ওই নির্বাচনে কামরান প্রার্থী হয়ে পরাজয় বরণের পর থেকে চুপসে গেছেন।

কামরানের অনুসারীরা এখনও বিশ্বাস করেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই সিটি নির্বাচনে হেরেছিলেন কামরান। এ কারণে কামরানের অনুসারীরা এখন রাজনীতিতে আরো বেশি কৌশলী হয়ে উঠেছেন। এই অবস্থায় প্রায় বছরখানেক জাতিসংঘ মিশন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় জাতিসংঘ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। দেশে ফিরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও অভিষিক্ত হন একে আবদুল মোমেন।

গেল এক বছর তিনি বড় ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে সিলেটে ‘ওয়ার্মআপ’ করেছেন। এখন সিলেটে সক্রিয় রয়েছেন একে আবদুল মোমেন। মাসে ২-৩ বার তিনি সিলেটে এলেই ব্যস্ত সময় কাটান। ইতিমধ্যে সিলেটের উন্নয়ন নিয়েও কাজ শুরু করেছেন। তবে নির্বাচন করবেন কিনা- সে ব্যাপারে তার কিংবা পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি। নতুন করে ড. একে আবদুল মোমেনকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এমজমিন
২৪ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে