শনিবার, ০৭ এপ্রিল, ২০১৮, ০৫:৫৮:৫৫

'আম্মু আর ভাইয়া তো ঘুমাই রইছে'

'আম্মু আর ভাইয়া তো ঘুমাই রইছে'

ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট: মাত্র সাড়ে চার বছর বয়স। যে সময় মায়ের কোলে স্নেহের ছায়ায় ঘুমিয়ে থাকার কথা রাইসার, সে সময় তার জীবনে ঘটে গেছে ভয়াবহ একটি ঘটনা। চোখের সামনে মা ও ভাইকে খুন হতে দেখেছে সে। তবে মা-ভাই যে আর কখনই ফিরবে না তার কাছে, সেটিও এখনও ভালো করে বুঝতে পারছে না।

সে এখনও ভাবছে যে, তার মা-ভাই ঘুমিয়ে আছে। মাঝেমধ্যে বলেও সে, 'আম্মু আর ভাইয়া তো ঘুমাই রইছে।' তাই সে মনের আনন্দে খেলছে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। সেখানে তাকে দেখাশোনা করছেন পুলিশ সদস্যরা। মাঝেমধ্যে সঙ্গ দেন তার মামা জাকির হোসেন।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সবাই তাকে আদর করে 'রাইসা মামণি' বলে ডাকেন। সিলেট নগরীর মিরাবাজার খারপাড়া এলাকায় মা ও ভাইয়ের লাশের পাশ থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া রাইসার দিন কাটে এখন এই ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার সূত্রে জানা যায়, মাঝেমধ্যে পুলিশের লোকজন তদন্তের কারণে তার সঙ্গে কথা বললে তখনই মায়ের কথা জানতে চায় সে। আবার মামা বা পরিবারের কেউ এলে মা ও ভাইয়ের কথা জানতে চায়। এ ছাড়া বাকি সময় খেলায় ব্যস্ত থাকে রাইসা। গত ১ এপ্রিল নগরীর খারপাড়া এলাকা থেকে তার মা ও ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই জোড়া খুন মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী রাইসা।

গতকাল শুক্রবার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, রাইসা একটি গাড়ি নিয়ে খেলছে। হাসিখুশি রাইসা যখন তার গলা একটু উঁচু করছিল, তখনই দেখা যাচ্ছিল তার গলায় আঘাতের চিহ্ন। স্পষ্টই বোঝা যায়, এই শিশুটিকেও সেদিন খুন করতে চেয়েছিল ঘাতকরা। মৃত ভেবে তাকে ফেলে রেখেছিল।

অথচ ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় রাইসা। ঘটনার পর মা ও ভাইয়ের লাশের সঙ্গে ছিল টানা দু'দিন। তখন দুটি লাশেই পচন ধরেছিল। অথচ কিছুই বুঝতে পারছিল না সে। দরজা খোলার পর বিকট গন্ধে যখন সবাই নাকে রুমাল চেপে ধরেন, তখন রাইসা হতবাক হয়ে দেখে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের।

গত ৩০ ও ৩১ মার্চ বন্ধ ছিল রাইসার মা রোকেয়া বেগমের মোবাইল। মোবাইলে বোনের খোঁজ না পেয়ে ভাই জাকির হোসেন ছুটে আসেন খারপাড়া বোনের বাসায়। বাসার জানালা দিয়ে দেখেন, বোনের নিথর দেহ পড়ে আছে। আর পাশেই কাঁদছে রাইসা।

এরপর পুলিশ এসে দুই লাশের পাশে বসে থাকা রাইসাকে উদ্ধার করে। তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাকে আনা হয় কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে।

কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন বলেন, রাইসাকে খেলার জন্য অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে, যাতে সে ভুলে থাকতে পারে বীভৎস সেই ঘটনার কথা। পুলিশ সদস্যরা তাকে সব সময় সঙ্গ দিচ্ছেন। সে সুস্থ আছে বলেও তিনি জানান।-সমকাল
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে