মঙ্গলবার, ০১ আগস্ট, ২০১৭, ১০:২০:১৪

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তরুণ-তরুণীর আত্মহত্যায় এলাকায় চাঞ্জল্য সৃষ্টি

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তরুণ-তরুণীর আত্মহত্যায় এলাকায় চাঞ্জল্য সৃষ্টি

ঠাকুরগাঁও থেকে : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে গত তিনদিনে এক কিশোরীর পর এবার আরেক কিশোর আত্মহত্যা করেছে। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।

তবে এসব আত্মহত্যার কারণ হিসেবে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে দায়ী করছেন। গত ২৯ জুলাই প্রত্যাশা আক্তার ঘুমের ওষুধ খেয়ে মৃত্যুর পর আজ মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়া এলাকায় তন্ময় তানজিম (২৩) নামে এক যুবক মৃত্যুর আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

দুপুর ১২টায় তার বেডরুম থেকে গলায় ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তানজিম শহরের গোয়ালপাড়া এলাকায় ওহিদুল ইসলামের ছেলে। তানজিম আত্মহত্যা করার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সোমবার রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসে তানজিম লেখেন, ‘আমি তোমাকে অনেক মিস করছি, তুমি জানতা আমি একটু পাগল টাইপের, তুমি তো মানিয়ে নিতে পারতা। তোমার নাম্বারটাও আমি রেগে ডিলিট করে দেই, কিন্তু আমি সত্যি তোমাকে অনেক মিস করছি।’

ওইদিনই বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে তানজিম তার ফেসবুকে এক সংবাদকর্মীর টাইম লাইন থেকে প্রত্যাশার মৃত্যু নিয়ে একটি প্রতিবেদনের কিছু কথা কপি করে শেষ স্ট্যাটাসটি দিয়েছিল, ২২ জুলাই দিনটি ছিল শনিবার।

সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “প্রত্যাশা আক্তার” তার নিজ টাইম লাইনে লিখেছিলেন, “সব বলা হয় তো শেষ হয় না।।। অবশেষে শেষ নিঃশ্বাস” (কেউ কমেন্ট করবেন না প্লিস)। এরপরই সে প্রায় ৪০টি ঘুমের ওষুধ খায় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে গত ২৯ জুলাই রোববার এ ঘটনার পর মৃত প্রত্যাশাকে নিয়ে ফেসবুকের তার বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন মন্তব্য করছেন, যা ভাইরালে পরিণত হয়েছে। অনেকে প্রত্যাশার মৃত্যুর আগের স্ট্যাটাসটিতে মন্তব্য করেছেন। অনেকে আবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পর তার আত্মার শান্তি কামনা করে নানা কথা লিখেছেন। অনেকেই প্রত্যাশা আক্তারের মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়েছেন।

তানজিমের ফেসবুকের টাইম লাইন সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও শহরের কলেজপাড়া এলাকার প্রত্যাশা আক্তারের (২৯ জুলাই আত্মহত্যা করেছে) সঙ্গে ভাইবোনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা প্রায় এক বছর ধরে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করত।

২৯ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন প্রত্যাশা নামে এক তরুণী। ফেসবুকে পাতানো বোনের মৃত্যুতে হতাশ হয়ে পড়েন তন্ময় তানজিম। পরে জানাজা শেষে প্রত্যাশার মরদেহ কবরে নিজ হাতে দাফন করেন তানজিম ও তার বন্ধুরা।

এরপর থেকে তানজিম তার পাতানো বোনের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। ফেসবুকে প্রত্যাশা আক্তারের ছবিসহ অনেকেই সমবেদনা জানালে তানজিম তার টাইম লাইনে ছবি প্রকাশ করতে নিষেধ করে লিখেছিলেন, মানে নিতে পারতেছি না। বিশ্বাস করতে পারতেছি না। চিৎকার দিয়ে কানতেও পারতেছি...।

তানজিমের বাবা ওহিদুল ইসলাম জানান, দুদিন বাসার রুম থেকে বের হওয়া ও খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল সে পাতানো বোনের মৃত্যুর শোকের কারণে। তানজিম আবেগের কারণে শেষ পর্যন্ত গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে ভাবতেই পারছি না।

মঙ্গলবার বাদ আসর শহরের সেনুয়া পুরাতন গোরস্থানে জানাজা শেষে তানজিমের লাশ দাফন করা হয়। ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যার কথা শুনেছি। পরিবারের অভিযোগ না থাকায় আইনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে