শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৮:৪২:০৩

বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি?

বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর ফল দেখে শিক্ষার্থীদের হাসি-তিনজন মেয়ে শিক্ষার্থীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখা যাচ্ছে এখানে। কিন্তু সব ছবির মধ্যে দেখার বিষয় হলো স্কটল্যান্ডে এ-লেভেলে পড়ালেখায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ফলাফল বেশ ভালো হয়। আর এ-লেভেল নয়, শিক্ষাক্ষেত্রের সব স্তরেই মেয়েরা ভালো করছে।

চলতি বছর ৮০ শতাংশ মেয়ে এ লেভেলে এ-প্লাস পেয়েছে, যেখানে ৭৫ শতাংশ ছেলের এমন ফল করেছে।

আর এ বছর যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের ফরম পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে আবেদনকারী মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬ শতাংশ বেশী।

ইউনিভার্সিটি এন্ড কলেজ এডমিশন সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী ম্যারি কার্নক কুক এই বিষয়টি নিয়ে খুব চিন্তিত। ছেলেদের ভবিষ্যত নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি এবং সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন যেন এ বিষয়ে কোনও সমাধান বের করা হয়।

মিস কুক বলেন, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এক দশকের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দৃশ্যপট বদলে যাবে। এখন যেমন ধনী ও গরীবের জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করা হয়, ভবিষ্যতে দেখা যাবে ছেলে ও মেয়েদের ভর্তির বিষয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করতে হবে, হয়তো আলাদা কোটা তৈরি করতে হবে।

কেন এ ধরনের বৈসাদৃশ্য তৈরি হলো?

যখন কিশোর-কিশোরীরা সিক্সথ লেভেল বা ষষ্ঠ শ্রেণী পার করছে তখনই দেখা যাচ্ছে যে মেয়েদের ফল তুলনামুলক ভালো হচ্ছে।

গত বছরে এ-লেভেল ৫৫ শতাংশ ছাত্রী অংশ নিচ্ছে এবং ৪৫ শতাংশ ছাত্র অংশ নিয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় দেখা যাচ্ছে যে ছাত্রীদের সংখ্যাই বেশি।

তাহলে এখন কি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে মেয়েদের সামনে এগিয়ে যাবার লক্ষ্যই বেশি, ছেলেরা কি উচ্চাকাঙ্খী নয়?

ছেলে ও মেয়েদের পড়ালেখার মধ্যে বৈসাদৃশ্য অনেক আগে থেকেই শুরু হয়।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের এক গবেষণা অনুযায়ী, স্কুলের শুরুর দিকে মেয়েরা যদি এক ক্লাস পেছনে পড়ে, ছেলেরা দুই ক্লাস পেছনে পড়ে যায়-এমন চিত্রই সাধারণভাবে দেখা যায়।

তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ইংল্যান্ডের প্রায় ৮০ হাজার ছাত্র কোন এক ক্লাসের শুরুতে একটি বাক্য বলতেই হিমশিম খায়, তারা সঠিক নির্দেশনাও ধরতে পারে না।

প্রাইমারি স্কুলগুলোতে নারী শিক্ষকদের সংখ্যাই বেশি এবং মায়েদের সহায়তা রয়েছে।

এছাড়া স্কুলের কাজে ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থাকে, আর এটা উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেদের কম অজর্নের ক্ষেত্রে একটা প্রভাব ফেলে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ছেলেরা স্কুলের বাইরে কাজ করা বা পড়তে যাওয়ার বদলে ঘরে কম্পিউটার গেইমস খেলায় মনোযোগ দেয় বেশি। তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে ছেলেরা স্কুলের বাইরে এসে খুব বেশি সেটা নিয়ে ভাবে না।

সিডনি রাসেল স্কুলেরসাবেক শিক্ষক রজার লেইটন বলছেন, “অনেক ছাত্রকে আমি দেখেছি যারা খুব কময়ে স্কুলের কাজগুলো সেরে ফেলতে চায় এবং এর চেয়ে অনেক বেশি ছাত্রদের ভাষায় ‘ইন্টারেস্টিং’ বিষয়ে তারা সময় দিতে চায়”।

“অন্যদিকে ছাত্রীরা কিন্তু আরও বেশি সময় পড়ার ওই বিষয়টা নিয়ে ভাবে, চিন্তা করে। বড় পরিসরে সে বিষয়ে জানতে চায়”।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নারীদের উপস্থিতি বাড়ার আরেকটা কারণ বের করেছেন গবেষকেরা।

নব্বইয়ের দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটেকনিক বিষয়ে পড়ালেখার জন্য প্রচুর নারী শিক্ষার্থীদের নেয়া হয়।

হায়ার এডুকেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও গবেষক নিক হিলম্যান জানাচ্ছেন, সে সময়ে অনেক নারী নার্সিং ও শিক্ষকতার মতো বিষয় বেছে নিয়েছিল, যেগুলোতে ক্যারিয়ার গড়তে পুরো ডিগ্রি না হলেও চলতো।

কিন্তু পরিস্থিতি যখন বদলে গেল তখন নারীরাও উচ্চ শিক্ষায় আরও আগ্রহী হয়ে উঠলো।

যদিও পুরুষেরাও উচ্চ শিক্ষায় কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। এখনও তারা অনেক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কঠিন কোর্সে নারীদের থেকে অনেক বেশি পারদর্শী। -বিবিসি
২৬ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে