বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৪:৪১

প্রচণ্ড চাপের মুখে নতি স্বীকার করছেন সু চি, বৌদ্ধ-মুসলিমের পুনর্মিলনে নতুন পথ খুঁজছেন

প্রচণ্ড চাপের মুখে নতি স্বীকার করছেন সু চি, বৌদ্ধ-মুসলিমের পুনর্মিলনে নতুন পথ খুঁজছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের মধ্যে মায়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য কাজ করতে সম্মত হয়েছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি।

বুধবার সিঙ্গাপুরে একটি ব্যবসায়িক ফোরামে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।

দেশটির মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস দমন-পীড়নে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে তিনি এ কথা বলেন।

রোহিঙ্গা সমস্যা ছাড়াও দেশটির উত্তরে শান রাজ্যের কয়েক দশকের বিদ্রোহে হাজার হাজার মানুষ চলতি মাসে ওই অঞ্চল থেকে চীনে পালিয়ে গেছে।

সু চি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা এমন একটা দেশে বাস করছি যেখানে অনেক জাতিগোষ্টী তৈরি হয়েছে। এজন্য স্থিতিশীলতা অর্জন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশ স্থিতিশীল না হওয়ায় বিদেশি ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়। আমরা অস্থিরতা কামনা করি না কিন্তু আমাদের জাতির মধ্যে অনৈক্যের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তাই জাতীয় পুনর্মিলন এবং শান্তি আমাদের জন্য অবশ্যম্ভাবীরূপে গুরুত্বপূর্ণ।’

মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চালানো নির্যাতন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল- জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস হাইকমিশনারের’ অফিস থেকে বুধবার এক বিবৃতি দেয়।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মায়ানমারে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যে রক্তাক্ত সহিংসতায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগে অং সান সু চি সরকারের সুনাম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।  

এতে আরো বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর বার্মা সরকারের চালানো দমন-পীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল।’

গত জুন মাসের একটি রিপোর্টের তথ্য পুনর্ব্যক্ত করে এতে বলা হয়, ‘সরকার মূলত জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে...। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ধরণ স্পষ্টতই মানবতাবিরোধী অপরাধ।’

এদিকে, রাখাইন কমিশনের প্রধান হিসেবে মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনান সহিংসতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে সপ্তাহব্যাপী তার সফর শুরু করেছেন। তার এ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে বার্মিজ রাজ্যের জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন প্রতিরোধের লক্ষ্যে কাজ করা।

তিনি রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ ধারাবাহিত আক্রমণে আনুমানিক ৩০,০০০ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

গণ(----), নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ তদন্ত করতে বিদেশি সাংবাদিক, স্বাধীন তদন্ত সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীদের এসব অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে না।

কয়েক প্রজন্ম ধরে এসব রোহিঙ্গারা বার্মায় বসবাস করে আসছে। তারপরেও তাদের নাগরিকত্বকে স্বীকার করা হয়নি। তারা বিবাহ, ধর্মপালন, সন্তান জন্মদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগণ হিসাবে বসবাস করছে।

২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয় এবং এরপর থেকে তারা পুলিশ পাহাড়ায় দারিদ্র্যপীড়িত ক্যাম্পে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে তারা স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের আন্দোলনকে প্রচন্ডভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে।

তাদের কেউ কেউ ক্যাম্প থেকে নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু অনেকে শেষ পর্যন্ত মানব পাচার কিংবা মুক্তিপণের শিকার হয়েছে। -ডয়েচে ভেলে
০১ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে