শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০৮:৩৯:২২

ট্রাম্পের এই আদেশে বিপদে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র

 ট্রাম্পের এই আদেশে বিপদে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অভিবাসনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ২৭ জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ এবং আমেরিকার লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের লক্ষ্যে ট্রাম্পের দেয়া নতুন নির্দেশনার বিরুদ্ধে আমেরিকার বহু প্রযুক্তি কোম্পানি ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও অভিবাসী বহিষ্কারের কারণে শত শত গবেষক ও উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী ক্ষতির মুখে পড়বে। এসব গবেষক ও কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় উদ্ভাবনমূলক কোম্পানিতে কাজ করে। এ কোম্পানিগুলো প্রধানত বিদেশী মেধাবীদের ওপর নির্ভর করে চলে। তাদের আশংকা ট্রাম্প প্রশাসেনর পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে বৈধ অভিবাসী বিতাড়ন।


অ্যাপল, ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট ও টুইটারের মতো জায়ান্ট প্রযুক্তি কোম্পানিসহ আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির প্রায় ১০০ কোম্পানি অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা জারির প্রায় এক সপ্তাহ পরই এর বিরোধিতা করে মামলা দায়ের করে। মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে ভালো কর্মচারী পাওয়া, তাদের নিয়ে এসে কাজে নিয়োগ করা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একই সময় এমআইটি, হার্ভার্ড, ম্যাসাচুসেটসসহ আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে বোস্টনের ফেডারেল আদালতে নালিশ করে। মিনেসোটার মতো আরও কয়েকটা রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়াশিংটন রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালতে আর্জি জানায়, ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্ষতি করছে। আদালত অবশেষে রাজ্যগুলোর সঙ্গে একমত হয় এবং নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত করে।


ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে ইস্যু করা ভিসাগুলো মোট ভিসার মাত্র ১ শতাংশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মেধাবী জনশক্তির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বড় ধরনের হতে পারে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাত নিষিদ্ধ দেশের তালিকায় ইরানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। অথচ ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১০ম। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে কয়েক দিনে শুধু এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জনের অধিক ছাত্রছাত্রী ও গবেষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি অন এডুকেশন অ্যান্ড দ্য ওয়ার্কফোর্সের পরিচালক অ্যান্থনি পি কার্নিভেল ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপরীতে প্রাচীর নির্মাণ করতে পারেন না। আপনি সব সময় উদ্ভাবনের রাস্তা বন্ধ করার দিকে এগোচ্ছেন।’


অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অবস্থান : ট্রাম্প তার অভিষেক বক্তব্যে বলেন, আমার প্রশাসন সাধারণ দুটি বিধি অনুসরণ করবে : মার্কিনিদের ক্রয় কর ও মার্কিনিদের নিয়োগ দাও। ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ও ট্রাম্প বারবার উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগসহ মার্কিন অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করার প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সাফাই গান। কলাম্বিয়া ও ওহাইওতে প্রচারণা সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘কোম্পানিগুলো আমেরিকার কলেজ প্রশিক্ষিত তরুণদের কাছ থেকে চাকরি ছিনিয়ে নিয়ে এইচওয়ান-বি ক্যাটাগরির ভিসায় কর্মী আমদানি করছে। আমরা আমেরিকানদের জন্য এসব চাকরি সংরক্ষণ করব।’


প্রতিযোগিতার বাজারে ক্ষতি হবে যুক্তরাষ্ট্রের : ইউএস কমপিটিটিভনেস প্রোজেক্টের গবেষক মানজারি রমান যদিও বলছেন, ব্যবসায় প্রতিযোগিতা কোনো হার-জিতের খেলা নয়। তবু যে দেশগুলো থেকে গবেষক ও দক্ষ কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন, সেই দেশগুলো আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এ ক্ষেত্রে যে দেশে যত বেশি প্রতিযোগী, সে দেশে তত বেশি উন্নয়ন ঘটে এবং অন্যান্য দেশ থেকে এগিয়ে যায়। তাই যুক্তরাষ্ট্র যখন আরও প্রতিযোগী হবে, তখন প্রত্যেকেই উপকৃত হবে। আবার চীন যখন বেশি প্রতিযোগী হবে, তখনও প্রত্যেকেই উপকৃত হবে। ২০০৮ সাল থেকে নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে যত মেধাস্বত্ত্ব নিবন্ধন হয়েছে, দেখা গেছে এ ক্ষেত্রে আমেরিকানদের চেয়ে অ-আমেরিকানদের নিবন্ধন বেশি। এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন বিভাগের সহযোগী ডিন ফিওনা ই মারে জানান, আমাদের এমআইটি অ্যালামনাইর এক জরিপ মতে, এমআইটিতে মেধাস্বত্ত্ব নিবন্ধনে বিদেশী ছাত্ররা শতকরা ৩৪ ভাগ। অন্যদিকে মার্কিন ছাত্ররা ৩০ ভাগ।


সমাধান কোন পথে : সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের বিশেষজ্ঞরা বলেন, মার্কিন অর্থনীতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে বেশি করে ঢুকতে দেয়া। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্র সম্মত নয়। গবেষণায় বলা হয়, মাত্র ২৯ ভাগ জনগণ উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর অভিবাসনকে সমর্থন করেন। সে তুলনায় বিদেশী অভিবাসন সমর্থন করেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ৭৭ ভাগ মানুষ। গবেষক রমান বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় মেশিনের প্রতিস্থাপনেই বেশিরভাগ আমেরিকান চাকরি হারিয়েছে, অভিবাসনের কারণে নয়। অথচ অভিবাসনের ওপরই দোষারোপ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যবসায় নেতাদের পরিস্থিতি ও মার্কিন জনগণের প্রয়োজনকে মাথায় রেখে রাজনীতিকদের একটা উন্মুক্ত বিতর্কের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্মুক্ত এ বিতর্কের মাধ্যমেই কোম্পানিগুলো ও জনগণের জন্য একটা সমাধান বের করতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনের। ওয়াশিংটন পোস্ট
২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে