বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭, ১০:৪৮:০৯

পশ্চিমবঙ্গে কালো ব্যাজ পরে ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান

পশ্চিমবঙ্গে কালো ব্যাজ পরে ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুপরিচিত ফুরফুরা শরিফ দরগার পীর সে রাজ্যের মুসলমানদের কালো ব্যাজ পড়ে ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।

অনেকদিন ধরে দাবী করা সত্ত্বেও ঈদের সময়ে দুই দিন ছুটি দেওয়া হচ্ছে না, অথচ হিন্দুদের উৎসবগুলোতে ছুটির বহর বেড়েই চলেছে - এমন অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদ জানাতে কালো ব্যাজ পড়ার কথা বলছেন তোহা সিদ্দিকী নামের ওই পীর।

তবে রাজ্যেরই এক মন্ত্রী ও মুসলিম নেতা এই আহ্বানকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে মন্তব্য করছেন। যদিও আরেকটি মুসলিম সংগঠন বলছে যে তোহা সিদ্দিকীর দাবীর সঙ্গে একমত হলেও খুশীর ঈদে কালো ব্যাজ পড়ে প্রতিবাদ জানানোর পক্ষপাতী নন তারা।

তোহা সিদ্দিকী বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কাছে দাবী করে আসছি যে ঈদের দিন অন্তত দু'দিন করে ছুটি দেওয়া হোক। তিনি আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি"।

"অথচ হিন্দু ভাইয়েরা না চাইতেই দূর্গাপূজো, কালীপূজো বা ছটপূজোয় লম্বা ছুটি পাচ্ছেন। উনাদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে সেটা স্বাগত, আমরা খুশি। কিন্তু মুসলমানদের উৎসবের ছুটি কেন একদিন করে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না?"- প্রশ্ন তোলেন ফুরফুরার পীর।

তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব রোজার ঈদ আর কোরবানি ঈদ। বহু মুসলমান বাইরে কাজ করেন, তবে ঈদের সময়ে বাড়ি ফেরেন। একদিনের মধ্যেই তাঁদের উৎসবের ছুটি কাটিয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে হয়।

"মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই বলেন যে তিনি সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু - উভয়েরই মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সংখ্যালঘু হিসাবে আমরা তো কিছুই পাচ্ছি না," বলছিলেন তোহা সিদ্দিকী।

এরই প্রতিবাদ জানাতে তিনি নিজে কালো ব্যাজ পড়ে ঈদের নামাজ পড়বেন বলে তিনি জানান। "আমার সব ভক্তদের বলবো, বাংলার সব মুসলমান ভাইদেরও বলবো, আপনারা কালো ব্যাজ পড়ে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়ুন"।

তবে তোহা সিদ্দিকীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রীর সুসম্পর্ক রয়েছে, এমনটাই সবাই জানেন। তবুও মমতা ব্যানার্জীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে এরকম একটা প্রতিবাদ কেন তিনি করছেন?

এমন প্রশ্নের উত্তরে তোহা সিদ্দিকী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক থাক বা না থাক, একজন ধর্মগুরু হিসাবে মুসলমানদের সুবিধা-অসুবিধাটা তুলে ধরা আমার দায়িত্ব। তার জন্য সত্য কথাটা বলতে আমার কোনও সমস্যা নেই।"

তবে রাজ্যের মন্ত্রী ও জামিয়াত-এ উলেমা-এ হিন্দের নেতা মৌলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, ঈদের দিনে কালো ব্যাজ পড়ার ডাক দেওয়াটা দায়িত্বহীনতার পরিচয়।

মন্ত্রী বলেন, "তিনি যদি ঈদের দিন কালো ব্যাজ পড়ে নামাজ পড়ার আহ্বান দিয়ে থাকেন, সেটা তার দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এতে সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে। আর শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতেই ঈদে একদিনই ছুটি থাকে।"

"বরং মমতা ব্যানার্জী গত বছর ঈদের দু'দিন ছুটি দিয়েছিলেন। আবেদন করলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে যদি খুশীর ঈদের দিন কেউ কালো ব্যাজ পড়ার কথা বলেন, তাহলে দায়িত্বহীনতার পরিচয় ছাড়া আর কী বলব একে?" - বলছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।

তবে ঈদে একদিন ছুটি পাওয়াটা যে মুসলমানদের সত্যিই অসুবিধার কারণ, সেটা মানছেন অনেকেই।

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের প্রধান মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের কথায়, "এটা ঠিকই যেসব মুসলমান বাইরে কাজকর্ম করেন, তাদের পক্ষে একদিনের জন্য বাড়ি গিয়ে উৎসব সেরে আবার কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়া কঠিন"।

তিনি বলেন, "দু'দিন ছুটি তো দেওয়াই উচিত। কিন্তু খুশীর ঈদের দিন কোনও রকম প্রতিবাদ বা কালো ব্যাজ পড়াটাও আমরা মানতে পারবো না। খুশীর দিনে কেন শোকজ্ঞাপনের প্রতীক কালো ব্যাজ পড়বো? এটা তো শরিয়ত সম্মত নয়।"

শুধু কর্মরত ব্যক্তিরাই নন, যে সব ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন, তাদেরও একদিনের মধ্যে ঈদের উৎসব শেষ করে ফিরে আসা কঠিন হয় বলে মনে করেন মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।
জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে