শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:৪২:৪৯

সৌদি-ইসরাইল গোপন সম্পর্কের নেপথ্যে

সৌদি-ইসরাইল গোপন সম্পর্কের নেপথ্যে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক কারও কারও কাছে অসম্ভব মনে হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে, রিয়াদ ও তেলআবিবের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দেশ দুটির মধ্যে যে গোপন সম্পর্ক রয়েছে, সম্প্রতি ইসরাইলের এক মন্ত্রী তা ফাঁস করেন।

ইসরাইলের জ্বালানিমন্ত্রী ইউভাল স্টেইনিৎয রোববার এক সাক্ষাৎকারে এ গোপন তথ্য ফাঁস করেন। তিনি বলেন, ‘বহু মুসলিম ও আরব দেশের সঙ্গে আমাদের সত্যিকার গোপন সম্পর্ক রয়েছে এবং সাধারণভাবে এক্ষেত্রে আমাদের লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।’ তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবই চেয়েছে ইসরাইলের সঙ্গে তার সম্পর্ককে গোপন রাখতে এবং রিয়াদের এ ইচ্ছা পূরণে তেলআবিবের কোনো সমস্যা নেই।’

ইসরাইলের ওই মন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরব হোক বা অন্য কোনো আরব দেশ হোক কিংবা অন্য কোনো মুসলিম দেশ হোক- যখন তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী হয়, তখন তাদের ইচ্ছাকে আমরা সম্মান জানাই। আমরা সে সম্পর্ককে গোপন রাখি।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইল ও সৌদির মধ্যকার এ গোপন সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের নতুন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের একটি অংশ, যা ‘অভিন্ন শত্রু ও হুমকি’ ইরানের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে ইসরাইলের সঙ্গে সৌদির হাত মেলানো মধ্যপ্রাচ্যের বিভাজনের রাজনীতিকেই সামনে আনছে।

চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে এ রাজনীতি শুরু করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হোক বা কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করেই হোক, তারা একটি কর্তৃত্বমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল। আরববিশ্বে নিজেদের ধর্মীয় অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সৌদি আরব নিজস্ব প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব নীতি গ্রহণ করে, ভূমির ওপর ভিত্তি করে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা তার অন্যতম।

এক্ষেত্রে নিজেদের সুন্নি ধর্মীয় পরিচয় সুরক্ষার পাশাপাশি শিয়াপন্থী ইরানের প্রভাব খর্ব করতে ইসরাইলের সঙ্গে জোট করেছে সৌদি আরব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গবেষক ওফার জালজবার্গ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এ পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূলে রয়েছে ইসরাইল-ফিলিস্তিনের শান্তি প্রক্রিয়া। একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বলে মনে করে।

জালজবার্গ আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে সৌদি-ইসরাইলের মধ্যকার একটি দৃশ্যমান জোটের জন্ম একদিকে যেমন ইরানকে প্রতিরোধ করবে, অন্যদিকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের নিকট বেশ যৌক্তিক হিসেবে হাজির হয়েছে। এ শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জারেড কুশনারের নেতৃত্বে হোয়াইট হাউস নতুন পরিকল্পনা তৈরিতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

ট্রাম্প যেটাকে ‘চূড়ান্ত চুক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এক্ষেত্রে হোয়াইট হাউস আঞ্চলিক ক্ষমতাকেন্দ্র সৌদির সমর্থনের ওপর নির্ভর করছে। তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো কোবি মাইকেল।

তিনি বলেন, সৌদি আরবের উদ্দেশ্য হচ্ছে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত পারস্পরিক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে একটি জোট গড়ে তোলা। এ জোটকে মাইকেল ‘প্রায়োগিক বা কার্যকর আরব শিবির’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কাতার বাদে এ অঞ্চলে মিসর, জর্ডান ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দুটি কৌশলগত হুমকি রয়েছে। একটি হচ্ছে শিয়া ইরান ও অন্যটি সালাফি বা মৌলবাদী ইসলামী সন্ত্রাস।

কোবি মাইকেল বলেন, দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে একটি শূন্যতা তৈরি করে চলে গেছে। এ শূন্যস্থান সিরিয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া, ইরান ও তাদের মিত্ররা পূরণ করছে। এ অবস্থায় ইসরাইল সৌদির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সুতরাং সৌদিরা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে, ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার এটাই ভালো সময়।’

মাইকেলের মতে, সৌদি আরবের উপলব্ধি হচ্ছে, ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে তাদের সমর্থন তাদের কাঁধে বোঝায় পরিণত হয়েছে। তাই তারা এ স্থান থেকে সরে এসে কৌশলগতভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জোর দিচ্ছে। মাইকেল বলেন, যেই সৌদি আরব একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য ২০০২ সালে ইসরাইলের সঙ্গে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। সেই দেশটি বর্তমানে কুশনারের শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের চাপ দিতে ইচ্ছুক। যুগান্তর
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে