আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানে চলমান দীর্ঘকালীন যুদ্ধের চোরাবালিতে আমেরিকা আটকা পড়ে গেছে। আমেরিকা মনে করে এ থেকে বেরিয়ে আসার কিংবা আফগান যুদ্ধে সফলতার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি ন্যাটোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদেরও মর্যাদা রক্ষা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাকিস্তানের কর্মকর্তারা ভালো করেই জানেন, আফগান যুদ্ধ অত্যন্ত জটিল এবং তালেবানদের ওপরও তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এ অবস্থায় আমেরিকা যদি কখনো চাপ সৃষ্টি করে তাহলে পাকিস্তানও তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পাল্টা ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে।
ইরানের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হাসান শরিফ বালখবি মনে করেন, আমেরিকা যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার হুমকি ও চাপ প্রয়োগের বিষয়ে কঠোর হন তাহলে তার একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। আর তা হচ্ছে ইসলামাবাদ তার নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে অর্থাৎ স্বাধীন নীতি গ্রহণ করবে।
যাইহোক, পাকিস্তান এখন এটা বুঝতে পেরেছে যে, আমেরিকার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা ইসলামাবাদের জন্য অনুশোচনা ও অবমাননা ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না। কারণ এ অঞ্চলে পাকিস্তান যতদিন আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করবে কেবল ততদিন ইসলামাবাদকে গুরুত্ব দেবে ওয়াশিংটন।
গত ১৬ বছর ধরে আমেরিকাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েও পাকিস্তান আজ পর্যন্ত তার কোনো লক্ষই অর্জন করতে পারেনি। বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানকে দান গ্রহণকারী ও মিথ্যাবাদীর খেতাব দিয়েছেন যা চরম অবমাননাকর। আমেরিকার ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানকে এভাবে অবমাননা করে কথা বলেননি।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আপাতত স্থগিত রেখেছে।
পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররোম দস্তোগির খান বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফগানিস্তানে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে একের পর এক নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১ জানুয়ারি প্রথম টুইট বার্তায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ তুলে ইসলামাবাদকে ওয়াশিংটনের অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও আমেরিকার মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধের কারণ খতিয়ে দেখতে হলে এক দশক আগের ঘটনাবলীর দিকে নজর দিতে হবে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লুউ বুশ ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক হামলায় অংশ নিতে পাকিস্তানকে বাধ্য করেছিলেন।
এরপর ২০০৬ সাল থেকে আফগানিস্তানের ব্যাপারে আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ তোলে মার্কিন প্রশাসন। বুশের পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই মেয়াদের শাসনকালেও নানা ইস্যুতে দু'দেশের মধ্যকার মতবিরোধ অব্যাহত থাকে এবং পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন হামলার কারণে দু'দেশের মতবিরোধ তুঙ্গে ওঠে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনি কোনো রাখঢাক না করে সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এমনসব আক্রমণাত্মক অভিযোগ তোলেন পাকিস্তানের কর্মকর্তারা যাকে তাদের জন্য চরম অবমাননাকর বলে মনে করেন।
ফলে ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন দ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামরিক ও অর্থ সহায়তার বিষয়টিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতা এবং আফগানিস্তানের ব্যাপারে মার্কিন নীতি মেনে চলতে পাকিস্তানকে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন।-পার্সটুডে
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস