সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৫২:৫২

কানাডার প্রধানমন্ত্রী প্রতি ভারতের এমন আচরণ কেন?

কানাডার প্রধানমন্ত্রী প্রতি ভারতের এমন আচরণ কেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর যেকোনো বিদেশ সফর নিয়ে আনন্দ-উৎসব বয়ে যায়। এত দিনে হয়তো তাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার প্রথম ভারত সফর নিয়েও এমন হুল্লোড় পড়ে যাওয়ার কথা। অথচ হচ্ছে উল্টো।

এক সপ্তাহের সফরে ট্রুডো এখন সপরিবারে ভারতে। অথচ তাকে নিয়ে সরকারি মহলে কোনো হইচই নেই। এমনকি তার প্রতি ভারত ‘অবজ্ঞা’ প্রদর্শন করছে বলেও অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।

বিমানবন্দরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বদলে ট্রুডোকে অভ্যর্থনা জানান এক কনিষ্ঠ মন্ত্রী। গতকাল রোববার সপরিবারে ট্রুডোর তাজমহল পরিদর্শনের সময় প্রচুর ছবি তোলার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা গ্রহণ করেনি সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শনিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পৌঁছানোর পর তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান এক কনিষ্ঠ মন্ত্রী। অনেকেই এটাকে ট্রুডোর প্রতি ভারতের ‘অবজ্ঞা’ বলে মনে করছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনেকবারই বিদেশি নেতাদের নিজে গিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তার সুনামও রয়েছে।

সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ভারত সফরে আসা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তিনি বিমানবন্দরে গিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। অথচ কানাডার প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে এসেছেন দুদিন হয়ে গেল, নরেন্দ্র মোদির দেখা নেই।  সোমবার মোদির নিজের রাজ্য গুজরাট সফরে গেছেন ট্রুডো, অথচ মোদি সেখানেও অনুপস্থিত।

গতকাল সপরিবারে ট্রুডোর তাজমহল সফরের সময় উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যাননি। বিষয়টি আলোচনায় আসে গণমাধ্যমেও। সাধারণত ট্রুডোর বিদেশ সফর নিয়ে গণমাধ্যমে ছবি, শিরোনাম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে উত্তেজনা দেখা যায়, তেমনটা এই সফর ঘিরে দেখা যাচ্ছে না।

তাহলে কি ভারত জাস্টিন ট্রুডোর বিষয়ে নিরুত্তাপ? যদি তা নয়, তাহলে কেন? জবাবে এটাকে অবজ্ঞা-প্রদর্শন বলেই মন্তব্য করলেন ভারতীয় কলাম লেখক ও অর্থনীতিবিদ বিবেক দেহেজিয়া। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এটা বড় ধরনের অবজ্ঞা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারকে অভ্যর্থনা জানাতে কনিষ্ঠ মন্ত্রীকে পাঠানো সুনির্দিষ্টভাবে অবজ্ঞা দেখানো।’

তিনি বলেন, ট্রুডোর প্রতি আগ্রহ কম দেখানোর কারণ হতে পারে তার সরকারে থাকা কয়েকজন ভারতীয় শিখ থাকা নিয়ে। ওই শিখ ব্যক্তিদের সঙ্গে ভারতের শিখ স্বাধীনতা আন্দোলন ‘খালিস্তান আন্দোলন’-এর নেতাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলা হয়। পাঞ্জাব রাজ্যে স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবিতে ওই আন্দোলন করা হচ্ছে।

১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়ায় বোমা হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত শিখ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ওই সময়ের কানাডা সরকারের জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। ওই হামলায় ৩২৯ জন নিহত হয়। এ ছাড়া ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির ভোট ব্যাংক বলা হয় শিখ বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিকদের।

ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় চারজন শিখ-কানাডীয় রয়েছেন। ঘটনা যদি তাই হয়, তাহলে খালিস্তান ইস্যুতে এটাই দুই দেশের মধ্যে তিক্ততার প্রথম ঘটনা নয়। এই নিয়ে কানাডায় সংবাদমাধ্যমে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ট্রুডোর শিখদের খালিস্থান আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। সে কারণেই সম্ভবত তার ভারত সফরকে গুরুত্ব দিতে নারাজ মোদি।

এদিকে সোমবার গুজরাটে মহাত্মা গান্ধীর সবরমতীর আশ্রমে পৌঁছে চরকা কাটেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। ঘুরে দেখেন গান্ধী আশ্রম। এরপর তারা যান অক্ষরধাম মন্দিরে। মঙ্গলবার তাদের মুম্বাই যাওয়ার কথা। সেখানে বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেবেন ট্রুডেয়ু। শুক্রবার দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে করার কথা। ভারতে আসার পর হয়ত সেটাই হবে মোদির সঙ্গে ট্রুডোর প্রথম সাক্ষাত্‍।

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে