মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৪০:০২

ব্যাংক কেলেংকারি নিয়ে 'নরেন্দ্র মোদি চুপ কেন?'

ব্যাংক কেলেংকারি নিয়ে 'নরেন্দ্র মোদি চুপ কেন?'

শুভজ্যোতি ঘোষ : ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্কিং কেলেঙ্কারি বলা হচ্ছে যাকে, সেই হীরে-ব্যবসায়ী নীরব মোদির পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে এগারো হাজার কোটি রুপি ধোঁকা দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতির তরজা চরমে উঠেছে।

এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর সপ্তাহ ঘুরে গেলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা অর্থমন্ত্রী নীরব কেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী। শিল্পপতি বিজয় মালিয়া বা নীরব মোদির মতো ঋণখেলাপিদের দেশ থেকে পালাতে কে সাহায্য করছে- তা নিয়েও তর্কে জড়িয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি।

মমতা ব্যানার্জির মতো বিরোধী রাজনীতিবিদরাও এই কেলেঙ্কারি নিয়ে বিজেপিকে বিঁধতে চাইছেন। ভারতের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিপুল দুর্নীতিকে ঘিরে দেশের রাজনীতিও কীভাবে টালমাটাল হয়ে পড়েছে? হিরে আর স্বর্ণালঙ্কারের দুনিয়াজোড়া বাজারে নীরব মোদি একটি বিরাট ব্র্যান্ডের নাম।

ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী প্রায় পৌনে দুশো কোটি ডলার সাম্রাজ্যের এই মালিক কীভাবে প্রায় গত সাত বছর ধরে মুম্বাইয়ে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের একটি শাখার যোগসাজশে হাজার হাজার কোটি রুপির প্রতারণা করে আসছেন, গত সপ্তাহেই তা ফাঁস হয়েছে।

আর তখন থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক - এই কেলেঙ্কারির দায় কার, কংগ্রেস না বিজেপির।

কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীর কথায়, "প্রধানমন্ত্রী মোদি পৌনে দুঘন্টা ধরে বাচ্চাদের জ্ঞান দিতে পারছেন কীভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে, কিন্তু নীরব মোদি যে দেশের ২২,০০০ কোটি রুপি লুট করে নিয়ে পালালেন সেই দায়িত্ব কার এটা বলতে পারছেন না। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, খুব উঁচুতলা থেকে সুরক্ষা না-পেলে এভাবে সাগরচুরি করে পালানো সম্ভবই নয়।"

কংগ্রেস আরও অভিযোগ করছে, এই কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশের শিক্ষামন্ত্রী বা আইনমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, অথচ যাদের বলার কথা, সেই অর্থমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী মৌন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এর মধ্যে আবার পুরো কেলেঙ্কারির দায় চাপিয়েছেন কংগ্রেসের ওপরেই, কারণ এর সূত্রপাত হয়েছিল ২০১১ সালে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জমানায়। সীতারামনের বক্তব্য, "শুধু উৎপত্তি নয় - এই দুর্নীতির বাড়বাড়ন্তও হয়েছে কংগ্রেস আমলেই। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার পরিবারও অভিযুক্ত ওই কোম্পানির ব্যবসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।"

তিনি বলেন, "আর এখন সরকারে আছেন এমন একজন নেতা, যার অঙ্গীকারই হল 'নিজেও ঘুষ খাব না, কাউকে খেতেও দেব না'। তিনি সে কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।"

তবে ঘটনা হল, নীরব মোদি ও তার মামা গীতাঞ্জলি গ্রুপের কর্ণধার মেহুল চোকসি যেভাবে সরকারের নজর এড়িয়ে বিদেশে পালিয়েছেন তা সরকারকে বেশ বিব্রত করেছে। ললিত মোদি বা বিজয় মালিয়ার মতোই তাদেরকে ভারতের ফিরে পাওয়ার আশা এখনও দেখা যাচ্ছে না, উল্টে গত মাসে ডাভোসে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে শিল্পপতিদের গ্রুপ ফটোতে নীরব মোদির ছবি বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, তারা এর শেষ দেখে ছাড়বেন। তিনি বলেছেন, "জনগণের এই বিপুল টাকা কে তুলে নিল? কে খেয়ে নিল? কার সোনা? কোথা থেকে এল, কোথায় গেল? কারাই বা তা চুরি করে পালাল? এই দুর্নীতির তদন্ত করে যদি ব্যাঙ্কে সাধারণ মানুষের টাকা সুরক্ষিত না-করা হয়, আমরা কিন্তু ছাড়ব না!"

পাল্টা জবাব দিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করছেন, ফেরার মেহুল চোসকির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্ররও ছবি আছে, কাজেই নীরব মোদি ও নরেন্দ্র মোদি এক ছবির ফ্রেমে থাকলে কিছুই প্রমাণ হয় না।

দিলীপ ঘোষ বলছেন, "পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওয়েবসাইটেই ছবি আছে গত বছর মুম্বাইতে বেঙ্গল বিজনেস সামিটে মেহুল চোকসিকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার সঙ্গে সেখানে অমিতবাবুর ছবি, সচিবদের ছবি। তাহলে কি আমরা দুয়ে দুয়ে চার করব? বলব অমিতবাবু দায়ী, না মুখ্যমন্ত্রী নিজে দায়ী?"

এই সব মন্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্কিং দুর্নীতি খুব দ্রুতই একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে, আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে যার লাভক্ষতির দায় পোহাতে হতে পারে সব দলকেই। বিবিসি

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে