মেহবুব কাদের চৌধুরী : সুন্দরবনের নদীপথ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালির সরবেড়িয়া ও আশপাশের গ্রামে এসে পৌঁছাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। কিছু দিন থাকছেন মেছোভেড়ির ভিতরের আস্তানায়। তার পর সেখান থেকে চলে যাচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে।
রোববার সারাদিন এলাকা ঘুরে পাওয়া খবর অনুযায়ী, সদ্য আসা ২৭টি রোহিঙ্গা পরিবার সরবেড়িয়ায় আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন এখনও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতেই মাতলা পার করে বাংলাদেশে থেকে এ পারে রোহিঙ্গা আনার ‘কারবার’ চলছে।
যা শুনে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘এ সবের মধ্যে আমাদের দলের কেউ নেই।’ তবে সন্দেশখালির শাসকদলের দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহানের বক্তব্য হল, ‘আমার নামে যে যা পারছে বলছে। আমি রোহিঙ্গাদের আনছি, এ কথা প্রমাণ করতে হবে। অভিযোগ তুললেই হবে না।’
শাহজাহান জানান, কিছু দিন আগে তিনি বাংলাদেশে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে টাকা বিলি করেছিলেন। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোর পর বিতর্ক হচ্ছে। ‘এ পারে আমি কেন রোহিঙ্গাদের আনতে যাব?’ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় উচ্ছেদ হওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে রয়েছেন। তার আদর্শে সরবেড়িয়ার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন, এটা ভেবেই ভাল লাগছে। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’
বারুইপুরের হাড়দহ বা অন্য স্থানে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে দেওয়ার ‘সামাজিক’ কাজ যারা করছেন, তাদের একাংশ জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে ৬৫ কিমি দূরে সুন্দরবনের প্রবেশপথে সরবেড়িয়া গ্রাম। ফলে এ পারে এসে কিছু দিনের জন্য সেখানেই থাকতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের।
আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশ। দানবাক্স বসিয়ে অর্থ সংগ্রহ চলছে। সরকারি জমি যন্ত্র দিয়ে সমান করাও হচ্ছে। স্থানীয়দের একাংশ জানাচ্ছেন, তারাও শুনেছেন, সেখানে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শিবির হবে।
সরবেড়িয়ার রাস্তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাছের ভেড়ি। এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়ের ‘দাপুটে’ নেতা শেখ শাহজাহান রোহিঙ্গাদের কাছে ‘ফরিস্তা’র মর্যাদা পেয়েছেন।
যদিও রোহিঙ্গাদের লুকিয়ে থাকা নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ। কোন কোন বাড়িতে তারা আছেন, তা দূর থেকে দেখিয়েই আড়াল হয়েছেন অনেকে। শেখ শাহজাহানের বসতের কাছেই একটি বাড়িতে রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নেওয়ার খবর ছিল। রোববার বিকেলে ওই বাড়িতে ঢুকতেই বেরিয়ে এলেন এক যুবক।
রোহিঙ্গারা আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে কেউ থাকেন না। চলে যান।’ ওই যুবক রোহিঙ্গাদের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করলেও ঘরের মধ্যে অন্য এক জনকে দেখা গেল, তিনি ইশারায় কয়েক জনকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যেতে ইঙ্গিত করছেন। এর পরে কার্যত প্রাণ ভয়েই ওখান থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। -আনন্দবাজার
এমটিনিউজ/এসএস