সোমবার, ২১ মে, ২০১৮, ০৬:১২:১৩

সাদা চাদরে 'সতীত্বের পরীক্ষা' দিতে হলো না ঐশ্বর্যকে

সাদা চাদরে 'সতীত্বের পরীক্ষা' দিতে হলো না ঐশ্বর্যকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এই মহাকাশ প্রযুক্তির যুগেও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জঘন্য সব প্রথা চালু আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, নববধুর সতীত্ব পরীক্ষা। কোনোরকম পুনের কঞ্জরভাটে লাজ-লজ্জা ছাড়াই ৪০০ বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। নোংরা এবং মেয়েদের জন্য অপমানজনক প্রথা বিলুপ্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে কিছু তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে একজন ২৮ বছর বয়সী বিবেক তমাইচীকর। স্ত্রী ঐশ্বর্যকে নিয়ে মাথা উঁচু করেই সংসার শুরু করলেন তিনি।

কিন্তু বিষয়টা এত সহজ ছিল না। মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের সাবেক ছাত্র বিবেক তার বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন। 

যার সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ৭৪ জন। সকলের প্রতিপক্ষ ওই সাদা চাদর! গত ১২ মে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চায়েতের নির্ধারণ করে দেওয়া হোটেলে নয়। পুলিশি পাহারায় বিয়ে করে সোজা বাড়িতেই ফিরেছেন তিনি।

গ্রামের পঞ্চায়েতদের ঘোষণা ছিল, বউ 'সতী' কিনা তা জানতে হবে প্রথম রাতেই! তাই গ্রামের মোড়লই হোটেলের ঘর  ঠিক করবেন। বিছানার সাদা চাদরটাও তিনিই ব্যবস্থা করবেন। এরপর সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে সারারাত বসে থাকবেন বন্ধ দরজার ওপারে। তার আগে ঘরে এক নারীকে পাঠাবেন মোড়ল। 

তিনি পাত্রীর আপাদমস্তক দেখে সিদ্ধান্ত দেবেন তার কোনো 'খুঁত' আছে কিনা। হাতে একগাছি চুড়িও পরে থাকতে পারবে না নববধূর। সকালে বর বিছানা ছেড়ে এসে রক্তাক্ত চাদর যদি সবাইকে দেখাতে পারেন, তাহলেই সোনায় সোহাগা! 

চাদরে দাগ না পড়লে মেয়েটিকে কী করা হয় তা স্বচক্ষে দেখেছেন বিবেক। তিনি তখন ক্লাস ফোরে পড়েন। বিবেকের ভাষায়, 'এক আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়ে দেখেছিলাম, ভোরবেলায় এক নববধূকে জুতাপেটা করছে কয়েকটা লোক। আর কে যেন ভিড় থেকে বলে উঠল- 'এ তো কলঙ্কিনী!' অচল তো পয়সা হয়, মানুষও! স্কুলে গিয়ে ক্লাস টিচারকে প্রশ্ন করেছিলাম। উত্তর মেলেনি। মাকে জিজ্ঞাসা করে মার খেতে হয়েছিল।' কিন্তু এই প্রথাকে কখনই মেনে নিতে পারেননি বিবেক।

এরপর ২০১৫ সালে নিজের বিয়ের পাকা কথা হওয়ার পর হবু বউয়ের দাদুকে গিয়ে ধরেন। ভেবেছিলেন, রাজনীতি করা লোকটা নিশ্চয় সমস্যাটা বুঝবেন। প্রগতিশীল দাদু বুঝলেন সবটাই। 

কিন্তু নিজের বাড়িতে কেউ 'বিপ্লব' ঘটতে চায় না! এর মধ্যেই ব্যক্তিপরিসরের অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পঞ্চায়েতের নোংরামি রুখতে 'সামাজিক বয়কট প্রতিরোধ আইন' চালু হয়ে যায় রাজ্যটিতে। এসব আইনকেই হাতিয়ার করে বিবেক ও তার কাজিনরা মিলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলেন।

কিন্তু বিয়েটা তো কোর্টেও হতে পারত! বিবেকের উত্তর, 'তাহলে লড়াইটা কীভাবে হতো?' যে মায়ের কোল থেকে মেয়েকে আনলাম, প্রথা অনুসারে ৫২৫ টাকা দিয়েছি। কিন্তু পঞ্চায়েতের দাদাগিরি মানব না।' উল্লেখ্য, ২১ বছর আগে কোর্টে বিয়ে করেছিলেন বিবেকের মামা কৃষ্ণ ইন্দ্রেকর। দীর্ঘদিন একঘরে করে রাখা হয়েছিল তার পরিবারকে।

বিয়ের কার্ড ছাপানোর পর রাজ্যের নারী কমিশনের দ্বারস্থ হন বিবেক। সেখান থেকে ফোন যায় পুনের পুলিশ কমিশনারের কাছে। বিয়ের আসর ছেয়ে যায় পুলিশে। এর আগে আত্মীয়-প্রতিবেশীদের বিয়েতে এই প্রথা ভাঙতে গিয়ে বেশ কয়েকবার মারও খেতে হয়েছে বিদ্রোহী ছেলেমেয়েগুলোকে। এবার তাদের পাশে দাঁড়ায় 'মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূল সমিতি'।

প্রতিদিনের দৌড়ঝাঁপের জীবনে তো সতীচ্ছদ নানা কারণেই ছিন্ন হতে পারে। সমাজের একাংশ তা মানতেই চায় না। 
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে