শনিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৫১:৪৪

প্রস্তুত সহস্রাধিক যুদ্ধবিমান, ৩৬ হাজার ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, নৌবহর ও তিন লাখ সেনাসদস্য!

প্রস্তুত সহস্রাধিক যুদ্ধবিমান, ৩৬ হাজার ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, নৌবহর ও তিন লাখ সেনাসদস্য!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রস্তুত সহস্রাধিক যুদ্ধবিমান, ৩৬ হাজার ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, নৌবহর ও তিন লাখ সেনাসদস্য! মস্কো গত সপ্তাহেই এক খবরে চমকে দিয়েছিল পশ্চিমা বিশ্বকে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া হিসেবে ‘ভস্তক-১৮’-এর ঘোষণা দেন। ১৯৮১ সালে সোভিয়েত বাহিনী যে বিশাল সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছিল তার সাথে ভস্তক-১৮ মহড়ার তুলনা করেছেন তিনি। 

এক বিবৃতিতে শোইগু বলেন, ওই সময়কার জাপাদ-৮১ সামরিক মহড়ার কিছু কিছু পন্থার পুনরাবৃত্তি ঘটবে এবারের মহড়ায়। তবে অন্য সব বিবেচনায় এ মহড়াটি হবে আগের চেয়ে অনেক ব্যাপক পরিসরে। ওই বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, এ মহড়ায় সহস্রাধিক যুদ্ধবিমান, ৩৬ হাজার ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, নৌবহর ও তিন লাখ সেনাসদস্য অংশ নেবে। রাশিয়ার মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের সামরিক অঞ্চলে অনুষ্ঠিতব্য এ মহড়ায় অংশ নেবে উত্তরাঞ্চল ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরও।

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-চীনের কৌশলগত সহযোগিতার সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর ফলে তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন শক্তি ও ঐক্যের দেখা মিলেছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রাশিয়ার পোলার সিল্ক রোডে বেইজিংয়ের সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে মস্কো। এক্ষেত্রে নর্দান সি রুটকে (এনএসআর) পুনরুজ্জীবিত করতে চীন একটি পরমাণু আইসব্রেকার নির্মাণের ঘোষণা দেয়। সব মিলিয়ে রাশিয়ার দীর্ঘ দিনের উপকূলীয় করিডোর তৈরির যে স্বপ্ন ছিল তাতে চীনের বিনিয়োগটি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে উভয় পক্ষই সমানভাবে উপকৃত হচ্ছে।

এত কিছুর পরও রাশিয়া-চীন সহযোগিতার বিষয়টিতে সব রাশিয়ান সমানভাবে আশাবাদী নয়। ভস্তক-১৮ মহড়াটি যদিও চীনকে সাথে নিয়েই হচ্ছে, তারপরও কেউ কেউ মনে করে এ মহড়ায় দুই ধরনের অর্থ রয়েছে। যার একটি হলো, এটি চীনকে সতর্কবার্তা দিতেও ব্যবহৃত হতে পারে। কারণ কোনো কোনো রাশিয়ান কৌশলবিদ চীনকেই রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন। পূর্ব আফগানিস্তানে চীনের একটি সামরিক ঘাঁটি বা প্রশিক্ষণ ঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাবনার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে রুশ গণমাধ্যমগুলো। রাশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে মন্তব্য করা হয়েছিল, এ ঘাঁটিতে পাঁচ শতাধিক সেনা মোতায়েন করতে পারে চীন। তবে এর মূল উদ্দেশ্য হবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করা। বিশ্লেষণের শেষে চীনের এ পদক্ষেপ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়, বেইজিং খুবই সতর্কতার সাথে এ কাজের আঞ্জাম দিচ্ছে।

আবার বেশ অদ্ভূতভাবেই লক্ষ্য করা গেছে, ভস্তক-১৮ সম্পর্কে রাশিয়ার চেয়ে চীনই বেশি কথা বলছে। গ্লোবাল টাইমসের সাম্প্রতিক এক আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, এ মহড়ায় চীনের তিন হাজার ২০০ সেনাসদস্য অংশ নেবে। মহড়ায় যুক্ত হবে ৩০টি যুদ্ধজাহাজ ও ৯০০ অস্ত্র ইউনিট। ওই রিপোর্টে বলা হয়, আগে রাশিয়া-চীন যৌথ মহড়াগুলো হতো ছোট আকারের। কিন্তু এবার সেই ধারা ভাঙতে চলেছে। তবে এবারে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ‘ভস্তক-১৮’ মূলত যৌথ মহড়া নয়। বরং এটি হতে যাচ্ছে রাশিয়ার মহড়ায় বড় আকারে চীনের অংশগ্রহণ। এতে আরো বলা হয়, পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা এ বিষয়টিকে দুই বিপরীতধর্মী পন্থায় ব্যাখ্যা করতে পারেন। প্রথমত এটি নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় বা অর্থহীন একটি পদক্ষেপ অথবা মহড়া শেষে তারা বলতে পারেন, তাদের মধ্যে মিত্রতা তো আগে থেকেই ছিল। বরং তারা রাশিয়া-চীনের সামরিক জোটের ধারণাটিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটি বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার প্রতি একটি বড় ধরনের হুমকি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্কের সৃষ্টি করবে।

রাশিয়ার মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের সামরিক অঞ্চলে অনুষ্ঠিতব্য মহড়া ভস্তক-২০১৮ চলবে ১১ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মহড়াটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন পশ্চিমাদের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের দারুণ অবনতি হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে ভস্তক-২০১৮ মহড়া ন্যায়সঙ্গত। এ মহড়ায় চীনের অংশগ্রহণ সবক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে।

রাশিয়া ন্যাটোর দেশগুলোকে এই মহড়া পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোর মুখপাত্র ডেলান হোয়াইট বলেন, ‘রাশিয়া মে মাসে সামরিক অনুশীলনের কথা জানিয়েছে। ন্যাটো মহড়াটি পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছে। সামরিক মহড়া চালানোর অধিকার সব জাতিরই আছে। কিন্তু স্বচ্ছতার সাথে ও নির্ধারিত নিয়মানুযায়ী মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি।’ ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়া এবং পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের রাশিয়ার সমর্থনকে কেন্দ্র করে ন্যাটোর সাথে দেশটির উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ন্যাটোর সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকে অন্যায় এবং উসকানিমূলক বলে আখ্যা দেয় রাশিয়া।- ইয়াহু নিউজ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে