আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বয়স তখন মাত্র ৯। দাদার কাছে যাওয়ার জন্য সেদিন স্টেশনে অপেক্ষা করছিল দেবিকা ও তার পরিবার। হঠাৎই চারিদিকে রক্ত আর রক্ত। দেবিকা দেখেছিল একটা ছেলে পিঠে ব্যাগ নিয়ে সবাইকে গুলি করে মারছে। গুলি এসে লেগেছিল তার পায়েও। ছ’খানা অস্ত্রোপচারের পর সে সুস্থ হয় ঠিকই, কিন্তু পিঠে ব্যাগ নেওয়া সেই সন্ত্রাসবাদী আজমল কাসভকে চিনিয়ে দেওয়ার শাস্তি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আজও।
দিনটা ছিল ২৬ নভেম্বর, ২০০৮। মুম্বইয়ের রেল স্টেশনে হামলাকারী কাসভকে শনাক্ত করেছিল সেই সময়ে মাত্র ৯ বছরের ছোট্ট মেয়ে দেবিকা রোতওয়ানে। তাঁর শনাক্তকরণের উপর ভিত্তি করেই শাস্তি দেওয়া হয় এই ভয়ঙ্কর জঙ্গিকে। বলাবাহুল্য, দেশের জন্য এক বিরাট কাজ ছিল সেটা। প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে কাসভ। কিন্তু সেই গর্ব ধুয়ে-মুছে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেবিকার জীবনে।
সবাই ধরে নিল সন্ত্রাসবাদীদের প্রত্যাঘাতের মুখে পড়তেই হবে দেবিকাকে। কোনও না কোনও দিন তারা কাসভের শাস্তির বদলা নিয়ে হামলা করবে দেবিকার উপর। ধীরে ধীরে সকলেই সম্পর্ক ছিন্ন করলেন তাঁদের সঙ্গে। ভয়, বুঝি তাঁদের জঙ্গি রোষে পড়তে হয়। দেবিকার বাবার রমরমা ফলের ব্যবসা ছিল। বন্ধ করে দিতে হল সেই দোকান। কারণ, ছোট দোকানদাররা আর কেউ কিনতে চাইলেন না ফলমূল। বিলাসবহুল বান্দ্রা থেকে বাড়ি সরিয়ে নিয়ে অন্য জায়গায়। এমনকী নিজের দাদার বিয়েতেও যেতে পারেনি দেবিকা।
কেউ স্কুলে ভর্তি করতে চাইল না দেবিকাকে। অবশেষে ভর্তি হতে পারলেও শুনতে হল নানা কুকথা। কেউ তাকে ডাকলো, ‘কাসভের মেয়ে’ বলে, কেউ বলত ‘কাসভ ওয়ালি’। অনেক কষ্টে একটি দোকানে চাকরি জোটালেন তার বাবা। দেবিকা এখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। দু’চোখে স্বপ্ন, বড় হয়ে আইপিএস হবে সে। দেশকে রক্ষা করবে। এখন সমাজের লড়াইতে জেতাটাই তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।