রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:৫৭:০০

ট্রাম্প কেন সৌদি আরবের সমালোচনায় অনাগ্রহী?

ট্রাম্প কেন সৌদি আরবের সমালোচনায় অনাগ্রহী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগি ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে নিখোঁজ হওয়ার ৬ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে প্রথম মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘আশা করি আপনা-আপনিই এর সমাধান হয়ে যাবে।’ এমন দায়সারা মন্তব্য করে তিনি সংকটকে হালকা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তবে সংকট আরো ঘনীভূত হয়। বিশ্বজুড়ে খাসোগি নিখোঁজকে কেন্দ্র করে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠার পর ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে ফোন করেন। খাসোগির নিখোঁজ বা মৃত্যুর পেছনে যাদের হাত রয়েছে, তাদের শনাক্ত করার জন্য ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি অনুরোধ করেন। মার্কিন কর্মকর্তারা এ ফোনের খবর নিশ্চিত করেছেন।

এর পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খাসোগি হত্যাকাণ্ডের জন্য দুর্বৃত্তদের ওপর দোষ চাপান। মূলত এর মধ্য দিয়ে ‘বেনিফিট অব ডাউবটের’ সুযোগ নিয়ে ট্রাম্প সৌদি আরবকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের অব্যাহত চাপ ও সমালোচনার মুখে তিনি সুর বদলে ফেলেন।

দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেন। কিন্তু গতকাল সৌদি আরব যখন খাসোগি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে, কনস্যুলেটের ভেতরে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে কাল্পনিক গল্প প্রকাশ করেছে, তখন ট্রাম্প এই বিবৃতিকে বিশ্বাসযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট সিনেটররা সৌদি আরবের ব্যাখ্যাকে অবিশ্বাস্য আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ জানালেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

এ ছাড়া, গত সপ্তাহে ট্রাম্প সৌদি আরবকে শাস্তি দেয়ার কথা বললেও এটা বাস্তবায়নে তাকে অনাগ্রহী দেখা গেছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, ট্রাম্প নিজেকে একটি গর্তের মধ্যে বন্দি করে রেখেছেন। কিন্তু এই ইস্যুতে তাকে অবশ্যই কিছু করতে হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, খাসোগির নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হোয়াইট হাউসের চিফ স্টাফ জন কেলিকে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, এই ইস্যু দ্রুতই শেষ হচ্ছে না। হোয়াইট হাউসের দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ খবর নিশ্চিত করেছেন। মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্পের জামাই কুশনার, যিনি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন, খাসোগি ইস্যুতে ট্রাম্পকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন।  ট্রাম্পকে এমনভাবে কাজ করতে বলেছেন, যাতে সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের কৌশলগত সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতা কমে না যায়। এই কুশনারই প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে ট্রাম্পকে সৌদি আরবে নেয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন। 

পরে যখন তুরস্কের পক্ষ থেকে খাসোগি হত্যার শক্ত অভিযোগ তোলা হলো ও সৌদি আরব তা অব্যাহতভাবে অস্বীকার করলো, তখন ডেমোক্রেটরা, অনেক ক্ষেত্রে রিপাবলিকান সিনেটররাও ট্রাম্পের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম খাসোগি হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এমবিএসকে দোষারোপ করেন। এমবিএস সৌদি আরব-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে সংকটের মুখে ফেলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পরে গতকাল সৌদি আরব খাসোগি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিলে গ্রাহাম টুইটারে লেখেন, সৌদি আরবের নতুন বিবৃতির বিষয়ে তিনি সন্দেহপ্রবণ। গ্রাহামের মতো আরো অনেক সিনেটরই খাসোগি ইস্যুতে ট্রাম্পের অনুসৃত নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। 

এর আগে  ট্রাম্প খাসোগি ইস্যুতে নিজের নীরবতার পক্ষেও সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঘটনাটি ঘটেছে তুরস্কে। আর হতাহত খাসোগি যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী, নাগরিক না। তবে সমালোচকরা বলছেন, সৌদি আরবকে কূটনৈতিক আশকারা দিচ্ছেন ট্রাম্প। তাদেরকে গল্প তৈরি করার জন্য সময় করে দিচ্ছেন। এসময় হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য বিষয়ক প্রধান পিটার নাভারো সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাক্ষরিত অস্ত্র চুক্তির গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন। অর্থাৎ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাণিজ্যিক লেনদেনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে সৌদি আরব ও তুরস্কে পাঠান। তার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী করণীয় ঠিক করেছে।
 
তবে মার্কিন কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সৌদি আরবের ওপর মানবাধিকার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে কয়েকজন সিনেটর রিয়াদের কাছে নতুন করে কোনো অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত আটকে দেয়ার শপথ দিয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চূড়ান্তভাবে সৌদিবিরোধী এসব পদক্ষেপ রুখে দেবেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে