আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর জঙ্গি হামলায় জড়িতদের মধ্যে ১৫ জন ছিল সৌদি নাগরিক—এমন অভিযোগ ওঠার পর মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে সৌদি আরব জোর লবিং শুরু করেছিল। ওই ঘটনার পর কেবল ওয়াশিংটনের সঙ্গে লবিংয়ে এরই মধ্যে সৌদি আরব ১০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছে। এর মধ্যেই আরেক নতুন সংকট সৌদি প্রশাসনকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে।
সৌদি আরবের এ নতুন সংকটের কারণ সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমালোচক খাশোগি গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গেলে সেখানে তাঁকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছেন ১৫ জন ঊর্ধ্বতন সৌদি কর্মকর্তা। নানা টালবাহানার পর সৌদি প্রশাসন নিজে এ কথা স্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে, সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার পর মারামারির এক পর্যায়ে খাশোগির মৃত্যু হয়।
খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সৌদি প্রশাসনের এ ব্যাখ্যায় তেমন কাজ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের যে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ সালমানের দহরম-মহরম ছিল, তাঁরাই এখন সটকে পড়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান নানা কারণে সৌদির অর্থ বেশ আনন্দের সঙ্গে নিত, তারাও এ সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক আছে, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য নর্ম কোলম্যান। সৌদি দূতাবাসের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তিনি চলতি বছর মাসিক সোয়া এক লাখ ডলার প্রাপ্তির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। আরো আছেন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান বাক ম্যাককেওন। তাঁর প্রতিষ্ঠানকে মাসে ৫০ হাজার ডলার দেয় সৌদি আরব। খাশোগি ইস্যুর জেরে সৌদি আরবের সঙ্গে কোলম্যান ও ম্যাককেওনের সম্ভাব্য সম্পর্কের ব্যাপারে তাঁদের মন্তব্য চাইলে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের লবিং প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন সৌদি আরবের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে। এ ধরনের কমপক্ষে চারটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী থিওডোর ওলসনের প্রতিষ্ঠান। তাঁর প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সৌদি আরবের কাছ থেকে আড়াই লাখ ডলার পকেটস্থ করেছে।
বাদ পড়ছে না পরামর্শক সংস্থাগুলোও। শীর্ষস্থানীয় পরামর্শক সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আরেক সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ জানিয়েছে, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনা করছে।
সব মিলিয়ে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের জেরে সৌদি আরবের কোনো ধরনের লবিংই এখন আর টিকতে পারছে না এবং এর ছায়া পড়েছে ওয়াশিংটন-রিয়াদ অস্ত্রচুক্তির ওপরও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, খাশোগি ইস্যুর জেরে তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি বাতিল করতে মোটেই রাজি নন। অথচ জার্মান মার্শাল ফান্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেমি ফ্লাই ধারণা করছেন, অস্ত্রচুক্তি বাতিলের জন্য ট্রাম্পের ওপর কংগ্রেস সদস্যদের চাপ ক্রমেই বাড়বে। সূত্র : এএফপি।