শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭, ০৯:২৬:৪৭

'আমাদের উভয়ের পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন'

'আমাদের উভয়ের পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন'

বিনোদন ডেস্ক: গত বৃহস্পতিবার একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, আর একসাথে থাকা হবে না। এখন থেকে তাহসান খান ও রাফিয়াথ রশীদ মিথিলা পথ চলবেন আলাদাভাবে। খবরটি শুধু ভক্তদের স্তম্ভিত করেনি, দু’জনের পরিবারের সদস্যদেরও করেছে আহত।

শুক্রবার এই ব্যাপারে মিথিলা বলেন, ‘ভক্তরা হঠাৎ জানলেও তাহসান ও আমার পরিবারের লোকজন বিষয়টি আগে থেকেই জানত। তারপরও আজ (শুক্রবার) ও গতকাল গণমাধ্যমগুলো যেভাবে বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করেছে তা দেখে আমাদের উভয়ের পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। আমরা যে রক্ত-মাংসের মানুষ তার জন্যই বোধ হয় এরকম প্রতিক্রিয়া।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে কুণ্ঠাবোধ করি। আমাদের আচরণ থেকে এই বিষয়গুলো দূর করা দরকার। আমরা কিন্তু বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দু’জনে অনেক আলোচনা করেছি। ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনের এই পর্যায়ে এসে অনেক কিছুই গড়মিল মনে হচ্ছে, তাই আলাদা থাকাটাই সমীচীন মনে করেছি।’

মিথিলা বলেন, আমাদের যারা অনেক বেশি ভালোবাসেন, তারই বিচ্ছেদের খবরে সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছেন। তাদের উদ্দেশে বলব, ‘সংসার ভাঙলেও ভবিষ্যতে আমরা একসাথে কাজ করব। তাই তাহসান-মিথিলা আপনাদের কাছে আগের মতোই থাকবে।’

তবে এখনই দু’জনকে একসাথে কোনো নাটকে অভিনয় করতে বললে মিথিলা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবেন। এ প্রসঙ্গে মিথিলা বলেন, ‘বছরখানেক তাহসানের সাথে কোনো কাজ করব না এটা নিশ্চিত। কারণ বিচ্ছেদের বিষয়গুলো অনেক কষ্টের, কষ্টগুলো মন থেকে হাল্কা হলে নতুন করে কাজ করতে আমার দিক থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না।’

তিনি বলেন, কাজ না করলেও মেয়ের জন্মদিনে তাহসানের সাথে আমার দেখা হবে। তা ছাড়া আইরার (মেয়ে) ভালো-মন্দ নিয়ে দু’জনের মধ্যে তো কথা হবেই। সুতরাং কোনো না কোনোভাবে তাহসান-মিথিলা সবার মাঝে থাকবে।

২০০৬ সালের ৩ আগস্ট দু’জনের বিয়ে হয়েছিল। এর ১৬ দিন পর ১৯ আগস্ট দু’জন মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার লঙ্কাউইতে। এর পর থেকে প্রতি বছর আগস্ট মাসের এই সময়টাতে তারা কোথাও না কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন।

মিথিলা জানালেন, এ পর্যন্ত অনেক জায়গায় গিয়েছেন, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, পুকেট, পাতায়া, ফিফি। যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাস আর ক্যালিফোর্নিয়ার ডিজনিল্যান্ডে। কক্সবাজারেও গিয়েছেন। কিন্তু এখন থেকে এইভাবে ঘুরতে যাওয়াটা আর হবে না।

বিয়ের দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সাল থেকে দু’জনের পরিচয়। মিথিলার এক বন্ধু তার ছোট ভাইয়ের জন্য তাহসানের অটোগ্রাফ নিতে যাচ্ছে। তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্যই তাহসানের বাসায় যান মিথিলা। তখনই তাদের পরিচয়। এরপর মিথিলার কাছে চিঠি লিখেন তাহসান। পরিচয়ের পরদিন তাহসান চিঠি নিয়ে কলাভবনের প্রথম গেটের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এক সময় মিথিলার সামনে পড়ে যান। মিথিলা কথা বললেন।

তাহসান অনুরোধ করেন, ‘চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।’ হাঁটতে হাঁটতে অনেক কথা হলো। একপর্যায়ে তাহসান সাহস করে মিথিলার হাতে গুঁজে দিলেন চিঠি। তাতে লেখা ছিল, Some call it love at first sight, some call it infatution. I just ignore it.’

মনে মনে তাহসানকে পছন্দ করেছিলেন মিথিলাও। তিনি চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন মুঠোফোন বার্তায়। এর প্রথম বাক্য ছিল, ‘অ্যাই, এটা কী লিখেছ?’ এর পর থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বাসার দরজায় ফুল রেখে এসে মিথিলাকে ফোন করতেন তাহসান। তাদের দু’জনের রোমান্টিক প্রেমের গল্প নিয়ে নাটকও তৈরি হয়েছে।
কিন্তু এসব কিছু আর মনে রাখতে চান না মিথিলা। তিনি মনে করেন, সফল দাম্পত্য জীবনের জন্য চাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সম্পর্কের শুরুর আকর্ষণ তো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায়। তাই দু’জনের মধ্যে বিশ্বাসের ভীত মজবুত না হলে সম্পর্ক জটিল রূপ ধারণ করে। আমাদের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে।’

মিথিলা বলেন, আমার কাছে জীবনের সফলতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। আর সফলতার গোপন কোনো সূত্র নেই। সফলতায় পৌঁছার জন্য প্রত্যেকের আছে আলাদা আলাদা পন্থা। তিনি প্রতিটি কাজকে গুরুত্ব অনুযায়ী ভাগ করেন এবং নিজের কাজকে উপভোগ করেন। মিথিলা মনে করেন, চলচ্চিত্র নাটকে নারীদের আত্মনির্ভরশীল চরিত্রে দেখানো উচিত। নারীদেরকে শক্তিশালী চরিত্রে উপস্থাপন করলে, সমাজে তাদের অবস্থান আরো দৃঢ় হবে। ভিকারুননেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন মিথিলা।

এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স করেছেন ‘শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ’ বিষয়ে। দ্বিতীয় মাস্টার্সে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় তিনি ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ অর্জন করেছেন। এখন তিনি ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালে এডুকেশন প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন।
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে