শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭, ০৯:০১:৫৫

অভিনেতা সোহেল চৌধুরী ও অভিনেত্রী তিন্নি হত্যার বিচার কী হবে?

অভিনেতা সোহেল চৌধুরী ও অভিনেত্রী তিন্নি হত্যার বিচার কী হবে?

কুদরত উল্লাহ: হত্যা। এই কথাটি শুনলেই বুকটা কেঁপে উঠে। মানুষ মাত্রই মরণশীল তাই বলে হত্যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। হোক সে আপনজন অথবা দূরের মানুষ। সারা বিশ্বেই প্রতিনিয়ত হত্যা হচ্ছে মানুষ। রাগ, অভিমান থেকে সৃষ্ঠ শত্রুতা থেকেই মূলত একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে হত্যা করছে। সকল হত্যাই অস্বাভাবিক। মেনে নিতে কষ্ট হয়ে যায়। তার চেয়ে আরও বেশি কষ্ট হয় যখন হত্যার সুষ্ঠু  বিচার পাওয়া যায় না। অথবা বিচার পাওয়ার আশায় পরিবারের বসে থাকতে হয় বছরের পর বছর বা যুগের পর যুগ। সেই ভাবেই যুগ পেড়িয়ে গেলেও বিচার হয়নি এই দুই অভিনয়শিল্পী হত্যার! তারা হলেন মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি এবং চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী।

সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি:

২০০২ সালের ১০ই নভেম্বরে তিন্নি হত্যাকাণ্ডটি একটা বড় সময় ধরেই দেশে আলোচনার শীর্ষে ছিল। ঘটনাটির খুঁটিনাটিও ছিল টক অব দা কান্ট্রি। বুড়িগঙ্গায় তিন্নির লাশ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপর আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে রাখা লাশের ছবি দেখে শনাক্ত হয় পরিচয়। এরপর জনমনে জন্ম দিয়েছিল নানা প্রশ্ন, কৌতূহল ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। তদন্তের পর তদন্তে বেরিয়ে আসে নাটকীয়তায় ঘেরা নানা রহস্য। রহস্যের উন্মোচনেও যেন অপেক্ষা করছিল আরো বড় চমকের বিস্ফোরণ। যেনতেন কেউ নয়। সাবেক ছাত্রনেতা তৎকালীন এমপি মো. গোলাম ফারুক অভির সম্পৃক্ততা ওঠে আসে। কিন্তু লাপাত্তা অভি কিংবা মামলাটি এখনও বারবার আলোচনায় ওঠে আসছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পার হয়ে গেলেও আজও বিচার সম্পন্ন হয়নি। সর্বশেষ জানা যায় তিন্নি হত্যার একমাত্র আসামী অভি এখন পালিয়ে কানাডায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। তদন্তে উঠে এসেছিল স্বামী থাকা স্বত্তেও অভির সঙ্গে তিন্নি পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে অভি বাধ্য করে তিন্নিকে যেন স্বামীকে ডির্ভোস দিয়ে তার কাছে চলে আসতে। তিন্নিও তাই করে। কিন্তু অভি তিন্নির সঙ্গে প্রতারণা করে। সেই থেকে তিন্নিও নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে অভিকে। শেষমেষ তিন্নিকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গা ব্রীজের উপর থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়।

সোহেল চৌধুরী:

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে চিত্রনায়ক সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। কিন্তু এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অন্য আসামিরা হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আশীষ চৌধুরী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন, আদনান সিদ্দিকী, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ও ফারুক আব্বাসী। তদন্তে উঠে এসেছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে চিত্রনায়ক সোহেল এর বাকযুদ্ধ হয় এক মডেলকে নিয়ে। এরপরই তাকে হত্যা করা হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে আসামিদের মধ্যে ইমন কারাগারে এবং আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ সাত আসামি জামিনে চলে যান। অন্যদিকে, আশীষ চৌধুরী পলাতক আছেন। তখনকার সময়ে জনমনে এই হত্যাটিও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। তবে বরাবরের মতো আইনের চোখ ফাঁকি দেন হত্যাকারিরা। আজ ১৭ বছর ধরেও এই হত্যাটির কোন সুষ্ঠু বিচার পায়নি সোহলে চৌধুরীর পরিবার। একমাত্র তার স্ত্রী অভিনেত্রী দিতি বেঁচে থাকাকালিন চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের শারীরিক অবস্থার অবনতীর কারণে তিনি পিছু হটে যান সোহেল হত্যার বিচার থেকে। বর্তমানে এই মামলার আসামী আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। অন্যদিকে বাকি আসামীরা কে কোথায় আছেন কারও জানা নেই।

শেষ কথা হচ্ছে, যাদের হত্যা করা হলো। যে বা যারাই করেছেন। এই হত্যাগুলোর বিচার নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নই উঠেছে। কিন্তু আজও প্রশ্নের উত্তর কেউ পায়নি। সর্বশেষ রোমান্টিক নায়ক সালমান শাহ হত্যার ২১ বছর হয়ে গেলেও এখনও এই মামলাটিরও সুষ্ঠ কোন বিচার এখনও হয়নি। এখানেও হত্যার মূল কারণ আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং সালমান শাহ এর স্ত্রী সামিরার নাম বার বার উঠে এসেছে। কিন্তু সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে তারা বলে আসছেন। কিন্তু সালমান শাহ এর মা নীলা চৌধুরী বলছেন এটা হত্যা। বর্তমানে এই হত্যাটির বিচার চাওয়া নিয়ে আবারও ভক্ত ও পরিবার সবাই সোচ্চার হয়েছেন। সূত্র-প্রিয়.কম
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে