বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৫৩:৫৮

আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না, আমি এই শহরে শরণার্থী হয়ে এসেছি-নায়করাজ রাজ্জাক

আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না, আমি এই শহরে শরণার্থী হয়ে এসেছি-নায়করাজ রাজ্জাক

বিনোদন ডেস্ক : ওই সময় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম ও ত্রিপুরা থেকে দলে দলে মুসলমানরা পাড়ি দিচ্ছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। রাজ্জাকও স্ত্রী লক্ষ্মী এবং শিশুপুত্র বাপ্পাকে নিয়ে ওই দাঙ্গার সময় ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকা পৌঁছান। কপর্দকহীন অবস্থায়। ঢাকায় তাঁর চেনাজানাও কেউ নেই। শুধু সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পীযূষ বসুর চিঠি এবং পরিচালক আবদুল জব্বার খান ও শব্দযন্ত্রী মনি বোসের ঠিকানা।

স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে স্টেডিয়ামে শত শত উদ্বাস্তুর ভিড়ে রেখে রাজ্জাক গিয়ে দেখা করেন পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে আশ্বাস দেন। রাজ্জাক পরে কমলাপুর এলাকায় মাসিক ৮০ টাকা ভাড়ায় বাসা ঠিক করে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ওঠেন। উদ্বাস্তু রাজ্জাকের আশ্রয় মিলল ঠিকই, কিন্তু জীবিকা অর্জনের কোনো পথ নেই। ঘুরে বেড়ান ছবিপাড়ায়। দেখা করেন সুভাষ দত্ত, সৈয়দ আওয়াল, এহতেশাম প্রমুখের সঙ্গে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়ে ওঠে না।

জীবন থেমে থাকে না। পরিচালক আবদুল জব্বার খান তাঁকে কাজের সুযোগ করে দেন ‘ইকবাল ফিল্মস’ প্রতিষ্ঠানে। এ প্রতিষ্ঠানের ছবি ‘উজালা’য় পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। সহকারী হিসেবে দ্বিতীয় ছবি ছিল ‘পরওয়ানা’। কিন্তু ছবির কাজ শতকরা ৮০ ভাগ হওয়ার পরই সহকারীর কাজ ছেড়ে দেন। কারণ, রাজ্জাক নায়ক হতে এসেছিলেন। ক্যামেরার সামনেই দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। পর্দায় নাম ভেসে ওঠার শুরুতেই নিজের নাম খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন।

এক সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। আমি এই শহরে শরণার্থী হয়ে এসেছি। জীবনসংগ্রাম করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনো দিন আসেনি। ওটা আসেনি বলেই এত দূর শান্তিতে এসেছি।’

উচ্চাশা তাঁর সব সময়ই ছিল। রুপালি পর্দার জগতেও ছিল টাকার ঝনঝনানি। কিন্তু টাকার মোহে অন্ধ হয়ে যাননি কখনো। এ কারণেই রাজ্জাক থেকে নায়করাজ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। রাজ্জাকের রুপালি পর্দার বাইরের জীবনটাও হয়ে থাকবে অনুপ্রেরণার।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে