বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:২৮:২২

৫৫ বছরের সংসার জীবন নিয়ে স্ত্রী লক্ষীর যতকথা

৫৫ বছরের সংসার জীবন নিয়ে স্ত্রী লক্ষীর যতকথা

বিনোদন ডেস্ক : নায়করাজ সেই ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে নতুন জীবনের খোঁজে স্ত্রী ও ৮ মাস বয়সী শিশু সন্তান বাপ্পারাজকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন অনেকটা শূন্য হাতে। কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে রাজ্জাককে। এরপর তিনি নায়করাজ উপাধি পেয়েছেন। চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী হয়েছেন। সে সময়কার কমলাপুরের ছোট্ট ঘর থেকে এখন আলিশান বাড়ি লক্ষীকুঞ্জ, অর্থ, যশ, খ্যাতি, সম্মানসহ তিনি পেয়েছেন দর্শকদের অকৃত্রিম ভালোবাসা।

মহীরুহকে যিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তিনি তাঁর সহধর্মীনি খায়রুন নেসা (লক্ষী)। ১৯৬২ সালে বিবাহবন্দনে আবদ্ধ হন তাঁরা। এরপর জীবনের এতটা পথ একসাথে চলেছেন। সেই চলার পথেরই গল্প ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি নায়করাজের জন্মদিনে  পাঠকদের জন্য লিখেছেন তার সহধর্মীনি। সে লেখাটি পুনরায় পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

‘আমাদের বিয়ের বেশ কিছুদিন পর পর্যন্ত আমরা কলকাতায় ছিলাম। এরপর আমরা কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসেছি। রাজ্জাক তখনও এত বড় তারকা অভিনেতা হয়নি। টুকটাক কাজ করে। কিন্তু সেভাবে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিংবা সামনে এগুনোর পথও দেখছিলেন না। এরমধ্যে আমাদের পরিবারে আর্থিক সমস্যা দেখা দিল। সেসময় বাপ্পারাজের বয়স মাত্র আটমাস।’

‘তখন রাজ্জাক বারবার বলছিল চলো কলকাতায় ফিরে যাই। আমি বলেছিলাম, আমরা আর কয়েকটা দিন থাকি। তারপর যাই। তখন রাজ্জাকের বড় ভাই বারবার মানা করেছিলো কলকাতায় না যাওয়ার জন্যে। তাই ভেবেছিলাম এতবার মানা করার পর গেলে কেমন জানি আবার হয়ে যায়। তখন আমি তাকে বারবার বলেছি- স্রষ্ট্রা একদিন না একদিন আমাদের দিকে ফিরে তাকাবে। তারপর থেকে রাজ্জাক ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে ব্যস্ত হতে লাগল।’

‘আমিও কিন্তু একটা সময় রাজ্জাক অভিনীত ছবি হলে গিয়ে দেখেছি। এছাড়া আমরা যখন দুজন মিলেও হলে গিয়ে ছবি দেখতে যেতাম। তখন তো অনেক অনেক দর্শক হলে গিয়ে ছবি দেখত। তখন আমি রাজ্জাককে বলতাম, তুমি যদি এমন ভাল অভিনয় করতে পারো, তাহলে তোমার ছবিও দর্শক প্রেক্ষাগ্রহে এভাবেই গিয়ে দেখবে।’

‘রাজ্জাক শুটিংয়ের বিভিন্ন স্থিরচিত্র এনে আমাকে দেখাতো। আমি তো ভীষণ খুশি হতাম। তখন অনেক লোক অনেক নেতিবাচক কথাই বলত। সেগুলো নিয়ে নায়করাজ আবার মন খারাপ করত। আমি কি না কি মনে করি, এসব ভেবে। আমি তখন তাঁকে বলতাম, আমি তো তোমাকে বলেই দিয়েছি তুমি তোমার মত করে মনোযাগ দিয়ে অভিনয় করে যাও। তবে একটা বিষয় কি, রাজ্জাককে নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথাই আমাকে শুনতে হত। আমি কিন্তু বিষয়গুলো উপভোগ করতাম। আর বাসায় ফিরলে গল্প করে বিষয়গুলো নিয়ে দুষ্টুমি করতাম।’

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই। ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার পরপর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর ২২ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে শ্রদ্ধা জানাতে এফডিসি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ নেওয়া হয়। এরপর গুলশান আজাদ মসজিদে তার নামাজে জানাজা হওয়ার পর ২৩ আগস্ট সকালে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে