বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:৫২:২৭

নায়করাজ বাপ্পার একার সম্পত্তি না: ছটকু আহমেদ

নায়করাজ বাপ্পার একার সম্পত্তি না: ছটকু আহমেদ

বিনোদন ডেস্ক : নায়করাজ রাজ্জাকের জীবনী লিখছেন চিত্রনির্মাতা ছটকু আহমেদ। বইয়ের ৮০ ভাগ লেখা যখন শেষ, সেসময়ই এলো দুঃসংবাদ। বাবার জীবন নিয়ে এই বই লেখায় নাকি সায় নেই বড় ছেলে বাপ্পারাজের!

মঙ্গলবার ফেইসবুকে বাপ্পারাজ লিখেছেন, ‘আমার বাবার জীবদ্দশায় তাঁকে নিয়ে যখন অপমানজনক উক্তি চালাচালি হচ্ছিল, তখন যাঁরা না শোনার না জানার ভান করে নিশ্চুপ ছিলেন, আজ তাঁদের উক্তি নিয়ে ছটকু আহমেদ নায়করাজের জীবনী লিখছেন। ভালো প্রোজেক্ট নিয়েছেন ছটকু সাহেব। আপনার কলম তখন কালিহীন ছিল, তাই একটু প্রতিবাদও করতে পারেননি। আজ জীবনী লিখছেন বইমেলায় আসবে বলে? ক্ষ্যান্ত হন, ক্ষ্যান্ত হন। আমি এখনো মরে যাইনি।’

এছাড়াও দেশের প্রথম সারির এক দৈনিকের কাছে বাপ্পারাজ দাবি করেছেন তার বাবা জীবদ্দশায় নিজের জীবনী লেখার অনুমতি ছটকু আহমেদকে দিয়ে যাননি।

এ বিষয়ে ছটকু আহমেদ বলেন, ‘বাপ্পারাজের আপত্তির কোনো ভিত্তি নেই। আমি তো এই বই লেখার কাজ গতবছরের অক্টোবর থেকে শুরু করেছি। আপত্তি করতে চাইলে আরও আগেই করতে পারতো। রাজ্জাক সাহেব থাকতেই করতে পারতো।’

জীবনী লেখার অনুমতি রাজ্জাক নিজেই তাকে দিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে নিজের কাছে যথেষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেন ছটকু আহমেদ।

তিনি বলেন, “রাজ্জাক সাহেব ভিডিও করে বলে দিয়ে গেছেন যে ‘আমার গল্পটা আপনি লিখবেন’। অনুমতি চেয়ে তাকে একটা চিঠি লিখেছিলাম, সেখানেও তিনি স্বাক্ষর করে দিয়ে গেছেন। ওই সময় সব পত্রিকাতে এ নিয়ে নিউজ হয়েছে। রাজ্জাক ভাই যেদিন মারা যান, তার পরের দিন রাইজিং বিডিতে বলেছি, রাজ্জাক ভাইয়ের জীবিত অবস্থায় বই পুরোটা শেষ করতে পারলাম না। তখন ফেইসবুকে সেই লিঙ্কে বাপ্পা লাইকও দিয়েছে! পরে সম্রাট (নায়করাজের ছোট ছেলে) সব পত্রিকাকে বলেছে, ‘বাবা জীবনী লেখার অনুমতি কাউকে দিয়ে যাননি, একমাত্র ছটকু আঙ্কেলকে দিয়ে গেছেন’।”

ছটকু আহমেদ দাবি করেন বইটির প্রকাশক বিডিনিউজ পাবলিকেশন্স লিমিটেড-এর সঙ্গে চুক্তি হওয়ার আগেও নায়করাজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।

তার ভাষ্যে, “বিডি’র সঙ্গে চুক্তির আগের দিনও তাদের বাসায়  গিয়েছি। বাপ্পাকে বলেছি, আগামী রোববার চুক্তি করবো, তুমি এসো, তোমার দোয়াপ্রার্থী আমি। সে বলেছে, ‘জ্বী আঙ্কেল’। কিন্তু সে আসেনি। তারপরে এই অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে আমি ডেইলি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি, ভাইবারে। সে খালি বলে, কাল আসছি, পরশু আসছি। তিনদিন আগে সে আমাকে বললো, ‘আব্বাকে নিয়ে আপনি একটি বই লিখছেন, সেটা তো ভালোই। কিন্তু পাবলিশাররা তো এ বিষয়ে তো আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি’।”

“আমি বললাম, ‘পাবলিশার কথা বলেনি তো কি হয়েছে? তুমি আমার সঙ্গে কথা বল। বইটাতো বেরোবে। এটা নিয়ে লাভ-লোকসানের হিসাব করলে তো হবে না। তোমাদের বাবা তোমাদের জন্য অনেক সম্পত্তি রেখে গেছেন, একটা বইয়ে তার কোনো হেরফের হবে না। বরং তাঁকে নিয়ে একটা বই লিখলে, সবাই জানতে পারবে কী করে নায়করাজের সৃষ্টি হলো। লাইব্রেরিতে বসে তার ব্যাপারে পড়ার সুযোগ পাবে।”

ছটকু আহমেদের ভাষ্য, ‘এই বইটিতে রাজ্জাক ভাই ও তার পরিবারের তো কোনো বদনাম নেই। তোমাদের (বাপ্পারাজকে উদ্দেশ্য করে) যদি কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে তোমরা আমাদের সঙ্গে বস, আমি কি লিখছি তোমাদের দেখাই। তারপরেও যদি তোমাদের আপত্তি থাকে, তাহলে লেখা বন্ধ করে দেব। আমার তো এমন কোনো ঠেকা নেই এই বই লেখার। আমাকে রাজ্জাক ভাই বলেছিলেন দেখেই বইটা লিখছি। আমার তো বইটা লিখতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আজকে এক বছর ধরে এর ওর পেছনে ঘুরছি, তথ্য সংগ্রহ করছি। একেক জায়গায় যাচ্ছি। আরে, আমি একটা স্ক্রিপ্ট লিখলেও এক-দেড় লাখ টাকা পাই। আর সেখানে আমি এক বছর ধরে কষ্ট করছি, সেটা কি আমার স্বার্থ?’

‘বাপ্পা, এখন যদি আপত্তি তোলে, এই শেষ মুহূর্তে, যখন আশি শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে, তখন তো সেটা যুক্তি সংগত না! যুক্তিপূর্ণভাবে তারা কোনো কারণ দেখাক। তার একগুয়েমির জন্য এটা তো বন্ধ থাকতে পারে না। নায়করাজ তো তার একার সম্পত্তি নয়,’ বলেন ছটকু আহমেদ।

তবে নায়করাজের পরিবারের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার বিষয়েও মত দেন এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।

এ বিষয়ে ‘নায়করাজ রাজ্জাক: টালিগঞ্জ থেকে ঢালিউড’ বইটির প্রকাশনা সংস্থা বিডিনিউজ পাবলিকেশন্স লিমিটেড-এর পরিচালক গাজী নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ছটকু আহমেদের এই জীবনী লেখার অনুমতি আছে- এটার প্রমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই তার সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি।’

প্রকাশকদের তরফ থেকে বাপ্পারাজের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি- এই তথ্য ভুল দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেই তার সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। যেদিন চুক্তির অনুষ্ঠান, সেদিন ছটকু আহমেদ বলেছিলেন, উনি নিয়ে আসবেন বাপ্পারাজকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি।’

তবে নায়করাজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পথ এখনও বন্ধ হয়ে যায়নি বলেই আভাস দেন গাজী নাসিরউদ্দীন আহমেদ।

‘এখন প্রয়োজন হলে আমরা নায়করাজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। তবে সেটা ছটকু আহমেদের পরামর্শেই,’ বলেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বাপ্পারাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি  এসএমএস-এর মাধ্যমে জানান, এ প্রসঙ্গে তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা বলবেন।

প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে ছটকু আহমেদ যে বই লিখছেন, তার নাম ‘নায়করাজ রাজ্জাক: টালিগঞ্জ থেকে ঢালিউড’। ২০১৮’র জানুয়ারিতে বইটি প্রকাশ করা হবে। এখন থেকেই বাংলা একাডেমির আগামী অমর একুশে গ্রন্থমেলার অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বইটি।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে