রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:১৯:৫৯

আজ সফল নায়িকা শাবনূরের জন্মদিন

আজ সফল নায়িকা শাবনূরের জন্মদিন

বিনোদন ডেস্ক: দেশীয় চলচ্চিত্রের সফল নায়িকা শাবনূর। মনে করা হয় শাবনূর পরবর্তী সময়ে আর কোনো নায়িকা তার সমান জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেননি। চলচ্চিত্রে সালমান শাহ-শাবনূর জুটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। তবে সালমান শাহের অকাল মৃত্যুতে ক্যারিয়ারে কিছুটা হুমকির মুখে পড়লেও পরে রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস ও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি হয়ে অসংখ্য হিট ছবি উপহার দেন শাবনূর। ইন্ডাস্ট্রিতে চাউর আছে অনেক নায়কই শীর্ষে যেতে পেরেছেন কেবল শাবনূরের বিপরীতে নায়ক হওয়ার কারণেই।   

ঢাকাই ছবিতে ‘চাঁদনী রাতে’র মাধ্যমে অভিষেক হয় শাবনূরের। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি পরিচালনা করেন এহতেশাম। ছবিতে তার নায়ক ছিলেন সাব্বির। কিন্তু ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর সালমান শাহের সঙ্গে জুটি বেঁধে যেন বদলে যায় এই দুই তারকার জীবন। চিত্রনায়ক সালমান শাহের সঙ্গে ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাবনূর। যার সবগুলোই ছিল ব্যবসা সফল। এ জুটির প্রথম ছবি ‘তুমি আমার’ ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। পরিচালনা করেন জহিরুল হক। একইবছর শাহ আলম কিরণ তাদের নিয়ে ফারুক-কবরী জুটির ‘সুজন সখী’ চলচ্চিত্রের রঙিন পুনঃনির্মাণ ‘সুজন সখী’ নির্মাণ করেন। ১৯৯৫ সালে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ১৯৯৬ সালে ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ১৯৯৭ সালে শিবলি সাদিক পরিচালিত ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিগুলো দারুণ সাড়া ফেলে।

সালমানের পর নায়ক রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধেও অসংখ্য ছবি উপহার দেন শাবনূর। এই নায়কের বিপরীতে ১৯৯৭ সালে ‘মন মানেনা’ ও ‘তুমি শুধু তুমি’ মুক্তি পায়। এরপর ১৯৯৯ সালে রিয়াজ-শাবনূর জুটির ‘ভালোবাসি তোমাকে’ ও ‘বিয়ের ফুল’ ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়। বলা চলে সালমান শাহের পর রিয়াজ-শাবনূরই জুটি হিসেবে দর্শকের মনে আজো রাজত্ব করছে।

২০০০ সালে শাবনূর-রিয়াজ জুটির ‘নারীর মন’ ও ‘এ মন চায় যে’ মুক্তি পায়। পরিচালনা করেন মতিন রহমান। এছাড়া এফ আই মানিক পরিচালিত ‘এ বাঁধন যাবেনা ছিঁড়ে’, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, সাঈদুর রহমান সাঈদ পরিচালিত ‘এরই নাম দোস্তি’, এফ আই মানিক পরিচালিত ‘ফুল নেবে না অশ্রু নেবে’ নায়ক ছিলেন শাকিব খান ও ইস্পাহানি আরিফ জাহান পরিচালিত ‘গোলাম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

এরপর ২০০১ সালে আবারো দেখা মেলে রিয়াজ-শাবনূর জুটির। এসময় তারা দর্শকদের উপহার দেন ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ’। যেটি পরিচালনা করেন দেবাশীষ বিশ্বাস। একই বছর গাজী মাহবুব পরিচালিত ‘প্রেমের তাজমহল’ ও এফ আই মানিক পরিচালিত ‘স্বপ্নের বাসর’ ছবিগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে। ২০০২ সালে গুণী নির্মাতা আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী বধূ’, এফ আই মানিক পরিচালিত ‘হৃদয়ের বন্ধন’ ও ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘মিলন হবে কত দিনে’ ও ‘ভালবাসা কারে কয়’, শাহাদৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ এবং আজাদী হাসনাত ফিরোজ পরিচালিত ‘সবার উপরে প্রেম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

এরপর ২০০৩ সালে অভিনয় করেন মতিন রহমান পরিচালিত ‘মাটির ফুল’, এফ আই মানিকের ‘দুই বধূ এক স্বামী’, আমজাদ হোসেনের ‘প্রাণের মানুষ’, আজাদী হাসনাত ফিরোজের ‘বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ’, জিল্লুর রহমানের ‘স্বপ্নের ভালোবাসা’, মহম্মদ হান্নানের ‘নয়ন ভরা জল’ ছবিতে। ২০০৪ সালে এই নায়িকা কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘অন্য মানুষ’, আজাদী হাসনাত ফিরোজের ‘ফুলের মতো বউ’, মিজানুর রহমান খান দীপুর ‘যত প্রেম তত জ্বালা’, শিল্পী চক্রবর্তীর ‘তোমার জন্য পাগল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

২০০৫ সালে শাবনূর অভিনীত সিনেমার মধ্যে আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’, সালাউদ্দিন লাভলুর ‘মোল্লা বাড়ীর বউ’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘দুই নয়নের আলো’ এবং ‘আমার স্বপ্ন তুমি’। ‘দুই নয়নের আলো’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাবনূর।

২০০৬ সালে শাবনূর কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘জনম জনম’ অবলম্বনে নির্মিত ‘নিরন্তর’ ছবিতে অভিনয় করেন। পরিচালনা করেন আবু সাইয়ীদ। ২০০৭ সালের মুক্তি পায় মালেক বিশ্বাস পরিচালিত ‘মেয়ে সাক্ষী’, মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ এবং পি এ কাজল পরিচালিত ‘আমার প্রাণের স্বামী’।

এরপর ২০০৮ সালে পি এ কাজলের ‘১ টাকার বউ’ ছবিতে শাকিব খানের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হন শাবনূর। এই ছবিটিও ব্যবসা সফল হয়েছিল। ২০০৯ সালে রিয়াজের বিপরীতে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘তুমি আমার স্বামী’, এটিএম শামসুজ্জামান পরিচালিত ‘এবাদত’ ও আব্দুল মান্নান পরিচালিত ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ এবং শাকিব খানের বিপরীতে পি এ কাজল পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা’ ও শাহ মোঃ সংগ্রাম পরিচালিত ‘বলবো কথা বাসর ঘরে’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।

২০১০ সালে শাবনূর অভিনয় করেন মনতাজুর রহমান আকবরের ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’, মোহাম্মদ হোসেনের ‘চাঁদের মত বউ’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘মন ছুঁয়েছে মন’, চন্দন চৌধুরীর ‘ভালোবেসে বউ আনব’ এবং বি আর চৌধুরীর ‘বধূ তুমি কার’ ছবিতে।

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকাবস্থায় ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল হয় শাবনূরের। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তারা। এরপর মিডিয়াকে আড়াল করে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন শাবনূর। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ছেলে সন্তানের মা হন তিনি। তার ছেলের নাম আইজান নিহান।

মাঝে অবশ্য ২০১২ সালের শেষের দিকে ‘পাগল মানুষ’ ছবির কাজ শুরু করেন। কিন্তু শুটিং স্পটে পরিচালক এম এম সরকারের মৃত্যুতে ছবির কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বদিউল আলম খোকনের পরিচালনায় ছবির বাকি অংশের কাজ শেষ করেন শাবনূর।

২০১৩ সালে শাবনূর অভিনীত ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ ছবিটি মুক্তি পায়। ওই ছবিতে তার সহশিল্পী ছিলেন ফেরদৌস ও মৌসুমী। পরিচালনা করেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক।

শুধু ছবির সংখ্যা কিংবা কোনো পুরস্কারের বিচারে একজন শাবনূরকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তার মতো সুঅভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী বা পর্দার প্রেয়সী হয়তো আর পাওয়া যাবে না। শাবনূরের তুলনা শাবনূর নিজেই। শাবনূরের প্রতিদ্বন্দ্বী তিনিই। শাবনূর আছেন, থাকবেন, কোটি দর্শকের হৃদয়ে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে, শাবনূর নামটি ততদিন বেঁচে থাকবে।

শাবনূরের পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর। কিন্তু গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম তার নাম বদলে রাখেন শাবনূর। দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই নায়িকা আজকের দিনেই (১৭ ডিসেম্বর) যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। শাবনূরের জন্মদিনে এমটিনিউজ২৪.কম পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।  
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে