শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৩৬:৫৪

'অর্ধেক কাপড় পরে নাচলে মা-বাবা বাসা থেকে বের করে দেবেন'

'অর্ধেক কাপড় পরে নাচলে মা-বাবা বাসা থেকে বের করে দেবেন'

মনজুর কাদের: ফারিয়া শাহরিন ২০০৭ সালে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হন ফারিয়া শাহরিন। এরপর নাটক আর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন। মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের ‘কথা দিলাম’ প্যাকেজের বিজ্ঞাপনচিত্র তাঁর পরিচিতি বাড়িয়ে দেয় অনেক গুণ। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। তবে তাঁর সমসাময়িকদের তুলনায় ফারিয়ার কাজের সংখ্যা একেবারেই কম। এই কাজ কম করার পেছনে নাকি রয়েছে কিছু গল্প।

নতুন নাটকের কাজ করছেন?
জি। নাটকের নাম ‘আতঙ্ক’। ২১ ও ২২ জানুয়ারি শুটিং করব। এই নাটকে আমার সঙ্গে আছেন নাঈম। আমরা দুজন একসঙ্গে কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছি। তবে নাটকে এবারই প্রথম অভিনয় করব।

আপনি মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছেন বলেছিলেন, নাটকে কাজ করতে চান না। তাহলে এবার কাজ করছেন কেন?
এই নাটকের পরিচালকের সঙ্গে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতার সময় থেকেই পরিচিতি। তিনি যোগাযোগ করেছেন। গল্পটা একটু ভিন্ন মনে হয়েছে। আমার ভালো লেগেছে, এই নাটকে আমাকে দুই ভাবে উপস্থাপন করা হবে। তারপরও বলব, নাটক করতে ইচ্ছা করছে না। ২৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় চলে যাব, তার আগে একটা কাজ করছি।

নাটকের কাজ না করার ক্ষেত্রে আর কোনো কারণ আছে?
নাটকের প্রতি আগ্রহ কখনোই ছিল না। কিন্তু দেশের বাইরে যাওয়ার পর অনেক বন্ধু জেনে গেছে, আমি বাংলাদেশে নাটক করতাম। তাঁরা ইউটিউবে আমার কয়েকটি নাটক দেখেছে। তারা এসব নাটকের সাবটাইটেল খুঁজছে। ভাবলাম, এত বছর শোবিজে আছি, অথচ কাজ কত কম! আফসোস হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় দুটি কাজ করেছি। কিন্তু সেখানেও সম্মানী নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আমার কাছে বিষয়টা খুব বিরক্ত লাগে।

আপনি কেমন পরিবেশ চান?
আমি কাজ করব। কাজের বাইরে কারও সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করার কোনো দরকার দেখি না। কাজ শেষ হবে, সম্মানী দিয়ে দেবে। কিন্তু প্রযোজক চান, কাজ শেষে তাঁর সঙ্গে ঘুরব, কফি খাব, একটু হাহা হিহি করব, সব সময় যোগাযোগ রাখব। এসব আমি পারি না।

এসব প্রস্তাব কাদের কাছ থেকে পান?
প্রযোজকের কাছ থেকে পাই। তাঁরা ভাবেন, তাঁরা টাকা দিচ্ছেন, নায়িকা কেন তাঁদের সঙ্গে ঘুরবে না! নায়িকাকে বলেন, চলো ক্লাবে যাই, চলো ঘুরি। আমার কথা হলো, কাজ করতে আসছি। কাজ শেষে সম্মানী দিয়ে দেবেন, শেষ। এখন দেখি, যোগাযোগ রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। অনেকেই দেখি পরিচালক-প্রযোজকদের গিফট দেয়, খাওয়ায়। বাসায় দাওয়াত দেয়। আমি এসব করতে পারি না। আর এসব করি না বলেই হয়তো আমাকে ঘোরায়, সম্মানী ঠিকমতো দেয় না। তখন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

আপনি কারও নাম বলেননি। ঢালাওভাবে বলছেন। সবাই তো এমনটা না-ও হতে পারেন।
কারও নাম বলতে চাই না। সমস্যাগুলো বলেছি, এটাই যথেষ্ট। কাদের নিয়ে বলছি, যাঁরা সংশ্লিষ্ট, তাঁরা ঠিকই বুঝতে পারবেন। আর মিডিয়ায় আমার অনেক শত্রু। দেখা যাবে, কোনো দিন আমাকে মেরে চলে যাবে। কাউকে নিয়ে কথা বলা খুব বিরক্তিকর আর আতঙ্কের।

আপনার একটা সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। এরপর চলচ্চিত্রে আর কাজ করেননি। কেন?
প্রস্তাব তো অনেক পেয়েছি। কিন্তু যখন পরিচালক বলেন, প্রযোজকের সঙ্গে বসতে হবে, তাঁর সঙ্গে ডিনার করতে হবে। নাটকের সেটে অনেক সিনেমার পরিচালক দিনের পর দিন এসে বসে থাকতেন। কেউ কেউ ফোন করেছেন। ‘এই তো প্রেম’ সিনেমার জন্য নির্মাতা সোহেল আরমান অনেক অনুরোধ করেছেন। ‘আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই’ গানটা কতবার যে আমাকে শুনিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কাজটা করতে পারিনি। বিন্দু করেছে।

পরে আফসোস হয়েছে?
আমি শুনেছি এই ছবিতে শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করতে হবে। তখন আমাকে অনেকেই বলেছেন, শাকিবের সাথে কাজ করতে গেলে বিনিময়ে কিছু দিতে হয়। তাই করিনি।

এটা বিশ্বাসযোগ্য?
আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করেছি।

আর কোনো সিনেমায় কাজ করবেন না?
কিছুদিন আগে ‘হালদা’ দেখেছি। এই সিনেমায় শক্তিশালী অভিনয়শিল্পীরা কাজ করেছেন। এ ধরনের সিনেমার প্রতি আমার আগ্রহ আছে। কিন্তু আমাকে ডাকে না। পুরোপুরি বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় কাজ করতে ডাকে। অর্ধেক কাপড় পরে নাচলে মা-বাবা বাসা থেকে বের করে দেবেন। একটা রোমান্টিক গানে শাড়িও কিন্তু অন্য রকম আবেদন তৈরি করতে পারে।

ফেসবুকে আপনি যেসব ছবি পোস্ট করেন, এসব ছবিকে অনেকেই ‘আবেদনময়ী’ বলেন।

তাই বলে এইভাবে কাজ করতে চাই না। স্লিভলেস পরা যায়, কিন্তু বিকিনি টাইপ পোশাক পরে অভিনয় করতে পারব না। পর্দায় অনেক নায়িকাকে যেভাবে দেখি, ভয় লাগে। আমি ভদ্রভাবে কাজ করতে চাই। আমার কাছে মা-বাবা, পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাইলেও খোলামেলা হয়ে নাচতে পারব না।

সিনেমা নিয়ে আপনার মন নেতিবাচক ধারণায় ভরে গেছে।
আমি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পার হয়েছি, এমন ধারণা হওয়া স্বাভাবিক। সব সময় শুনেছি, সিনেমা করতে হলে প্রযোজকের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হয়। আর অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর মিটিং করতে গিয়ে এসবের কিছু প্রমাণও পেয়েছি।

কোন সময়টায় বেশি নেতিবাচক ধারণা হয়েছে?
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায় নাম নিবন্ধন করেছিলাম। বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন করার পর এত আপত্তিকর ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি। এত নোংরা প্রস্তাব পেয়েছি, যা মনে হলে গা শিওরে ওঠে।

বাংলালিংকের ‘কথা দিলাম’ বিজ্ঞাপনচিত্র অনেকেই পছন্দ করেছে।
আমার ওই বিজ্ঞাপনচিত্র এত হিট হয়, এরপরও আমার কাজ কম। এমন একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের পর শোবিজের কিছু মানুষ বাজে প্রস্তাব দিয়েছেন, অনেক বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আপত্তিকর প্রস্তাব পেয়েছি। তাঁরা আমার সঙ্গে ঘুরতে চান। সরাসরি বলেছে, ‘কত টাকা হলে আপনি যাবেন?’ এসব শোনার পর নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। ভয় পেয়ে যাই। বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনের পর বিয়ের প্রস্তাবও পেয়েছি। অনেকে বলতেন, বিদেশে নিয়ে যাবেন। এত সব ঘটনার পর ভাবলাম বিজ্ঞাপন থাক, কিছুদিন চুপ থাকি।

এসব কষ্টের কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করেছেন?
আব্বু-আম্মুকে বলার সাহস পাইনি। কাছের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতাম। তখন সবাই বলত, কয়েকটা দিন চুপ থাকো, কাজ করার দরকার নেই। বিশ্ববিদ্যায়ের একজন শিক্ষক ও একটি পত্রিকার সম্পাদক আমাকে বিয়ে করার জন্য নাটক প্রযোজনায় নেমে গেলেন। শুটিং সেটে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাগল করে ফেলার অবস্থা! এতটা বিরক্ত হয়েছি যে বাধ্য হয়ে শুটিং সেটে আমার বন্ধুকে নিয়ে যেতাম।

এবার বলুন, বিয়ে করছেন কবে?
কবে করব জানি না। যখন হবে, জানতে পারবেন।-প্রথম আলো
এমটি নিউজ/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে