বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮, ১২:২৬:৫০

আমি বলতাম,‘সি ইজ ফাইন'

আমি বলতাম,‘সি ইজ ফাইন'

বিনোদন ডেস্ক: বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নায়িকা সুচিত্রা সেন। তিনি ছিলেন নায়িকাদের নায়িকা অর্থাৎ মহানায়িকা। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি এই দিনে ৮২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান এই কিংবদন্তী।

লাখো-কোটি ভক্ত ছেড়ে পৃথিবীকে বিদায় জানালেও সুচিত্রা সেন ফেলে গেছেন তাঁর যোগ্য উত্তরসূরিদের। মহানায়িকার তেমনই একজন উত্তরসূরি তাঁর নাতনী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাইমা সেন। দেখতেও তিনি দিদিমা সুচিত্রা সেনের মতো। তিনি তাঁর দিদিমাকে ‘আম্মা’ বলে ডাকতেন।

বাঙালির গর্ব সুচিত্রা সেনের চতুর্থ প্রয়াণ দিবসে নাতনী রাইমা সেন ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় মহানায়িকাকে নিয়ে গভীর স্মৃতিচারণ করেন। সেই স্মৃতিচারণের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো এমটি নিউজ পাঠকদের জন্য-

নাতনী হিসেবে দিদিমা সুচিত্রা সেনকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন রাইমা সেন। এখনো দিদিমার স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান রাইমা। খুব আবেগ তাড়িত হয়ে আনমনে কথা বলে যান দিদিমার সঙ্গে। তাঁর ভাষায়,

‘অবান্তর স্মৃতির ভেতরে যার মায়া মুখ, গন্ধ, স্পর্শ নিয়ে রোজ আমার বেঁচে থাকা। আলাদা করে অন্তত আমায় তাঁকে মনে করতে হয় না। হঠাৎ শাড়ির ভাঁজে, মেক আপ রুমের আয়নায়, খোঁপার সাজে আম্মা চলে আসে। তাঁকে দেখিয়ে নেই, ‘‘দেখ সুন্দর লাগছে তো? স্টাইলটা ঠিক আছে তো...?’’

অন্তত আজকের দিনে জীবনটাকে একটু অন্যরকমভাবে দেখছেন রাইমা। আম্মা সুচিত্রা সেন তাঁদের কাছে আলাদা কোন সত্তা নয়। আম্মা মানেই তাঁরা আর এক অন্য গভীর জীবন।

সুচিত্রা সেনের সাজ সরঞ্জামের অনেক কিছু আজও সজতনে রেখে দিয়েছেন রাইমা। তাঁর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সোনার তৈরি হাতের বালা। আজও সেই স্মৃতি জড়িয়ে রেখেছেন রাইমা।

‘আজও আমার হাতে আম্মার মিনাকারী সোনার বালা। মা (মুনমুন সেন) পরিয়ে দিয়েছিল আমায়। মা বিশ্বাস করে, তাঁর মধ্যে আম্মার শক্তি ভরা আছে। এই বালা আমার জন্য সব ভাল পাওয়া— পৃথিবীর মাটি চিরে নিয়ে আসবে। সত্যি তাই, এই সুন্দরী বালা আমার জন্য বরাবর একরাশ খুশি নিয়ে আসে। খুশির আর এক নাম যে আম্মা।‘

শুধু সোনার তৈরি হাতের বালা নয়। সুচিত্রা সেনের পরা শাড়ি, গয়না গায়ে জড়িয়ে বাড়িতে, পার্টিতে সবখানে ঘুরে বেড়ান রাইমা। আম্মার গায়ের গন্ধ খুঁজে বেড়ান। এমনকি আম্মার মতো করে সাজার চেষ্টা করেন সবসময়।

এখনো রোজ আম্মার ফ্ল্যাটে জাতায়াত করেন রাইমা সেন। ছোট ড্রইংরুম। চোদ্দ বাই চোদ্দ একটি ঘর। দামি একটি টেবিল ছাড়া তেমন কোন আসবাবপত্র নেই। আম্মার ছবি ঝুলছে দেওয়ালে।

সুচিত্রা সেন সম্পর্কে তাঁর পরিবারের লোকজন কেন খুব একটা কথা বলতেন না। এই নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু সুচিত্রা সেন নিজেই তাঁর সম্পর্কে খুব একটা বলতে পছন্দ করতেন না বলে উল্লেখ করেন রাইমা সেন।

তিনি বলেন, ‘আম্মার জন্মদিন আর চলে যাওয়ার দিনের আগে আগে মিডিয়া আমাকে এবং মাকে ঘিরে ধরে। অথচ কী আশ্চর্য, কলকাতাবাসী সবাই জানে, এক সময়, কিছু দিন পর পর একটা অদ্ভুত গুজব গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ত যে, একটু আগে আম্মা প্রয়াত হয়েছে। আমরা এর সঙ্গে খুব পরিচিত। কারণ কনফার্মেশনের জন্য কেউ না কেউ ফোন করত আর ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করত আমায়, কী বাড়ির সবাই ভাল তো? আমি বলতাম, ‘‘সি ইজ ফাইন।’’ সেটা হয়তো কুড়ি নম্বর কল ছিল।‘

নিজের বিয়ে দেখে যেতে পারলে সুচিত্রা সেন খুব খুশি হতেন বলেও উল্লেখ করেন রাইমা সেন।

‘আম্মা চেয়েছিল আমি বিয়ে করে সেটল করি। রিয়া যে বিয়ে করেছে আমি জানি, আম্মা খুব খুশি! রিয়ার বিয়ের পর আরও বেশি করে অনেকে জানতে চায় কবে বিয়ে করব আমি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আম্মা জানে যে আমি এখনও কেন বিয়ে করছি না, কী কারণ আম্মা ঠিক বুঝেছে। আম্মা জানে আমি এই মুহূর্তে আমার কেরিয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত। সব কিছুর সময় থাকে, আমার বিয়ের জন্য নিশ্চয়ই একটা সময় ঠিক করা আছে।‘

প্রতিবছর ১৭ তারিখ মহানায়িকার প্রয়াণ দিবসে পূজা করেন রাইমা সেনসহ গোটা পরিবার। তিনি মনে করেন সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগাযোগ রয়েছে।

‘অনেকে আমায় জিজ্ঞেস করে, আমি না রিয়া কে বেশি আম্মার মতো? আমি ঠিক উত্তর দিতে পারি না। আমার তো মনে হয় আমি আর রিয়া দু’জনে আম্মার একটা অংশ। আচ্ছা, এই আম্মার মতোই আমি কোনও দিন সকলের সামনে থেকে হারিয়ে যাব? গায়ে জড়াব অন্ধকার? হবে কি এমন? উঁহু...বলব না!

এভাবেই প্রাণের চেয়ে প্রিয় আম্মার (সুচিত্রা সেন) সঙ্গে প্রতিনিয়ত আনমনে কথা বলে চলেন রাইমা সেন।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে