বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮, ১১:২২:৩২

রাস্তায় বার হলে যদি মব্‌ড না-ই হলাম, তাহলে এত পরিশ্রম করার অর্থই হয় না

রাস্তায় বার হলে যদি মব্‌ড না-ই হলাম, তাহলে এত পরিশ্রম করার অর্থই হয় না

বিনোদন ডেস্ক: গত সপ্তাহেই তো অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড সফর সেরে ফিরেছেন। কেমন হল আপনার ড্রিম ট্যুর? অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের দিকটায় বেড়াতে যাওয়ার। নিউজিল্যান্ডের বেশ কিছুটা অংশে নিজে ড্রাইভ করেছি। অস্ট্রেলিয়ায় পুরনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হল। ওরা ওখানে এখন সেট্‌ল করে গিয়েছে। অনেক নতুন বন্ধুও তৈরি হল। স্ত্রী এবং মেয়ের সঙ্গে সুন্দর কাটিয়েছি সময়টা।

আপনি তো গত ক্রিসমাসের সময় থেকেই দেশের বাইরে ছিলেন?
হ্যাঁ, ক্রিসমাস এবং নিউ ইয়ারটা এবার বিদেশেই কাটিয়েছি।

ওখানে তো নিউ ইয়ারটা দারুণভাবে সেলিব্রেট করা হয়...।
যে কোনও সেলিব্রেশনেরই নিজস্ব মজা রয়েছে। গত বছর পুজোয় কোথাও বেড়াতে যেতে পারিনি। তাই ক্রিসমাসের সময়টা টার্গেট করেছিলাম। মেয়ের স্কুলে ছুটি পাওয়াটাও একটা ব্যাপার! এই সময়টা ওদের ছুটি থাকে, তাই প্ল্যানটা ডিসেম্বরেই করেছিলাম। কলকাতায় থাকলে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ক্রিসমাস— সেভাবে এনজয় করতে পারি না। কেন, সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দিতে হবে না! বাইরে গেলে এই ব্যাপারগুলো থাকে না।

শহরে রাস্তায় বার হলে মব্‌ড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। অন্যদিকে, বিদেশে সহজেই ট্রামে-বাসে ট্রাভেল করতে পারেন। কী বৈপরীত্য!
কলকাতায় রাস্তায় বার হলে যদি মব্‌ড না-ই হলাম, তাহলে এত পরিশ্রম করার অর্থই হয় না। আমি তো বিদেশেও মব্‌ড হতে চাই। তবে এবার অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে গিয়ে যা দেখলাম— বাংলা ছবি যদি ওখানে রিলিজ করা যায়, চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি, ছবি ভাল ব্যবসা করবে। বাংলা ছবির মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্ভাগ্যটা আমাদের, যে আমরা সেই জায়গাগুলো এক্সপ্লোর করতে পারিনি। সারা বিশ্বের এত বড় একটা জনসমষ্টি বাংলায় কথা বলে। হিন্দি ছবির কথা ছেড়ে দিন, সেগুলো সারা বিশ্বে মুক্তি পায়। দক্ষিণী ছবিগুলোকেই দেখুন। আমেরিকায় ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে। এটা কিন্তু একদিনে হয়নি, সময় লেগেছে। হয়তো গত দশ বছর ধরে ওরা সারা বিশ্বে ছবিগুলো রিলিজ করে বাজার তৈরি করেছে। তারপর আজকে তারা ব্যবসা করতে পারছে। বিদেশে বাঙালি দর্শকই ডিপ্রাইভ্‌ড হন। ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা সেখানে বাংলা ছবি দেখতে পান না। পঞ্জাবি, মরাঠি ছবিও যদি বিদেশে ব্যবসা করতে পারে, আমরা কেন পারব না? উই নিড টু পুশ হার্ডার।

নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে আপনার অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি ইতিমধ্যেই দর্শক বেশ পছন্দ করেছেন...।
‘ইনস্পেক্টর নটি কে’ দেখার পর দর্শক এই জুটিটাকে আরও ভালবেসে ফেলবেন। ছবিতে একটা মিষ্টি লাভস্টোরি রয়েছে, যেটা ‘বাদশা’ এবং ‘বস্‌ টু’এ ছিল না। রমকম ছবি এটা, দর্শকের ভাল লাগবে।

টালিগঞ্জে ইদানীং একটা কথা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে জানেন...?
(অবাক হয়ে) কী?

কলকাতার অনেক প্রযোজনা সংস্থা যখন বাংলাদেশের প্রভাবশালী প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে টাই-আপ রাখতে পারছে না, সেখানে আপনি নিঃশব্দে সেই প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশে ছবির ব্যবসা সুনিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে টাই-আপ নতুন কোনও ট্রেন্ড নয়। মাঝখানে হয়তো সেভাবে যৌথ প্রযোজনায় ছবি হচ্ছিল না। ট্রেন্ডটা আবার শুরু হয়েছে এখন। একটি ছেলে বা মেয়েকে অভিনেতা বা স্টার হতে গেলে ইন্ডাস্ট্রিতে অন্তত ১৫ বছর কাটাতে হয়। মোটামুটিভাবে নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে এই সময়টা লাগেই। সেই সময়টা পার হওয়ার পরই কিন্তু আমি বাংলাদেশের সঙ্গে টাই-আপের কথা ভেবেছি। ‘বাদশা’র পর আমার সঙ্গে ‘জ্যাজ মাল্টিমিডিয়া’র কথা হয়েছিল। আমরা একসঙ্গে ছবিও করছি। তবে শুধু বাংলাদেশ বলে নয়, সারা বিশ্বে একটাই জিনিস ম্যাটার করে— সেটা ছবির কনটেন্ট। কনটেন্ট ভাল হলে, আপনি সারা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে ব্যবসা করতে পারবেন।

ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার সহকর্মীরা একবাক্যে একটা কথা স্বীকার করেন, যে আপনি বর্ন ফাইটার...।
না না...! নিজের উপর বিশ্বাস আর উপরওয়ালার উপর ভরসাটা রাখা দরকার। কাজের ক্ষেত্রে আমি সেভাবে বাড়তি কোনও এফর্ট দিই না, নিজে থেকেই আমার জন্য উপায় তৈরি হয়ে যায়!

ঈশ্বরে খুব বিশ্বাস করেন, তাই না?
অফকোর্স। আই অ্যাম আ স্পিরিচুয়াল পার্সন।

আপনি নাকি সেট’এ ফারিয়ার সঙ্গে খুব দুষ্টুমি করতেন? এবং শ্যুটিংয়ের সময় তিনি নাকি আপনাকে নতুন রূপে চিনেছেন?
ফারিয়া তো ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন এসেছে। আস্ক মাই আদার কলিগ্‌স, যাঁরা আমার সঙ্গে রমকম করেছেন। আই অ্যাম অলওয়েজ নটি (হাসি)!

আপনি এবং ফারিয়া এখন নাকি ‘অরেঞ্জ বাডি’ হয়ে গিয়েছেন?
ফারিয়া আপনাকে কথাটা বলেছে নিশ্চয়ই? ফারিয়া যে দিনের কথা বলেছে, সেদিন আমি নিশ্চয়ই অরেঞ্জ টি-শার্ট পরেছিলাম। ইট ওয়াজ ফান টু ওয়ার্ক উইথ হার। ফারিয়ার মধ্যে ভাল কাজ করার প্রবল ইচ্ছে রয়েছে। ও যদি ধৈর্য ধরে কাজটা করে যায়, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ওর ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। তবে ফারিয়াকে বুদ্ধি করে চলতে হবে। ওর অবজারভেশন পাওয়ারটা দারুণ।

অনেকে বলেন, জিৎ নাকি নিজের কমফর্ট জোন ছেড়ে বার হতে চান না?
কে বলল? আমার তো মনে হয়, আমার মতো কমফর্ট জোনের বাইরে গিয়ে কাজ আর কেউ করে না।

নিন্দকেরা তো প্রায়ই আপনার অবাঙালি লুক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন?
(একটু থেমে) আই অলওয়েজ ফলো ইন্টারন্যাশনাল ট্রেন্ডস। সারা বিশ্বে যেটা চলছে, আমি সেটা মেনে চলার চেষ্টা করি। আর দর্শক মূল ধারার ছবিতে নায়ককে লার্জার দ্যান লাইফই দেখতে চান! এটা নিয়ে সমস্যাটা কোথায়? হলিউডেও তো সুপারহিরো ছবি হচ্ছে। সেগুলোও তো লার্জার দ্যান লাইফ! কই সেগুলো নিয়ে তো কথা হয় না? আমি যদি লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্রে অভিনয় করে, বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারি— মন্দ কী? আর মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি, টলিউডের ক’জন নায়ক করছেন, সেটা আমাকে আগে বলুন তো!

অন্যধারার ছবিতে কাজ করতে ইচ্ছে করে না?
করে তো! কিন্তু সেই রকম কোনও সুযোগও তো আসতে হবে।

এতদিনের কেরিয়ারে আপনার দেখা সবচেয়ে ‘নটি’ সহ-অভিনেত্রী?
(দুষ্টু হেসে) আমি বর্তমানে থাকতেই ভালবাসি। তাই নুসরাত ফারিয়া।

‘ইনস্পেক্টর নটি কে’র টাইটেল ভিডিওটা দেখে অনেকেই তো ‘দবং’এর সঙ্গে মিল পেয়েছেন?
পুলিশের পোশাক পরে নাচার কথা বলছেন? দেখুন, গানটার মধ্যে একটা ফানি এসেন্স রয়েছে। যেটাকে আমরা এক্সপ্লোর করতে চেয়েছি। দর্শক ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবেন, আমি নটি কে সেজে কোন লেভেলের দুষ্টুমি করেছি।

আপনি নাকি ‘গ্রাসরুট...’এর ব্যানারে নতুন ওয়েব সিরিজ শুরু করতে চলেছেন?
পরিকল্পনা তো অনেক কিছুই রয়েছে। কিন্তু, সিনেমা হল মাদার অফ অল এনটারটেনমেন্টস। আর আমরা সেটাই আপাতত করছি।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মনোপলি সামলান কীভাবে?
মনোপলি রয়েছে নাকি? আমার তো মনে হয়নি কখনও!

২৫ কোটি টাকা বাজেটের ছবি। প্রযোজক হিসেবে বাড়াবাড়ি মনে হয় না? বাংলা ছবির ২৫ কোটি টাকা তোলার ক্ষমতা রয়েছে!-এবেলা
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে