রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮, ১০:২২:৫৮

জীবিকার তাগিদে কি করছেন অঞ্জু ঘোষ জানলে অবাক হবেন!

জীবিকার তাগিদে কি করছেন অঞ্জু ঘোষ জানলে অবাক হবেন!

বিনোদন ডেস্ক: অঞ্জু  ঘোষ বাংলা সিনেমায় একসময় যাদের বিশাল আধিপত্য ছিল, ছিল অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা আর তুমুল জনপ্রিয়তা, সেই সুপারহিট নায়িকাদের একজন হচ্ছেন অঞ্জু ঘোষ। জনপ্রিয়তা আর রুপালি পর্দার মোহ থেকে এখন তিনি অনেক দূরে।

জীবিকার তাগিদে এখনো কাজ করেন কলকাতার যাত্রাপালায়। বয়সের কারণে আগের মতো মুখ্য চরিত্রে আর অভিনয় করতে পারছেন না। মা, খালা জাতীয় ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। যে কারণে রুজি-রোজগার কমে গেছে। থাকেন সল্ট লেক রোডে। জানান অঞ্জুর ঘনিষ্ঠ এক সূত্র।

চলতি বছরের মে মাসে ঢাকার কয়েকজন সাংবাদিক কলকাতায় অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন। ঢাকার চলচ্চিত্র জগৎ ও চলচ্চিত্রকারদের সম্পর্কে জানতে চান তিনি। দিতি, চাষী নজরুল ইসলাম, বুলবুল আহমেদ, শহীদুল ইসলাম খোকন, মোহাম্মদ হান্নান, শিবলী সাদিক, আহমদ জামান, আওলাদ হোসেন মারা গেছেন জেনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কিছু সময় আনমনা থাকেন।

অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘কলকাতার চেয়ে ঢাকার চলচ্চিত্রের সময়টা অনেক বর্ণিল আমার কাছে। দীর্ঘ ১৬ বছর কাজ করেছি নিজ দেশের ছবিতে। সময়মতো ঘুম আর খাওয়া দাওয়া নেই। আজ কক্সবাজার তো কাল মানিকগঞ্জের ঝিটকায়। পরশু আবার এফডিসিতে। সে কি যে এক আকাশ পাতাল ব্যস্ততা ছিল আমার। চিত্রালীর বেলাল আমার ঘুমের ছবি তুলে ছাপিয়ে দিল। আওলাদ ছায়াছন্দে আমার হাঁটুর উপরে শাড়ি পরা ছবি ছাপিয়ে লিখে দিল দেশীয় চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার আগমন। এখনো সেই সময়গুলো মনে করে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই।

আহমেদ জামান চৌধুরী, হীরেন দে, ইমরুল শাহেদ ছিলেন আমার অভিভাবকতুল্য। তাদের আশীর্বাদে অভিনেত্রী অঞ্জু হতে পেরেছি। বিখ্যাত এইচ এম ভি কোম্পানি গোল্ডেন ডিস্ক দিয়ে সম্মান জানাল আমাকে।’ অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না আমার। স্বল্প সময়ে ক্যারিয়ারের রমরমা অবস্থা দেখে অনেকেই আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে।

মানে ফিল্মি পলেটিক্সের শিকার হই আমি। তাই বাধ্য হয়েই কলকাতায় স্থায়ী হই।’ দেশে খুব একটা আসেন না এবং আসারও ইচ্ছা নেই অঞ্জু ঘোষের।

১৯৯৬ সালে কলকাতায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানকার মঞ্চ ও ছবিতে নিয়মিত হন। ভারতেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। প্রথমে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে অভিনয় করেন।

এই ছবিটি সেখানে যেদিন মুক্তি পায় সেদিনই মুক্তি পেয়েছিল বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের ‘হাম’ ছবিটি। কিন্তু ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছাড়িয়ে গিয়েছিল ‘হাম’ ছবির ব্যবসাকে।

অঞ্জুর ছবিটি দেখে অমিতাভ বচ্চন তার অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন। সেখানে অঞ্জু-তাপস জুটি খুব জনপ্রিয় ছিল। কলকাতায় প্রায় দুডজন ছবিতে কাজ করেন।

২০০৮ সাল পর্যন্ত যাত্রাপালায় অঞ্জুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। ২০০৪ সালের পর থেকে কলকাতার ছবিতেও চাহিদা কমলে যাত্রামঞ্চেই নিয়মিত

হন তিনি। নামিদামি যাত্রাপালায় নিয়মিত অভিনয় করেন তিনি। এর মধ্যে বিশ্বভারতী অপেরা উল্লেখযোগ্য। এই সংগঠনে জয়ন্ত কুমার, তরুণ রক্ষিত, সমর গঙ্গোপাধ্যায়, মিস কোয়েল, প্রশান্ত সরকারের মতো খ্যাতিমান যাত্রাশিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করেন অঞ্জু।

বিশ্বভারতীর ‘পদ্মাপাড়ের পদ্মিনী’ যাত্রার মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে সুনাম কুড়ান তিনি।

২০০২ সালে বিয়ে করেন যাত্রাশিল্পী সঞ্জীবকে। ২০০৬ সালে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে প্রায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন শুরু করেন। মঞ্চেই মনোযোগ দেন।

দেশে খুব একটা আসা হয় না তার। সূত্রটি জানায়, ১৯৮৫ সালে তার ‘রু’ আদ্যাক্ষরের প্রেমিক এক চিত্রনায়ক অন্যত্র বিয়ে করলে ভেঙে পড়েন অঞ্জু।

ওই বছরেই জেদের বশে বিয়ে করেন চিত্রপরিচালক এফ কবির চৌধুরীকে। সে বিয়ে টিকেছিল মাত্র চার মাস। এরপর অঞ্জুর জীবনে ছিল শুধুই হতাশা। তার ছবিও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হতে থাকে।

১৯৮৯ সালে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ মুক্তি পেয়ে ব্যবসাসফল হলে আবার আশার আলো দেখতে থাকেন তিনি। কয়েকটি মাত্র ছবি ব্যবসা করলেও আগের মতো ক্রেজ ছিল না তার।

প্রেমঘটিত নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে তার ফিল্মি ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫ সালে সাইদুর রহমান সাইদ অঞ্জুকে নিয়ে ‘নেশা’ শিরোনামে একটি ছবি নির্মাণ শুরু করেন।

কিন্তু কাজ অসমাপ্ত রেখেই ১৯৯৬ সালে কলকাতা চলে যান অঞ্জু। সূত্র জানায়, এরপর হাতেগোনা মাত্র কয়েকবার দেশে আসেন তিনি।

অঞ্জুর প্রকৃত নাম অঞ্জলি ঘোষ। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার জন্ম। স্বাধীনতার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার হয়ে যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন ও গাইতেন।

১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে জনপ্রিয়তার সঙ্গে অভিনয় করেন। তখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম হলে নিয়মিত নাটক করতেন তিনি।

দুবাইওয়ালা, রিকশাওয়ালা, সাতভাই চম্পা, রূপবানসহ প্রচুর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মঞ্চায়িত নাটকে অভিনয় করেন এবং একশ্রেণির দর্শকের কাছে রীতিমতো ক্রেজে পরিণত হন তিনি।

তার সঙ্গে এসব নাটকে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন চট্টগ্রামের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা পংকজ বৈদ্য। যিনি পরবর্তীতে সুজন নামে ‘উজান-ভাটি’সহ বেশ কটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে একচ্ছত্র আধিপাত্য ছিল অঞ্জু-পংকজ বৈদ্য জুটির। ১৯৮২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী চলচ্চিত্রে আনেন তাকে।

নির্মাণ করেন ‘সওদাগর’ শিরোনামের একটি ছবি। বেশ খোলামেলা হয়ে ওই ছবিতে অভিনয়ের কারণে একশ্রেণির দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অঞ্জু ঘোষ।

এরপর এই নির্মাতার আরও কয়েকটি ছবিতে এ ধরনের অভিনয় করে সমালোচিত হন।

ঢালিউডে প্রায় অর্ধ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে