সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:১৫:২৫

'১২ বার সুইসাইডের কথা ভেবেছি'

'১২ বার সুইসাইডের কথা ভেবেছি'

বিনোদন ডেস্ক: শুনতে খুব সহজ শোনালেও যে বিষয়টার মধ্য দিয়ে যায় সেই জানে এইটা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন কতটা কঠিন! একসময় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন মডেল-অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া! একবার-দুবার নয়, ছয় মাসে অন্তত ১২ বার আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন, নিজের ফেসবুকে হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন ‘দেবী’ অভিনেত্রী। ফারিয়া বলেন, ‘ডিপ্রেশন শব্দটা শুনতে সহজ শোনালেও যিনি এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যান তিনিই শুধু জানেন, এটা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন কতটা কঠিন!’

আমার প্রথম ডিপ্রেসন শুরু হয় ২০১৫ সালে একটা 'সামান্য' ব্রেক-আপ এর পর পর! যদিও এখন সামান্য বলছি , তখন বিষয়টা মোটেও সামান্য ছিল না। সেসময় আমি কিংবা আমার পরিবার বুঝতে পারেনি যে, আমার সেই অস্বাভাবিক আচরণ, রুমের মধ্যে নিজেকে বন্ধ করে রাখা, সারাক্ষণ ঘুমানোর চেস্টা করা, বন্ধু-বান্ধব দের সাথে শেয়ার না করে ফেসবুকে সংবেদনশীল কথা বার্তা লিখে ফেলা, রাতের পর রাত ঘুম না হওয়ায় শুটিংয়ের সেট এ খিটখিটে মেজাজে থাকা ডিপ্রেসানেরই একটা বহিঃপ্রকাশ। সেই ডিপ্রেসন প্রায় ছয় মাসের মতো ছিল, আমার বাবা-মার চেস্টায় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়!

দ্বিতীয় বার আবার বুঝি, বাবা চলে যাওয়ার পর! যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিল, আর আমার বাবাকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন শুধু তাঁরাই জানে আমার বাবা আর আমার বন্ধুত্বের পরিধি। বাবার মৃত্যুর পর আমার মনে হলো, আমার আসলে কেউ নেই, মার কিছু হলে আমার কি হবে!  কিন্তু ততদিনের আমার মা এবং আমি দুজনই বুঝে গেছি যে আমি ডিপ্রেসনে. আমার মা অনেকটা জোড় করেই আমাকে বাবা চলে যাওয়ার ১৫দিনের মধ্যেই কাজে পাঠায়! তখন যেটা হলো, কাজে থাকলে আমি সব ভুলে যাই, যেহেতু আমার পেশাটাই অদ্ভুত একটা পেশা, যে সেট এ ঢুকলেই আমরা অন্য কেউ হয়ে যেতে পারি! 

কিন্তু বাসায় ফিরলে সেই একই অনুভুতি!কিন্তু আমার মা কিন্তু আর সেই রিস্ক নেয়নি, আমাকে 'ক্লিনিকেল সাইকোলজিস্ট' এর কাছে পাঠান এবং ২/৩ বার কথা বলার পরেই আমার ডিপ্রেসন সেবারের মত চলে যায় !

এখন কথা হলো একথা কেন লেখা! কারণ 'সেই প্রথমবারের' ছয় মাস ডিপ্রেসড থাকা অবস্থায় কম করেও অন্তত ১২ বার আমি সুইসাইডের কথা ভেবেছি! ঘুমের ঔষধের পাতা হাতে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করেছি। সেসময় আমি যদি চলে যেতাম, তাহলে কি আজকে আমি শবনম ফারিয়া হতে পারতাম?
আপনারা/তোমরা আমাকে চিনতে? অচেনা/অজানা এতো মানুষের ভালোবাসা পেতাম? একজন মানুষের ভালোবাসা পাইনি বলে এতো এতো ভালবাসা থেকে বন্চিত হতাম? আর এখন যে মানুষটি আমার হাতটা ধরেছে, আমার সব স্বপ্নের সঙ্গী, তাকেইবা পেতাম কোথায়?  অন্তত তার সাথে অকারণেই ঝগড়াগুলো কীভাবে করতাম?
জীবনকে সুযোগ দিতে হয়, ভুল করতে হয়, ধাক্কা খেতে হয়, নয়তো তুমি যখন অনেক বড় কেউ হবে, তোমার বায়োপিকে কি লিখবা? 

এসব ঘটনা না থাকলে তো বোরিং হয়ে যাবে।  সঞ্জয় দত্ত এমন অঘটন না ঘটালে আমরা 'সানজুর' মতো অসাধারণ সিনেমা কোথায় পেতাম! কিংবা বাবার চলে যাওয়ার পর যদি কিছু করতাম তাহলে আমার মার কি হতো একবার ভাবতে পারেন, আমার মার পৃথিবী আমাকে ঘিরে , আমার কিছু হলে তার কি হতো! 

প্রত্যেকটা বাবা-মার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তার সন্তান, তবে একেকজনের প্রকাশ ভঙ্গি একেক রকম! কেউ আদর করে কপালে চুমু দিয়ে বলে , 'বাবা হোমওয়ার্ক টা করতে যাও'  আবার কেউ চিৎকার দিয়ে বলে কুত্তার বাচ্চা, এখনো পড়তে বসলি না? কিন্তু দুজনের মোটিভ কিন্তু একই।  আমার মা যেমন নামাজ নিয়ে কিন্চিত যন্ত্রণা দেয়, যখন মুড ভালো থাকে 'বাবা নামাজটা পরো, সব সমস্যার সমাধান এইটা, বাবার কথা মনে পরলে নামাজে বলো, আল্লাহ্ বাবার কাছে তোমার মনের কথা পৌছে দিবে।'

আর মেজাজ খারাপ থাকলে 'পশ্চিম দিকে তো আছাড়ও খাও না, তোমার সমস্যা হবে না কে তো কার হবে?' 
কিন্তু ভেবে দেখেন সে আমার ভাল চায় বলেই এমনটা বলে! এই অত্যাচারের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক ভালোবাসা। যাই হোক, যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালানো খুব সহজ, কিন্তু যুদ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন, কিন্তু যদি কস্ট করে একবার তুমি জিতে যাও, সারা পৃথিবী তোমাকে মনে রাখবে, কিন্তু যদি পালাও, মানুষ ৪০ দিন মনে রাখবে তাও কাপুরুষ হিসাবে! 

তুমি যদি মুসলিম হও, তোমার কোনও জানাযা হবে না, তুমি ভাবতে পারো এটা তোমার পরিবারের জন্য কত অসম্মানের, কতটা কস্টের? অরিত্রী নামের মেয়েটা কে যদি টিসি দেয়া হতো, তাহলে কি এমন হতো?  বাবা-মা একটু বকা দিত! পাশের বাসার আন্টি দুই চারটা কথা বলতো! কিন্তু অরিত্রী যদি অন্য স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ভাল রেজাল্ট করতো , কেউ কোনোদিন এই ঘটনা মনেও রাখতো না! 

এইযে ওর ক্লাস টিচারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে , উনি কি কারো মেয়ে না? কারো মা না? তাদের অসম্মান হচ্ছে না? 
এই যে প্রিন্সিপাল কে খ/ম বর্গিও গালি দিচ্ছে, শাড়ি ধরে টানছে, সে কি কারো মেয়ে না? তার অসম্মান হচ্ছে না? তবে হ্যাঁ, কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এইটা একটা শিক্ষাও বটে! লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়ে যায়! শিক্ষা জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু এইটাই সব না! সবার A+ পাওয়াটা ফরজ কিছু না! 

কিছু হলে বাবা-মা ডেকে এনে অপমান এই কালচার এই উপমহাদেশ ছাড়া আর কোথাও নেই। 

একটা ক্লাস নাইনের বাচ্চা যদি নকল করে (ধরে নিলাম করেছে) সেইটার দ্বায়ভার তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও নিতে হবে! তারা লাস্ট ১০ বছরে কি মোরাল শিক্ষা দিয়েছে? বরং বাবা-মা উলটো ক্লেইম করবে আপনাদের মতো নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমার বাচ্চাকে কি শিখালো যে সে নকলের করার মতো একটা অন্যায় করতে পারলো! আমি যখন কলেজে পড়তাম আমি নিজেও মোবাইল ক্যারি করায় ক্লাস টিচার জিএম স্যার এর কাছে ধরা পরি! চট্রগ্রাম ক্যান্টমেন্ট পাবলিক কলেজ যথেস্ট কড়া থাকায় আমার ৭ দিন পর গার্জিয়ান কল করে, তাদের বুঝিয়ে বলেন যেন আমাকে আর কলেজে ক্যারি করতে না দেয়। 

সেখানে কাউকে ছোট করার চেয়ে জরুরি ছিল আমার জন্য কোনটা ভালো তা নিশ্চিত করা, আমার বাবা মার মতো আমার শিক্ষকরাও যে আমাকে নিয়ে কনসার্ন তা বোঝানো! আর বাবা মায়েরও সন্তানদের পরিবর্তন গুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত, মানসিক যে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রেও শারিরীক সমস্যার মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী! এটা কোন লজ্জ্যার কিংবা লুকানোর কিছু না! এবং শিক্ষা আপনার সন্তানদের ভবিষৎ এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তার মানসিক সুস্থতার চেয়ে বেশি নয়! -কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে