শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪০:২৯

স্ত্রী হত্যার পর শ্যালিকা নিয়ে উধাও

স্ত্রী হত্যার পর শ্যালিকা নিয়ে উধাও

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে: স্ত্রীকে হত্যার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ৫ বছর বয়সী সন্তানের কথা বলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করে ফেলা হয় লাশ। নানা ছলচাতুরী করে মামলাও করতে দেয়া হয়নি। এরপর শ্যালিকাকে অপহরণ করে স্ত্রী হন্তারক তোফাজ্জল। এ নিয়ে মামলা হলে তোফাজ্জলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর গতকাল মৃত্যুর এক মাস ৮দিন পর ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয় গৃহবধূ নাছরিন আক্তারের। তাকে হত্যা করা হয়েছে এই অভিযোগে মামলা হলে বুধবার দুপুরে আদালতের নির্দেশে সদর উপজেলার সাদেকপুর কবরস্থান থেকে নাছরিনের লাশ উত্তোলন করা হয়।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা, এএসপি সদর সার্কেল রেজাউল করিম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ও মামলার বাদী হাজী মো. ইব্রাহিম মিয়া। ৪ঠা ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নাছরিন আক্তারকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলাটি করেন তার পিতা হাজী মো. ইব্রাহিম মিয়া। এতে নাছরিনের স্বামী মো. তোফাজ্জল হক (৩৫) সহ ৭ জনকে আসামি করা হয়।

অন্য আসামিরা হচ্ছে- মজিবুর রহমান, মহরম আলী, ফারুক মিয়া, জামাল মিয়া, সুফিয়া বেগম, নুর ইসলাম। মামলায় অভিযোগ করা হয় পূর্বে দাবিকৃত ৫ লাখ টাকার জন্য ১২ই নভেম্বর রাতে নাছরিনকে মারধর করতে শুরু করে আসামিরা। খবর পেয়ে নাছরিনের পরিবারের সদস্যরা সেখানে গেলে তাদের সামনেই মারধর করা হয় নাছরিনকে। একপর্যায়ে নাছরিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এরপর আসামিরা রাতেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে ইব্রাহিম মিয়া তার মেয়ের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। সকালে নাছরিনের স্বামীর পরিবারের লোকজন এসে নাছরিনের ৫ বছর বয়সী সন্তানের কথা বলে এবং নানা ছলচাতুরী করে লাশ তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দ্রুত দাফন করে ফেলে। এদিকে এ ঘটনার ১৩ দিন পর ২৫শে নভেম্বর নাছরিনের ছোটবোন আশুগঞ্জ রৌশন আর জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মোছাম্মৎ আমরিন আক্তারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তোফাজ্জল হক।

এ ঘটনায়ও ৩০শে নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মো. তোফাজ্জলকে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা করেন আমরিনের মা মোছাম্মৎ শাহেনা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন ঘটনার পর থেকেই তার স্বামীকে (নাছরিন হত্যা মামলার বাদী ইব্রাহিম মিয়া) হত্যা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের অপহরণ করে নেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলো তোফাজ্জল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। হত্যা মামলায় ৪ঠা ডিসেম্বরই নাছরিনের স্বামী তোফাজ্জলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরিবারের সদস্যরা জানান- ২০০৯ সালের ১০ই জানুয়ারি সাদেকপুর ইউনিয়নের আবদুল আউয়ালের ছেলে তোফাজ্জলের সঙ্গে ৩ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী রাজাখা গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার মেয়ে নাছরিনের। বিয়ের পরই বিদেশ যাওয়ার জন্যে ৫ লাখ টাকা দাবি করে তোফাজ্জল। এই টাকা দিলে সে বিদেশ চলে যায়। চলতি বছরে আগস্টে দেশে ফিরে আসে। দেশে স্থায়ী ভাবে বসবাসের এবং ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা এনে দিতে স্ত্রী নাছরিন আক্তারকে চাপ দিতে থাকে। এই টাকার জন্যই ১২ই নভেম্বর রাতে নাছরিনকে মারধর করতে শুরু করে। নাছরিনকে তলপেটে লাথি, শরীরে কিল ঘুষি মেরে এবং কাঠের রোল দিয়ে মাথায় আঘাত করে, গলায় উড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয় বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়।
এমটি নিউজ/ আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে