রবিবার, ০৬ আগস্ট, ২০১৭, ০১:০২:৪৬

চাঁদপুরে দুই দলেই একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী

চাঁদপুরে দুই দলেই একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর থেকে : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও আগাম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত চাঁদপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা।

রমজানে ইফতার পার্টি থেকে শুরু করে ঈদ-পরবর্তী পুনর্মিলনীতেও দেখা গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। এখন আবার ঈদুল আজহাকে ঘিরে তারা শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে পোস্টার ও ব্যানার সাঁটিয়েছেন। সংসদীয় (২৬০, ২৬১, ২৬২, ২৬৩ ও ২৬৫) আসনের সর্বত্রই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী কারা।

পাঁচটি সংসদীয় আসনেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অন্তত ৪০ জন প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। আসনগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।  

চাঁদপুর-১ (কচুয়া) : এ আসনে প্রধান দুই দলেই হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের প্রার্থী হবেন—এটা অনেকটা নিশ্চিত। প্রতিনিয়ত তিনি এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেনও অবশ্য এ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী।

অন্যদিকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে অনেকটাই নিশ্চিত সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলনের। ৩৬টি মামলায় ১৬ মাস কারাভোগ করে বর্তমানে প্রবাসে অবস্থান করছেন। অবশ্য সেখান থেকেই তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. শহিদুল ইসলাম ও জাপা কেন্দ্রীয় সদস্য এমদাদুল হক রুম্মন এলাকায় দীর্ঘদিন বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।

চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ) : এ আসনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হবেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি। এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল আমিন রুহুলও এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন—বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহচর চার বারের সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী মরহুম নূরুল হুদার বড় ছেলে তানভীর হুদা। ইতিমধ্যে তিনি দলীয় হাইকমান্ড থেকে ‘সবুজ-সংকেত’ পেয়ে এলাকায় ব্যাপক নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন।

তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সম্প্রতি ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে তার কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ এলাকায় তার পিতার কবরটা পর্যন্ত জিয়ারত করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা তানভীর হুদা। এ ছাড়াও বিএনপি নেতা জালালউদ্দিন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শুক্কুর পাটওয়ারীও মনোনয়ন প্রত্যাশী।

চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর-হাইমচর) : এ আসনের এমপি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের পাশে রয়েছেন। তবে এ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন। মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীদের পাশে রয়েছেন। এ ছাড়াও বিএনপি থেকে তিনবারের সাবেক এমপি জি এম ফজলুল হকও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারও এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি রাশেদা বেগম হীরা ও সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তফা খান সফরী মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহসিন খান, গণফোরামের একমাত্র প্রার্থী চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম আকবরও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) : এ আসনের বর্তমান এমপি প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সামছুল হক ভূঁইয়া। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি দলের প্রার্থী হবেন—এটা অনেকটাই নিশ্চিত। এলাকায় নিয়মিত নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। দলের ভিতরে-বাইরে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ।

প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি নেতা-কর্মীদের পাশে রয়েছেন। এ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী এবং এম এ হান্নানও মনোনয়ন প্রত্যাশী। অপরদিকে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম।

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহারাস্তী) : এ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম। এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তারও রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা এমপি মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া অধ্যাপক ফজলুল হক ও পরিবার-পরিকল্পনা অধিদফতরের মহা-পরিচালক ডা. কাজী মোস্তফা সরোয়ারও মনোনয়ন প্রত্যাশী।

অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির পক্ষে মামলা-হামলায় জর্জরিত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লায়ন মমিনুল হক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক দুই ছাত্রনেতাও।

একজন হলেন ৮০’র দশকের ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। আরেকজন হলেন ছাত্রদলের বিগত কমিটির সহসভাপতি বিল্লাল হোসেন তারেক। এ ছাড়া বিএনপির সাবেক এমপি এম এ মতিনও মনোনয়ন প্রত্যাশী। জাতীয় পার্টি থেকে সৌদি আরবের রিয়াদ শাখার সভাপতি কামরুজ্জামান কাজল ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশুও মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে