শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭, ০১:৪২:৩০

তিন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিশ্ব : ডেভিড ক্যামেরন

তিন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিশ্ব : ডেভিড ক্যামেরন

ঢাকা : সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে তা শুধু কয়েকজন উগ্র মানুষের বিরুদ্ধে নয়, এ লড়াই উগ্র মতবাদের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। এই উগ্র মতবাদের বিরুদ্ধে আমরা যখন ঐক্যবদ্ধ হতে পারব তখনই বিজয় সম্ভব হবে।

গতকাল ঢাকায় এক সুধী সমাবেশে বক্তৃতাকালে ক্যামেরন এসব মন্তব্য করেন। যুক্তরাজ্যের ফ্র্যাগিলিটি, গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার (আইজিসি)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে এক ঝটিকা সফরে বুধবার রাতে থাইল্যান্ড থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান ক্যামেরন।

গতকাল সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। দিনভর ব্যস্ত কর্মসূচি শেষে তিনি গত সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করেন। গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন ক্যামেরন। পরে তিনি তেজগাঁওয়ে একটি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন। এরপর ঢাকায় ডিএফআইডির অর্থায়নে একটি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে বিকালে আইজিসিতে এক গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেন।

২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডেভিড ক্যামেরন। ‘২০১৭-তে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উগ্র মতবাদ। সম্প্রতি মার্কিন গবেষকদের একটি অংশ বর্তমান সংকটকে সভ্যতার সংকট বলে দাবি করেছে। কিন্তু এটা কোনো সভ্যতার সংকট নয়, এ সংকট ধর্মীয় সংঘাতের। আবার পুরোপুরি ধর্মীয় সংঘাত হিসেবেও দেখা যাবে না কারণ বিশ্বের বেশির ভাগ মুসলিম এই উগ্র মতবাদে বিশ্বাস করে না। আর একে যদি সভ্যতার সংকট বলে ধরে নেওয়া হয় তাহলে বিশ্বের এযাবৎকালে গ্রহণ করা সব নীতিই ভুল হয়ে যাবে।

ক্যামেরন বলেন, আসলে উগ্রবাদীরাই চাইছে এই সংকটকে সভ্যতার সংঘাত হিসেবে দেখাতে। তারা প্রমাণ করতে চাইছে, দুই ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করতে পারে না। তারা তরুণ মুসলিমদের বোঝাতে চাইছে আইএসের মতাদর্শের বাইরে বসবাস করা অসম্ভব। ধীরে ধীরে এই মতবাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর বিরুদ্ধেই বিশ্বের শান্তিকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই ছাড়া এই যুদ্ধে বিশ্বসভ্যতার বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বক্তৃতায় জঙ্গিবাদের বাইরে বিশ্বের অন্য দুই চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঁচুমানের গণতন্ত্রের অভাব এবং দুর্নীতির প্রাদুর্ভাবকে চিহ্নিত করেছেন ডেভিড ক্যামেরন।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ইনাম আলী। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, কূটনীতিক, সাংবাদিক, এনজিও ব্যক্তিত্ব প্রমুখ।

এদিকে সকালে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষাতে ব্রিটিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্রমে বিকশিত হবে। ব্রেক্সিটের কারণে এ সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন হবে না। দুই দেশের মধ্যে চলছে বিকাশমান সম্পর্ক। এ সম্পর্ক বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্গো বিমান নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্যামেরন বলেন, ব্রিটিশ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশে আসছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, পরিকল্পনা ও উদ্যোক্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিরাট অবদান রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আরও শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে এবং এসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারে সরকার গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।

তিনি বলেন, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে আমরা দেশব্যাপী রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছি এবং দক্ষিণাঞ্চলে রেললাইন নির্মাণে ব্রিটিশ কোম্পানিকে নিয়োগ দিয়েছি। রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মিয়ানমারের ৪ লাখ নাগরিককে আশ্রয় দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। মিয়ানমার যদি তাদের নাগরিকদের এখান থেকে ফিরিয়ে নেয় সেটিই হবে সবচেয়ে উত্তম। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এবং ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

২৮ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে