বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ০১:২২:৩১

একই আসনের প্রার্থী তিন দলের তিন সভাপতি

একই আসনের প্রার্থী তিন দলের তিন সভাপতি

নিউজ ডেস্ক : দেশের অন্যান্য স্থানের মতো ঢাকা-১১ আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সংসদীয় ১৮৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার তিন সভাপতির প্রার্থী হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে লড়াই হবে এ তিনজনের মধ্যেই।

রাজধানীর বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা ও খিলগাঁওয়ের একটি অংশ নিয়ে এ আসন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নানা উৎসবকে ঘিরে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে পোস্টার, ব্যানারসহ নানা প্রচারণাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে প্রচারণা। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই দলের সম্ভাব্য একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

সর্বশেষ ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান বর্তমান ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করতে পারলে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদল হতে পারে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে একক প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী।

আওয়ামী লীগ : রাজধানীর অন্যান্য আসনের মতো ঢাকা-১১ আসনেও জয়ের ধারাবাহিকতা চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে কারণে এ আসন থেকে আবারও বর্তমান এমপি এ কে এম রহমত উল্লাহর ওপর ভরসা রাখছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকেই দেওয়া হচ্ছে নৌকা প্রতীক। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন (১১টি থানা নিয়ে গঠিত) দেশের সর্বোচ্চ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০০১ সালের তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী কামরুলের কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে ঢাকা-১০ (রামপুরা, বাড্ডা, ভাটারা) আসন থেকে নৌকা নিয়ে বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।

বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ায় দলকে আরও সুসংগঠিত করছেন। প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা এবং ইউনিটিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। নিজের আসন ছাড়াও অন্যান্য আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের সেভাবে কাজ করতে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই হবেন নৌকার প্রার্থী। তার বিকল্প আপাতত ভাবছেন না স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা।

বিএনপি : ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম। নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে তার ভূমিকায় বিএনপির হাইকমান্ডও খুশি। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এটা অনেকটাই নিশ্চিতও। তবে মামলাসংক্রান্ত কিংবা অন্য কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী শামীম আরা বেগম দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন।

এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মো. আতাউর রহমানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় তিনিও কাইয়ুম সমর্থিত বলে এলাকায় পরিচিত। বিএনপি নেতা কাইয়ুমের বিরুদ্ধে তাভেলা হত্যাসহ অর্ধশত মামলার খড়গ ঝুলছে। তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে সঙ্গে ফোনে আলাপকালে এম এ কাইয়ুম বলেন, ‘জেল-জুলুম মামলা নির্বাচনে কোনো বাধা হবে না। দল যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকেই মনোনয়ন দেবে। তবে দল চাইলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নেতা-কর্মীরাও আমার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। ’

অন্যদিকে ভাটারার ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘এম এ কাইয়ুম আমারও নেতা। তিনি কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে আমি দলীয় প্রার্থী হব। দল আমাকে সুযোগ দিলে আমি এ আসনটি পুনরুদ্ধার করে দেব ইনশাআল্লাহ। ’

জাতীয় পার্টি : ঢাকা-১১ আসনটি নিয়ে খুবই আশাবাদী সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এই আসনে মাঠে রয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী। আশাবাদী হওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, রামপুরা থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত এলাকাটি পাকিস্তান আমলে রাউজক কর্তৃক তৎকালীন ডিআইটির অ্যাকুয়ারভুক্ত ছিল।

এইচ এম এরশাদ ১৯৮৮ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘোষণা দিয়েছিলেন, যে যেখানে বসবাস করছেন সেখানেই থাকবেন। এ ছাড়া এই আসন থেকে জাতীয় পার্টি সব নির্বাচনে অংশ নিয়ে সম্মানজনক ভোট পেয়ে আসছে। ফয়সল চিশতী আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ইতিমধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করেছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি করে চলেছেন। প্রতিটি অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি নতুন করে গোছাচ্ছেন।

এ ছাড়া আগামীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এই আসনটিও চাইতে পারেন। আশাবাদী হওয়ার কারণ ফয়সল চিশতী তিতুমীর কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা ছিলেন। ছাত্রদলের তিতুমীর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। গুলশান থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। জাপা মনে করে, ফয়সল চিশতী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, যা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে এ যোগ্যতা নেই।  বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে