শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০১৭, ০১:১৩:৪৫

হিজড়াদের প্রেম, বিয়ে ও সংসার

হিজড়াদের প্রেম, বিয়ে ও সংসার

রুদ্র মিজান : সাধ-আহ্লাদ সবই আছে। আছে প্রবল ভালোবাসার অনুভূতি। ঘরবাঁধার স্বপ্নও দেখেন তারা। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে তাদের রয়েছে সীমাবদ্ধতা। শারীরিকভাবে মিলিত হলেও সন্তানের মুখ দেখতে পান না তারা। তবু ঘর পাতেন। একসঙ্গে সংসার করেন। কিন্তু তাদের সংসার, ঘরবাঁধা ভিন্ন রকমের। তাদের মধ্যে আছে বৈচিত্র্যতা।

প্রত্যেক হিজড়াই একজন পুরুষ সঙ্গী খোঁজেন। পুরুষ সঙ্গীরা তাদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এই বন্ধুকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে রাখতে চান তারা। হিজড়াদের কাছে এই বন্ধু ‘পারিক’ নামে পরিচিত। বেশ কয়েকজন হিজড়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের প্রেম, বিয়ে ও সংসার সম্পর্কে। তাদের জীবন হচ্ছে এক গোপন ট্র্যাজেডি।

৯০ দশকের কথা। পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডের তাড়িখানায় নিয়মিত নাচ করতেন রুপালি। তাড়িখানার আগতদের কাছে সুন্দরী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। নানাজনের কাছ থেকে প্রায়ই প্রেমের প্রস্তাব পান তিনি। তাকে বিয়ে করতে চান, সংসার করতে চান।

অনেকের মতো পুরান ঢাকায় ওই সময়ে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত আরমান নিয়মিত তাড়ি পান করতে যেতেন সেখানে। তাড়িখানায় রুপালির গান-নৃত্য মুগ্ধ করে তাকে। প্রেমে পড়ে যান আরমান। আর আরমানকেও ভালোবেসে পেলেন রুপালি। রুপালিও স্বপ্ন দেখেন আরমানকে নিয়ে। কিন্তু নিজের দুর্বলতার কথা ভেবে সাহস পান না। শেষ পর্যন্ত আরমান প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, ‘আমি তো হিজড়া’।

আরমান প্রথমে বিশ্বাস করেন না। পরবর্তীতে হিজড়া জেনেই রুপালির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। ছুটিয়ে প্রেম করেন তারা। তাদের মধ্যে একটা চুক্তি হয়। এই চুক্তিকে ‘বিয়ে’ বলেন হিজড়ারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুপালি জানান, কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একটি চুক্তি করা হয়। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, দিনের বেলা তিনি নিজের স্ত্রী, সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। তবে রাতে রুপালির সঙ্গে থাকতে হবে। বিনিময়ে আরমানের সব ভরণ পোষণ রুপালি বহন করবেন।

রুপালি জানান, আরমানকে তিনি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। তাকে কোনো কষ্ট করতে দেন না। তাকে নিয়ে দেশ-বিদেশে বেড়াতে গেছেন অনেকবার। তবে আরমান অন্য কোনো নারীর কাছে যাবেন তা সহ্য হয় না রুপালির। তাই ক্রমান্বয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে এনেছেন তাকে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই দিনে-রাতে রুপালির সঙ্গেই বসবাস করেন আরমান। তবে স্ত্রী-সন্তানকে টাকা পাঠান। সব  টাকা দেন রুপালি। আরমনাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বসবাস করছেন রুপালি।

আরেক পারিকের নাম রফিক। তিন বছর আগে রফিকের সঙ্গে ময়না হিজড়ার পরিচয়। ধোলাইপারে চাঁদা তুলতে গেলে ময়নার সঙ্গে পরিচয় রফিকের। ময়না হিজড়া দেখতে সুন্দরী। এতেই আকৃষ্ট হন রফিক। নানা গল্প করেন। একসঙ্গে রিকশায় ঘুরে বেড়ান। এভাবেই ভালো বন্ধুতা গড়ে ওঠে। একসময় ময়না হিজড়ার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যান। ময়নার শনিরআখড়ার বাসায় রাতযাপন করতেন রফিক। এরই মধ্যে রফিককে পারিক করে রাখার প্রস্তাব দেন ময়না। সারা জীবনের সঙ্গী করতে চান। রফিক অসম্মতি জানান।

এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কলহ হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যান রফিক। ফোন নম্বর পরিবর্তন করেন। অন্যদিকে হন্যে হয়ে রফিককে খুঁজতে থাকেন ময়না। এ বিষয়ে রফিকের চন্দনকোটা এলাকার এক ঘনিষ্ঠজন জানান, সম্প্রতি রফিককে খুঁজতে তার বাসায় যান ময়না। সেখানে গিয়ে রফিককে না পেয়ে তাকে হুমকি দিয়েছেন। ময়না বলেছেন, রফিককে না এনে দিলে সকল হিজড়া মিলে তাকে অপদস্থ করবে।

ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, রফিকের সঙ্গে কি সম্পর্ক জানতে চাইলে ময়না প্রথমে বলেন, ‘রফিক আমার বন্ধু।’ পরে বলেন, ‘রফিক আমার স্বামী।’ কাবিননামা আছে কিনা জানতে চাইলে ময়না বলেন, ‘আমাদের কোনো কাবিননামা লাগে না।’ তবে নোটারি করার বিষয়ে তিনি জানান, সময়ের অভাবে রফিকের সঙ্গে চুক্তিটা করা হয়নি। সূত্রমতে, ময়না হিজড়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রফিক।

বনানীর কড়াইল বস্তির হিজড়া মিষ্টি। ১০-১২ বছর বয়সেই নরসিংদীর বাড়ি ও মা-বাবাকে ছেড়ে ঢাকায় আসেন তিনি। থাকেন গুরুমার সঙ্গে। মিষ্টি জানান, সন্ধ্যার পর সেজেগুজে বের হন। হাতিরঝিল, বিজয় সরণিসহ বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেন। (প্রচার অযোগ্য শব্দ) হিসেবে কাজ করেন। রাত শেষে টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে তা তুলে দেন গুরুমার হাতে। বিনিময়ে গুরুমা তার থাকা, খাওয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। গুরুমা তার অভিভাবক। তবে এর বাইরে একজন সঙ্গী বা পারিক খোঁজেন মিষ্টি।

তিনি জানান, প্রত্যেক হিজড়াই নিজেকে নারী ভাবতে পছন্দ করেন। এজন্য একজন পুরুষ সঙ্গী খোঁজেন। সে রকম পারিক এখনো পাননি। তবে তার বান্ধবী জোছনার একজন পারিক আছেন। মিষ্টি বলেন, ওই পারিক অনেক ভালো। শিক্ষিত। প্রায় রাতেই জোছনাকে নিয়ে বাসায় রাতযাপন করেন। একজন পারিকের সঙ্গে একাধিক হিজড়ার সম্পর্ক হতে পারে কিনা জানতে চাইলে মিষ্টি জানান, তা হতে পারে না। যদি কখনো এরকম হয় তাহলে কঠিন বিচার করেন গুরুমা। এ অপরাধে ওই হিজড়ার জরিমানা হবে। অন্যদিকে পারিককে ভর্ৎসনা করা হবে বলে জানান তিনি। এমজমিন
জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে