শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১১:২৪:১১

বঙ্গবন্ধুর পকেট মারতে গিয়ে ধরা পড়েছিলাম : চিত্রনায়ক ফারুক

বঙ্গবন্ধুর পকেট মারতে গিয়ে ধরা পড়েছিলাম : চিত্রনায়ক ফারুক

আকবর হোসেন পাঠান দুলু (ফারুক) : বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয়ের আগের একটু গল্প বলতে হবে। পোগজ স্কুলে পড়ার সময়ই আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। ছোটবেলা থেকেই আমার বক্তৃতা শোনার একটা আগ্রহ ছিল। বঙ্গবন্ধু আউটার স্টেডিয়ামে বক্তৃতা দিতেন, আমি প্রায়ই গিয়ে সেখানে বক্তৃতা শুনতাম।

এখন তো গুলিস্তানে লাখ লাখ মানুষ, তখন এত মানুষ কল্পনাও করা যেত না। বরং প্রায়ই দেখা যেত শেয়াল হাঁটা চলা করছে। গুলিস্তান যে সিনেমা হল, ওইখানে বন্ধুরা দল বেঁধে যেতাম। সেখানে প্রায়ই দেখতাম ভাসানী সাহেব বক্তৃতা দেন। ওনার বক্তৃতা ভীষণ মজা লাগত। একদিন ভাসানী সাহেবের বক্তৃতা শুনতে দাঁড়ালাম, উনি বলছিলেন ‘এই যে দেখেন তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া নিজে একটা মেশিন বসাইয়া নিয়াছে।

নিজে কাগজ কিনিয়া, সেইখান থেইকা নিজের ইচ্ছা মতো খবর ছাপাইয়া পয়সা কামাই করিতেছে। কি লিখিতেছে? রাজনীতিবিদদের গোমর ফাঁস করিয়া দিতেছে। আমার বড় ভয় করিতেছে, কবে না আমার কোমরে হাত দেয়’ এই যে ঢঙ ঢাঙ করে বক্তৃতা দেওয়া, এটা কিন্তু ভাসানী সাহেব ছাড়া অন্য কোনো বক্তার কাছে আমরা আর পাইনি।

এই রকম বক্তৃতা হলে প্রায়ই শুনতে দাঁড়িয়ে যেতাম, একদিন শুনি দরাজ কণ্ঠে একজন বক্তৃতা দিচ্ছেন ‘এ দেশের মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে, এটা হতে পারে না।’ গলা শুনেই চমকে গেলাম। মনে হলো আরে ক্ষুধার্ত তো আমিও থাকি, কে রে এটা ভাই? গিয়ে দেখি লম্বা ছিপছিপা, মোচ আছে, চশমা পরা এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম- নাম কী এই ব্যাটার? সে উত্তর দিল- মুজিব ভাই।

তখন থেকে এই আস্তে আস্তে যাওয়া শুরু করলাম- মুজিব ভাইয়ের মিটিং হলেই বেশি যেতাম। মাঝে মাঝে স্টেজে উঠেও মাতব্বরী শুরু হলো, চেয়ারটা সরানো, চেয়ার ঠিক ঠাক করা এইগুলা করে মুজিব ভাইয়ের নজরে পড়ার চেষ্টা চালাতাম। বঙ্গবন্ধু সাহসী মানুষ খুব পছন্দ করতেন। কোনো কিছু হলেই আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম- বলেন নেতা কী করতে হবে। এভাবেই মুজিব ভাইয়ের চোখেও পড়ে যাই।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি মিটিং-এ আমি ১৫-২০ জন ছেলে নিয়ে গিয়ে স্লোগান দেওয়াতাম। দুপুরবেলা ওদের পরোটা-মাংস খাওয়াতাম। ছেলেগুলোকে নিয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে টাকা চাইতাম। বলতাম দ্যান। উনি দুই-চার-পাঁচ টাকা সব সময় দিতেন। একবার বঙ্গবন্ধুর পকেট মারতে গিয়ে ধরা খেলাম। বসে আছেন, ওনার পাঞ্জাবির পকেটে দেখি টাকা দেখা যায়।

আস্তে করে দুই আঙ্গুল যেই দিলাম উনি খপ করে আমার হাত ধরে ফেললেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- ‘তোরে না দিলাম টাকা?’ আমি বললাম, দিসেন তো, কিন্তু টাকা দেখলে তো আর ভালো লাগে না! এই ঘটনা আমার প্রায়ই মনে পড়ে, সে কারণে একটা ফিল্মে আমি এই ধরনের একটা সিকোয়েন্সও রেখেছিলাম।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র নায়ক
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে