শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:২৮:৩০

দাদীর সাদা শাড়ী ও কোন রকম মেকআপ ছাড়াই বিয়ে!

দাদীর সাদা শাড়ী ও কোন রকম মেকআপ ছাড়াই বিয়ে!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: নববধূ বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভারী মেকআপ, অনেক গহনা ও দামী শাড়িতে মোড়ানো একটি মুখ। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে হেঁটে সেই ধারণার পরিবর্তন করেছেন পেশায় ডাক্তার ও ‘আরোগ্য’ নামক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট তাসনিম জারা। দাদীর সাদা শাড়ী পরে কোন রকম মেকআপ ও গহনা ছাড়াই বিয়ে করেন তিনি।

এই সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের বাধা ও সমালোচনা কাটিয়ে নিজের মনোবলে অটুট ছিলেন ‘জারা’। তার এই সিদ্ধান্তে পাশে থেকেছেন বর খালেদ সাইফুল্লাহ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক খালেদ ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশীল এসোসিয়েশন’র নির্বাহী পরিচালক।

৯ আগষ্ট ফেসবুকের নিজের বিয়ের ছবি পোস্ট করে ‘জারা’ তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘‘বিয়ের দিন আমি আমার দাদীর কটনের সাদা শাড়ী পরার আর কোন রকম মেকআপ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল কেন। কারণটা হল, আমাদের সমাজে নববধূ মানেই অনেক টন মেকআপ, ভারি পোশাক ও গহনা। যা অনেকের বা তার পরিবারের সামর্থ্যে থাকে না। অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও বিয়ের কনের এটি করতে হয়।

অমি এই পর্যন্ত যতগুলো বিয়েতে অংশ নিয়েছি বেশিরভাগ সময় মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, বউকে সুন্দর লাগছে কি না, সে কি পরিমাণ সোনা পরেছে, তার পোশাকের দাম কত। এই সব প্রশ্ন শুনতে শুনতে নববধূ অনেক চাপ অনুভব করে। সে অনেক টাকা, সময় ও শক্তি খরচ করে সেরা মেকআপ নিয়ে নিজেকে সুন্দর দেখাতে চায়। সবশেষে তাকে আর তার মত দেখা যায় না। কারণ আমাদের সমাজ মনে করে নববধূর গায়ের রং তাদের নিজের বিয়ের জন্য যথেষ্ঠ নয়।

সে তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও সঙ্গীদের থেকে শুনে গহনা ছাড়া বউয়ের সাজ অসম্পূর্ণ। এবং তার ওপর তার নিজের পরিবারের সক্ষমতার ওপর সে কি পরিমাণ সোনা পড়বে তা নির্ভর করে। সে বাধ্য। কারণ সমাজ তাকে বলবে, তুমি একটি মেয়ে, কেন তোমার বিয়েতে তুমি সোনা পর নি?

নববধূর দিকে ভাল করে তাকালে দেখা যায়, সে অনেক দামী কাপড় পরে আছে , যা পরে সে ঠিকমত হাঁটতে পারছে না এবং সে এই পোশাক আর কোন বিয়েতেও পরতে পারবে না। কিন্তু এই সমাজ তাকে এই পোশাক ছাড়া অন্য কোন উপায়ে গ্রহণ করবে না।

তার মানে এই নয় যে আমি বিয়েতে সাজসজ্জার বিরোধী। কোন মেয়ে যদি মেকআপ, গহনা ও দামী পোশাকে সজ্জিত হতে চায় তাহলে সেটি অবশ্যই করবে। কিন্তু সমস্যাটা হল তার বিয়ের দিনের সাজসজ্জাকে কেন্দ্র করে সে তার অনেক সময় নষ্ট করে। সমাজ যখন তাকে বিয়ের দিন পুতুলের মত দেখতে চায় তার মানে হলে সে নিজে দেখতে যা, তা তার বিয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। বিয়ের দিন আত্মবিশ্বাসী থাকার জন্য একটি মেয়ের রং ফর্সাকারী ক্রিম, সোনার গহনা কিংবা দামি শাড়ীর কোন প্রয়োজন থাকা উচিত নয়। তাই আমি আমার বিয়েতে আমার দাদীর শাড়ি বেছে নিয়েছি, কোন মেকআপ নিই কি কিংবা কোন গহনাও পরি নি। মানুষ এটিকে সাধারণ বলেছে, কিন্তু আমার কাছে এটিই অনেক বিশেষ কিছু, কারণ আমি জানি এটি আমার কাছে কি।

যদিও এই সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমার পরিবারের অনেক সদস্য বলেছে তারা আমার সঙ্গে কোন ছবি তুলবে না কারণ আমাকে দেখতে নববধূর মত ( তারা ভাবে) লাগছে না। আমার পরিবারের কিছু সদস্য আমাকে সমর্থন করেছে। বিশেষ করে খালিদ। সে শুধু আমাকে সমর্থনই করে নি বরং গৎবাধাঁ নিয়মের বাহিরে গিয়ে গর্ববোধ করার জন্য আমাকে অভিযোগ ও করেছে।’’
সূত্র: তাসনিম জারার ফেসবুক থেকে নেয়া।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে